ঝিনাইদহে ৫ পৌরসভায় ৪২ মাসের বেতন বাকি
ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের ছয় পৌরসভার মধ্যে পাঁচ পৌরসভার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৪ থেকে ৪২ মাস পর্যন্ত বেতনভাতা বাকি রয়েছে। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে এসব পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব পৌরসভার অবসরপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে, যারা দির্ঘদিন চাকরি থেকে অবসরে গেলেও তাদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না পৌরকর্তৃপক্ষ।
তবে ঈদ সামনে রেখে বোনাস দেয়া হচ্ছে এসব পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। কোনো কোনো পৌরসভায় এক মাসের বেতনভাতা দেয়া হচ্ছে। তবে সেটা চলতি মাসের না, দীর্ঘদিনের বকেয়া মাসের বেতন।
সবথেকে বেশি বেতনভাতা বকেয়া রয়েছে কোটচাদপুর ও মহেশপুরের পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আর সর্বনিম্ন ৪ মাস বেতন বকেয়া রয়েছে কালীগঞ্জ পৌরসভার কর্মীদের। এর মধ্যে কোটচাঁদপুর পৌরসভাটি ১৮৮৩ সালে এবং মহেশপুর পৌরসভাটি ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত।
কোটচাঁদপুর পৌরসভায় নিয়মিত ৩২ ও অনিয়মিত ৩০ জন কর্মী রয়েছে। যাদের প্রতি মাসে বেতন ভাতা বাবদ খরচ হয় প্রায় ১৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুলাই মাসের বেতন ভাতা পরিশোধ হয়েছে। এরপর থেকে আর কোনো বেতন দেয়া হয়নি। কোনো কোনো কর্মচারীর ৪২ মাস পর্যন্ত বেতন ভাতা বাকি রয়েছে। পৌরসভার হিসাব বিভাগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে ঈদ সমানে শুধু বোনাস দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো পৌরসভায় বোনাসের সাথে এক মাসের বেতন দেয়া হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বকেয়া মাসের বেতন দিচ্ছে। কোটচাঁদপুর পৌরসভার একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমার শহরের একটি মুদি দোকানে সাড়ে তিন লাখ টাকা বাকি পড়েছে। এখন আর দোকানদার বাকি দিতে চাচ্ছে না। পাওনাদার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। ফলে পরিবার নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে জেলার পাঁচ পৌরসভার এরকম অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
দেশের সব থেকে পুরাতন পৌরসভা মহেশপুর। ভারতীয় সীমান্তের এ পৌরসভাটি ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত। এ পৌরসভায় নিয়মিত ও অনিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ৬৭ জন। এ পৌরসভার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বকেয়া রয়েছে ১৮ মাস। যাদের প্রতি মাসে বেতন ভাতা বাবদ প্রয়োজন হয় ১৫ লাখ টাকা।
জেলার শৈলকুপা পৌরসভার বেতনভাতা বাকি ১৩ মাস। এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ৮৩ জন। যাদের প্রতি মাসে বেতন ভাতা বাবদ প্রয়োজন হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা।
হরিণাকুন্ডু পৌরসভায় নিয়মিত ও অনিয়মতি ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনভাতা বাকি রয়েছে ৫ মাস। এ পৌরসভার প্রতি মাসে বেতনভাতা বাবদ দরকার হয় প্রায় ৮ লাখ টাকা।
অন্যদিকে কালীগঞ্জ পৌরসভায় কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ১০৫ জন। যাদের প্রতি মাসে বেতনভাতা মিটাতে প্রয়োজন পড়ে প্রায় ১৮ লাখ টাকা। কিন্তু গত ৪ মাস হলো কোনো বেতনভাতা দেয়া হয়নি।
দীর্ঘদিন বেতনভাতা বকেয়া এমন প্রশ্নে কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, বিগত মেয়রের সময়ে এসব টাকা বকেয়া পড়ে। তবে পৌরসভায় ঠিকমতো রাজস্ব আদায় না হওয়া ও কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
ঝিনাইদহ জেলা পৌরসার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুস্তাক আহমেদ জানান, জেলার ছয়টি পৌরসভার মধ্যে কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, ঝিনাইদহ সদর ও শৈলকুপা পৌরসভা ‘প্রথম শ্রেণির। আর হরিণাকুন্ডু গ শ্রেণির পৌরসভা। ঝিনাইদহ জেলায় ছয়টি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার কর্মীদের কোনো বেতন বকেয়া নেয়। এ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ১২৬ জন।