#ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ৫০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি সারুটিয়া দোহারো স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা। শিক্ষক নিয়োগ, ভূয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত, শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির নিজ নামীয় সম্পদ জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে এমপিওভূক্তির খবরে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির যোগসাজসী নিয়োগ বাণিজ্য চরমে উঠেছে। প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী ও সভাপতির ছেলের স্ত্রীকে শিক্ষক বানিয়ে গোপনে কাগজ বানিয়ে উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের গাংকুলা গ্রামে সারুটিয়া দোহারো স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসাটি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আশি থেকে নব্বই দশকের শেষ পর্যন্ত এখানে দ্বীনিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ব্যবহৃত হতো। ২০০০ সাল পরবর্তিকালে বেশকিছুদিন ফোরকানিয়া লেখাপড়া চলমান ছিল। বর্তমানে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসাটির করুনদশা। গত বুধবার সকাল ১২টার পর মাদরাসাচিত্র ছিল ভিন্নরকম, খেলারমাঠে স্থানীয়দের গৃহস্থালী কাজকর্ম, অন্যদিকে গোচারণ আর মাদরাসার বারান্দা ছিল ঘোড়ার দখলে। ক্লাসে কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, বøাকবোর্ড এমনকি পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এখানে শিক্ষাকার্যক্রম চলমান আছে।
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সবমিলে ৭-৮ জন শিক্ষার্থী ও ১-২ জন শিক্ষক মাদরাসায় আসে ১২টার পরপরই ছুটি দিয়ে চলে যায়। সাইনবোর্ড আর সম্পদবেষ্টিত এ প্রতিষ্ঠানে কোন পতাকা তোলা হয়না, জাতীয় দিবস কিংবা সরকারি কোন কর্মসূচি পালন করা হয়না। যা হয়, তা রীতিমত ভয়ঙ্কর শুধু উপবৃত্তির অর্থ হাতাতে নামে বেনামে বিভিন্ন স্কুল শিক্ষার্থীকে ভর্তি দেখিয়ে তাদের উপবৃত্তি লোপাটের ব্যবস্থা। শাহবাড়িয়া, দোহারো, সারুটিয়া, খুলুমবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্কুলে অন্তত ৬১ জন শিক্ষার্থী ভগ্নদশা এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী হিসেবে উপবৃত্তি পায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের নামের বিপরিতে ওই সকল স্কুলেও অনেক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি রয়েছে। পার্শ্ববর্তি বানুগঞ্জ বাজারে মাদরাসার নিজ নামীয় প্রায় ১ বিঘা জমি প্রভাবশালীরা মৌখিকভাবে ভাগবাটোয়ারা করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছে। যার বিপরিতে সপ্তাহে ৫টাকা বাজার আদায় করে একটি মসজিদে দান করা হয় বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, মাদরাসার শিক্ষক ও সম্পদ সবই সভাপতির নিকট বহুদিন ধরেই জিম্মি। সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম আলী প্রচন্ড প্রভাবশালী হওয়ায় বছরের পর বছর নিয়মনীতিহীন কাগুজে সভাপতি হয়ে প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে নানারকম ধরাকে স্বরাজ্ঞান করে চলেছেন। ৬১ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় লেখাপড়ার বালাই নাই। কতজন শিক্ষার্থী আছে তার সঠিক সংখ্যা বলতে পারেনা স্বয়ং প্রধান শিক্ষক নিজেও। বেশিরভাগ শিক্ষক নিয়োগের নিয়োগবোর্ড নাই, থাকলেও প্রচুর ভূয়া কাগজপত্র। মাসের পর মাস প্রতিষ্ঠানে উকি দেয়না অনেক শিক্ষক। চলছে শুধু এমপিওতে টিকে থাকার গোপন প্রতিযোগিতা।
স্থানীয়রা জানায়, আমিরুল ও তাসলিমা নামে দুই শিক্ষক এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী নামমাত্র মাদরাসায় আসলেও তাদের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর হয়না, খাতার অভাবে। প্রধান শিক্ষক আর সভাপতির বাড়িতে থাকা খাতাপত্রেই আটকে থাকা প্রতিষ্ঠানের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চান এলাকাবাসী। বহুবছর শিক্ষকতা করলেও এমপিওর জন্য গোপনে তথ্যছক থেকে বঞ্চিত শিক্ষকদের দাবি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ উদ্ধার হোক, তদন্ত হোক সার্বিক বিষয়ে। জরাজীর্ণ এ প্রতিষ্ঠানে বহু সম্পদ থাকলেও শিক্ষাকার্যক্রমে এর প্রভাব পড়েনি বলেই ৫০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সকল কাজপত্র এককভাবে সভাপতি দেখভাল করেন। মাঝে মাঝে নাকি তার নিজের চাকুরিই থাকেনা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন জানান, এবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদরাসাটিতে শুধুমাত্র সমাপনী পরিক্ষার বিষয়টি তারা দেখভাল করে থাকেন বাকিটা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। কিন্তু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহম্মেদ বলেন, তারা শুধু উপবৃত্তি সংক্রান্ত বিষয়টি দেখেন বাকিটা অন্যরা। তবে কি অভিভাবকহীন দোলাচলেই দুলছে ৫০ বছর পুরনো এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ?