ঝিনাইদহে ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ চাষে সাফল্য
সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ
কৃষক আব্দুর রহমান। এলাকায় বেশি পরিচিত একজন সবজি চাষি হিসেবে। গ্রামের আব্দুল মজিদ ও হামেদ আলী ছাড়াও বেশ কয়েকজনের কাছে থেকে প্রায় ২০ বিঘা জমি বছরে ১২ হাজার টাকার চুক্তিতে ইজারা নিয়ে সবজির চাষ করেছেন। এরমধ্যে ব্লাকবেবি জাতের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ রয়েছে ৯০ শতক জমিতে। আধুনিক পদ্ধতিতে মাচায় চাষ করা তরমুজ ধরে ঝুলে আছে। দাম ঠিক থাকলে লাভ আসবে ভাবনার চেযে বেশি। এমন আশা কৃষক রহমান মোল্যার। তিনি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বেথুলী গ্রামের মৃত আব্দুল ওহাব মোল্যার ছেলে।
সরেজমিনে উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী গ্রামের মাঠে গেলে দুর থেকে নজরে পড়ে কৃষক আব্দুর রহমানের তরমুজ ক্ষেতের (টাল) মাচা। দুর থেকে মনে হচ্ছে মাঠের মাঝখানে লাউয়ের টাল। কিন্ত ক্ষেতের কাছে গেলে দেখা যায় লম্বা কালো রঙের ছোট বড় তরমুজগুলো বাঁশ দিয়ে তৈরি টালের নিচে ঝুলছে। একটু বড়গুলোতে নেট পরিয়ে দেয়া হয়েছে যেন তরমুজের ভারে গাছের ডগাগুলো মাটিতে না পড়ে যায়। ক্ষেতের ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায় কৃষক আব্দুর রহমান তরমুজগুলোতে নেট পরিয়ে বেধে দিচ্ছেন।
কৃষক রহমান জানান, নিজের মাত্র আড়াই বিঘা জমি ছাড়াও গ্রামের অন্যদের নিকট থেকে জমি বর্গা নিয়ে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে , করলা, বেগুন, ঢেড়স, কাঁচকলা, পুইশাক, তরমুজসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেছেন। তিনি জানান, প্রায় ২৫ বছর ধরে মাঠে নানা ধরনের সবজির চাষ করে আসছেন। এ চাষে তিনি জীবনে সফলতাও পেয়েছেন। কিন্ত গত ২ বছর সবজির দাম কমে যাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লোকসান গুণতে হয়েছে। কিন্ত এবছর ক্ষেতের তরমুজে লোকসান পুশিয়ে উঠে কিছু লাভেরও স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
কৃষক আব্দুর রহমান জানান, ব্লাক বেবি জাতের ৯০ শতক তরমুজের ক্ষেতে এ পর্যন্ত তার ৭৫ থেকে ৭৮ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন। তার আশা দাম ভালো থাকলে যাবতীয় খরচ বাদে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা লাভ আসবে। তার এই চাষে সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
এপ্রিলের প্রথমে তিনি পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার গান্না গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম বীজ ১৯ হাজার টাকা দিয়ে কিনে বর্গা নেয়া ৯০ শতক জমিতে রোপণ করেছেন। রোপণের ২ মাসের আগেই ফল আসতে শুরু করে। যা আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই বিক্রি করতে পারবেন। এই জাতের তরমুজ সাধারনত কৃষকেরা মাটিতে খড় বা বিচালী বিছিয়ে চাষ করে থাকেন। কিন্তু তিনি ক্ষতিকর পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে টাল বা মাচায় চাষ করেছেন। এতে অন্যদের তুলনায় তিনি অনেক বেশি ফলন পাবেন এমন ইঙ্গিত পাচ্ছেন।
গোলাম রহমান বলেন, চারা রোপনের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ ধরা শুরু হয়। ৬৫-৭০ দিনের মধ্যেই এটি পরিপক্ক হয়। একটি তরমুজের ৪ থেকে ৫ কেজি ওজন হয়। তরমুজের ভারে ডগা মাটিতে নুয়ে পড়া থেকে রক্ষা করতে ভার ঠেকাতে তিনি বিশেষ নেট তরমুজের মধ্যে পরিয়ে নেটের এক পাশ টালের বাঁশের সঙ্গে বেধে দিচ্ছেন। এতে তরমুজগুলো টালে ঝুলে দ্রুত বড় হচ্ছে। তার আশা দাম ভালো থাকলে ৯০ শতক জমির তরমুজ থেকেই কমপক্ষে ৩ লক্ষ টাকা আসবে। যা গত ২ বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল করিম জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি-২) আওতায় গোলাম রহমান গ্রীস্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। তাকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নেট, বাঁশসহ বিভিন্ন উপকরণ কিনে দেয়া ছাড়াও টেকনিক্যাল সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একাধিকবার কৃষক আব্দুর রহমানের তরমুজসহ সবজি ক্ষেতে গিয়েছেন। তার ক্ষেত দেখে অনুমান করা হচ্ছে ব্যাপক লাভ হবে।