চোখের জ্যোতি কমে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার
#ঝিনাইদহের চোখঃ
আমাদের শরীরের অত্যন্ত মূল্যবান ও স্পর্শকাতর একটি অঙ্গ। ফলে চোখের যত্ন নেয়া আমাদের জন্য আবশ্যক। কখনও নিজেদের অজান্তে আবার কখনও বা কিছু অভ্যাসের করণে চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে ফেলছি আমরাই।
চিকিৎসকদের মতে, এ সকল অভ্যাস বদলাতে পারলে জ্যোতি কমার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষ ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট নিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান। যা কিনা চোখের জ্যোতি কমার অন্যতম কারন।
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ব্যবহার এ সব আজকাল জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে। ফলে এ সব অভ্যাস পুরোপুরি বাদ দেয়া যায় না। বিশেষ করে রাতে আলো নিভিয়ে চোখের কাছে মোবাইল রেখে তাতে সিনেমা দেখা বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট, কাড়ে নিচ্ছে চোখের দৃষ্টি।
ধূমপানে আসক্তি, কেবল হার্ট নয়, ধোঁয়া থাবা বসাচ্ছে আপনার চোখেও। ক্যাটারাক্ট তো বটেই, বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশানকেও (রেটিনার অসুখ) ত্বরান্বিত করে। দৃষ্টিশক্তি কম হওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে এই ধূমপানকেই চিহ্নিত করছেন চিকিৎসকরা।
চোখের অসুখ থাকলে তো সময় অনুযায়ী চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে। অসুখ না থাকলেও বছরে দু’বার চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া খুবই প্রয়োজন। এই কাজে অবহেলা করবেন না।
চোখের জ্যোতি বাড়ার উপায়
১.ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খেতে হবে বেশি করে যথা: মিষ্টি পেঁপে, কাঁঠাল, কুমড়া, কালো কচু শাক, হেলেঞ্চা শাক, পুঁই শাক, লাউ শাক, ধনিয়া পাতা, পাট শাক, গাজর, মিষ্টি আলু, ডিম, কলিজা, মলাঢেলা ছোট্ট মাছ।
২. সব সময় চোখকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে, চোখকে ধূলিকণা থেকে বাঁচাতে হবে,
৩. বেশী করে কোরআন শরীফপাঠ করুন আল্লাহর রহমতে দৃষ্টিশক্তি কোনো দিন ও কমবে না,
৪. মোবাইল, কম্পিউটার, টিভির ক্ষতিকর তেজক্রিয় রশ্মি থেকে চোখকে দূরে রাখুন,
৫. চোখে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার এর পরামর্শ নিন।
পুনরায় আগের মত দৃষ্টিশক্তি ফেরত না পেলেও কিছু ব্যায়াম ও খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন করে দৃষ্টি শক্তি আবার বাড়িতে দিতে পারেন। চোখের বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম আছে যেগুলো আপনি নিয়মতি করতে পারেন। চোখের জন্য এরোবিক ব্যায়াম খুব কার্যকরি। তাছাড়া সাঁতার ও টেনিস খেলা চোখের জ্যোতি বাড়িয়ে দিতে পারে।
যে সব খাদ্য দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে:-
১) এলাচ ৪ গ্রাম মাত্রায় সকালে খেলে এক মাস থেকে ৪০ দিনের মধ্যে দুর্বল দৃষ্টিশক্তি দূর হয়। চোখ ঠাণ্ডা হয়, চোখের জ্যোতি বাড়ে।
২) রাতের বেলায় একটা পাত্রে দু’চামচ ত্রিফলা চূর্ণ ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে ঐ জল দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন অথবা ঐ জল নিয়ে চোখের ওপর ছিটে দিন। এতেও চোখের জ্যোতি বাড়ে। এমনকি বৃদ্ধাবস্থাতেও চোখ নির্মল ও সতেজ থাকবে।
৩) পুষ্টিবিদদের মতে চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, বিটা ক্যারোটিন ও লিউটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড প্রধানত আসে মাছ থেকে। এছাড়া ফ্লাক্স সিডস, ওয়ালনাটস, পেশতা ও বাঁধাকপিতে পাওয়া যায় এধরনের চর্বি। আর বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায় গাজর এবং সবুজ শাক-সবজি, ফলমূলে। লিউটিন পাওয়া যায় ডিমের সাদা অংশে। চোখের জ্যোতি বাড়াতে এই লিউটিন সহায়ক।
৪) ডিমের সাদা অংশ ছাড়াও সবুজ শাক-সবজিতেও থাকে প্রচুর লিউটিন। চোখের জ্যোতির জন্য ক্ষতিকর খাবারেরও একটি তালিকা দিয়েছেন পুষ্টিবিদগণ। যেসব খাদ্য কম খাওয়া উচিত অথবা পরিহার করা উচিত তা হচ্ছে সুগার, প্রক্রিয়াজাত ময়দা, ট্রান্সফ্যাট (বনস্পতি) ও ধূমপান।
৫) যদি দেখা যায় চোখের দৃষ্টি ক্রমশঃ স্তিমিত হয়ে আসছে তাহলে কমলা লেবুর রসে বাটা গোলমরিচ ও সৌন্ধব লবণ মিশিয়ে সকাল-বিকাল সেবন করতে হবে। অন্ততঃ তিনমাস এভাবে নিয়মিত সেবন করতে হবে।
৬) এক কাপ গাজরের রসে পৌনে এক কাপ পালং বা চৌলাইয়ের শাকের রস মিশিয়ে সকালে সূর্যোদয়ের সময়ে এবং বিকালে সূর্যাস্তের সময়ে নিয়মিত সেবন করতে পারলে সেবনকারীর চশমার দরকার হবে না কোনো দিন।
৭) শোয়ার সময় সপ্তাহে তিন দিন তুলোর মোটা পলতে দুধে ভিজিয়ে চোখে রেখে তার ওপর পটি বেঁধে দিলে চোখ ভালো থাকে। আবার কখনো কখনো ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করা শীতল ও স্বচ্ছ দুধ দু’তিন ফোঁটা চোখে দিলে চোখ শীতল থাকে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি কখনো ক্ষীণ হয় না।
৮) বাদামের ৮-১০ টি দানা (অর্থাৎ শাঁস) রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ভালো করে চিবিয়ে খেয়ে খানিকটা দুধ খেয়ে নিতে হবে। এতে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ার সঙ্গে বলবৃদ্ধিও হবে।
৯) ধনে পিষে নিয়ে তার রস বের করে দু’ফোঁটা করে প্রতিদিন দু’চোখে দিলে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি হয়।