মেরুদণ্ড ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
#ঝিনাইদহের চোখঃ
মেরুদণ্ড বা শিরদাঁড়া আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। মেরুদণ্ডে গুরুতর সমস্যা হলে মানুষ পঙ্গু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। মেরুদণ্ডে কোনও রকম সমস্যা থাকলে মূলত ওঠা, বসা, দাঁড়ানো সব ক্ষেত্রেই সমস্যা হতে পারে।
বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন ব্যাস্ততার চাপে প্রায়শই আমরা শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ডের নানা সমস্যায় বা ব্যথায় ভুগে থাকি। এই সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। সারা দিনের কাজকর্মের মধ্যে আমাদের বেশ কিছু ভুল বা খারাপ অভ্যাসের কারণে শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের অজান্তেই ওই অভ্যাসগুলি আমাদের মেরুদণ্ডের ক্ষতি করে চলেছে।
মেরুদণ্ড বা শিরদাঁড়ায় ব্যথার কারণ ও প্রতিকার জেনে নেয়া যাক:
মেরুদণ্ড ব্যাথার কারণ
১) আপনি কি সারা দিন এক জায়গায় বসে কাজ করেন? দীর্ঘদিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এ ভাবে কাজ করতে হলে শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ডের সমস্যা হতেই পারে।
২) যদি দীর্ঘদিন, নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না হয়, সে ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে।
৩) খুব ভারি ব্যাগ (যেমন, ল্যাপটপ ব্যাগ, বইয়ের ব্যাগ বা অন্যান্ত ভারি জিনিসপত্র) নিয়মিত পিঠে নিলে কাঁধে আর পিঠে অতিরিক্ত চাপ পড়ে মেরুদণ্ডে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪) পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে যেমন শিরদাঁড়ার সমস্যা হতে পারে, তেমনই অতিরিক্ত বিশ্রাম, আলস্যের ফলেও মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে।
৫) ঘুমানোর সময় অনেকেই অদ্ভুত ভঙ্গিতে শুয়ে থাকেন। অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে পিঠ, কোমর বেঁকিয়ে শোওয়ার অভ্যাস মেরুদণ্ডের ক্ষতি করে।
৬) নিয়মিত হাই হিল পরার অভ্যাস বা শক্ত জুতো পরার অভ্যাস মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করে। এর থেকে পরবর্তীকালে মেরুদণ্ডে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।
৭) দীর্ঘক্ষণ ঝুঁকে বসে মোবাইলে চ্যাট বা ল্যাপটপে ব্যাস্ত থাকলে মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। পরবর্তীকালে এর ফলে মেরুদণ্ডে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।
৮) দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি বা বাইকে ড্রাইভ করলে মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে।
৯) আচমকা খুব ভারী কোনও জিনিস তোলার চেষ্টায় টান পড়ে মেরুদণ্ডে চোট লাগতে পারে।
১০) খুব শক্ত, অসমান বিছানায় দীর্ঘদিন ধরে শুলে মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে।
মেরুদণ্ড ব্যাথার প্রতিকার
১. শিরদাঁড়ার সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সঠিক হাঁটা-চলা ও বসার ভঙ্গিমা মেনে চলতে হবে।
২. ধূমপানের প্রভাবে শিরদাঁড়ায় সঙ্গে যুক্ত কোষ ও স্নায়ুগুলি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। তাই এই নেশা থেকে দূরে থাকাই ভাল।
৩. ভারী জিনিস সামনের দিকে ঝুঁকে কোনও কিছু তোলার অভ্যাস অত্যন্ত ক্ষতিকর। এইধরনের কাজ এড়িয়ে চলাই ভাল।
৪. বাথরুমে কোমট ব্যবহার করুন।
৫. অনেকক্ষণ বসে একটানা কাজ করা বা পড়াশোনা করলে টেবিল, চেয়ারে বসে করা উচিত। একটানা না বসে থেকে এক-দু’ ঘণ্টা অন্তর অন্তর হাঁটা চলা করা উচিত।
৬. শিরদাঁড়ার অপারেশনের পর প্রাথমিক নিয়ম মানার পাশাপাশি, ফিজিওথেরাপি করতে হবে। এছাড়া অপারেশনের পর শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে সোজাভাবে না উঠে পাশ ফিরে উঠতে হবে।
৭.নিয়মিত ভিটামিন ডি শরীরের প্রবেশ জরুরি। পিঠে রোদ লাগালে শিরদাঁড়া ভাল থাকে।
৮. স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ক্যালশিয়াম রাখা দরকার।