নির্মাণের ১৩ বছরেও চালু হয়নি ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতাল
#ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতাল নির্মাণের পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হলো না। ঝিনাইদহ-ঢাকা মহাসড়কের পাশে তিন একর জমির ওপর এ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয় ২০০৬ সালে। লোকবল নিয়োগ না করায় হাসপাতালটি চালু করা যাচ্ছে না। পুরো হাসপাতাল কমপ্লেক্স বিরান পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড রোগীতে ঠাসা।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৫ শয্যাবিশিষ্ট ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। জমি ক্রয়, হাসপাতাল ভবন ও ডাক্তার, কর্মচারিদের বাসভবনসহ অবকাঠামো নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। অবকাঠামো নির্মাণ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। ২০০৬ সালের ৩০ এপ্রিল হাসপাতাল কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এখন হাসপাতাল ভবন, ডাক্তার-কর্মচারিদের কোয়ার্টারসহ পুরো কমপ্লেক্স এলাকা অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। নির্মাণের পর আসবাবপত্র ও চিকিত্সার যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করা হয়। এসবও পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।
হাসপাতালটি চালু দেখিয়ে ২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হয়। সে সময় সদর হাসপাতাল থেকে বেড, আসবাবপত্র ও ডাক্তার এনে প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতাল চালু দেখানো হয়েছিল। উদ্বোধনের পর আবার সবকিছু সদর হাসপাতালে ফেরত নেওয়া হয়। জঙ্গলে হাসপাতাল কমপ্লেক্স ঢেকে গেছে। আবাসিক ভবনগুলোর অনেক কিছুই চুরি হয়ে গেছে। দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। একেবারে একটি ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
দুজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারকে ডেপুটেশনে দিয়ে নামকা ওয়াস্তে আউটডোর চালু করা হলেও কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হয় না। তাদের কেউই শিশুবিশেষজ্ঞ নন। দিনে দু-পাঁচজন শিশুকে মায়েরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাদের হাতে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেওয়া হয়। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার সহিদুর রহমান জানান, তারা একটি রুমে বসেন। দিনে ৮-১০ জন মা তাদের শিশুদের নিয়ে আসেন। তাদের কথা শুনে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে সদর হাসপাতাল থেকে কিছু ওরালস্যালাইন দেওয়া হয়। এ স্যালাইন শিশু হাসপাতালের রোগীদের দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের কিছু আসবাবপত্র পার্শ্ববর্তী মেডিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে ( মাটস ) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দামি এক্সরে মেশিন সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহে হাসপাতালটি চালু হলে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, মাগুরা ও যশোর জেলার শিশুরা উন্নত চিকিত্সা সেবা পেতো। এদিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে আটটি বেড আছে। সেখানে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন শিশু রোগী ভর্তি থাকে। সামাল দিতে হিমশিম খান ডাক্তার, নার্সরা।
এ হাসপাতালের জন্য পাঁচজন ডাক্তার, ২১ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, ছয়জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির পদ সৃষ্টি করা হয়। আর আউট সোর্সিং-এর মধ্যে ১২ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারির পদ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরেও লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এর ফলে হাসপাতালটি চালু করা হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা জানান, তিনি ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন থাকার সময় হাসপাতালটি চালুর জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। ঢাকায় গিয়ে হাসপাতালটি চালুর জন্য তিনি পুনরায় চেষ্টা করবেন বলে জানান।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, শিশু হাসপাতাল কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন। হাসপাতালটি যাতে দ্রুত চালু করা যায় তার ব্যবস্থা নিবেন।