ঢাকায় ৯৩ কিলোমিটার বেগে কালবৈশাখী, নিহত ৪
ঝিনাইদহের চোখঃ
ইফতারির পর হঠাৎ ৯৩ কিলোমিটার বেগে রাজধানীর ওপর দিয়ে বয়ে গেলো কালবৈশাখী ঝড়। এতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে তাঁবু ছিঁড়ে খুঁটির আঘাতে একজন নিহত এবং ২০ থেকে ২২ জন আহত হন। বাড্ডায় দেয়াল ধসে মারা গেছেন অন্তত তিনজন। ভেঙে পড়েছে গাছের ডাল। জৈষ্ঠ্য মাসে এমন আরও কালবৈশাখী মাঝে মধ্যে হানা দেবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, উত্তর বাড্ডায় প্রাণ সেন্টারের পাশে একটি দেয়াল ধসে তিনজন আহত হয়। এর মধ্যে ২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ও একজনকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে তিনজনই নিহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
বায়তুল মোকাররমে হতাহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকরা একজনকে মৃত ঘোষণা করেন বলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন। নিহতের নাম শফিকুল ইসলাম (৪৭)। তার বাবার নাম মৃত জনাব আলী। গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট আদিদমারি। বর্তমানে পোস্তগোলা। তিনি টায়ার তৈয়ারির কারখানায় কাজ করতেন।
আহতরা হলেন— পুলিশের সিটিএসবির এসআই শরিফুল (৩৬), বিপ্লব (৩৪), মনির (৩৫), তারেক (৩৫), জানে আলম (২৫), শাকিল (২৩), মাসুদ (৩২), সজিব (২৮), আউয়াল (৩০), আলাল (৩৫), আরিফুল (২৫), আমান উল্লাহ (২৫) ও রফিউজামান (২৭)। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এসআই বাচ্চু বলেন, ইফতারের পরে নামাজ পড়ার জন্য মুসল্লিরা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় ঝড়ের কবলে পড়ে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাসেল সিকদার জানান, সন্ধ্যার তীব্র কালবৈশাখী ঝড়ে বায়তুল মোকারম মসজিদ প্রাঙ্গণের দক্ষিণ অংশে স্থাপিত অস্থায়ী তাঁবু ভেঙে পড়ে হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে। এছাড়া ঝড়ে কয়েক জায়গায় গাছ উপড়ে গেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (মসজিদ ও মার্কেট বিভাগ) মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘শুক্রবার দিন মসজিদে প্রচুর লোক হয়, এর মধ্যে রমজান মাস, তাই মসজিদের দক্ষিণ গেটে মুসল্লিদের নামাজের জন্য একটি প্যান্ডেল করা হয়। আজ মাগরিবের নামাজের সময় প্রবল ঝড়ে প্যান্ডেলটি ভেঙে পড়ে যায়। তখন সেখানে ১০০ থেকে ১৫০ জনের মতো মুসল্লি ছিল। এর পর আমরা ১৪-১৫ জন মুসল্লিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ২-৩ জনের অবস্থা গুরুতর দেখেছি।’
সন্ধ্যায় ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী ও বগুড়ায়ও ঝড় হয়েছে। ওই দুই জায়গায় ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, টানা তাপপ্রবাহের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ের তীব্রতাও ছিল বেশি।
আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা ৭টা ২ মিনিটে ঢাকায় ৬৫ কিলোমিটার বেগে কালবৈশাখী বয়ে যায়। তবে সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ৯৩ কিলোমিটার, এটাই ছিল ঢাকায় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ।
এর আগে সকালে রংপুরে ৬৭ কিলোমিটার বেগে কালবৈশাখী বয়ে যায়। বৃষ্টিও ঝরে সেখানে।
শাহীনুল ইসলাম আরো জানান, গত সোমবার থেকে চলমান তাপপ্রবাহ আরও দুই-একদিন অব্যাহত থাকবে। এ সময় ঝড়-বৃষ্টির দাপটও থাকবে। এখন কালবৈশাখীর সময়। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পরে তাপপ্রবাহ কমে আসবে। তবে কলবৈশাখী হবে মাঝে মাঝে।
টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজশাহী, পাবনা অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে চলছে বলে জানান তিনি।
এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।