#সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ
এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে ঝিনাইদহের ‘ব্লাড ব্যাংক অব কালীগঞ্জ’। এই সংগঠনের স্লোগান ‘মানবতার শ্রেষ্ঠ দান, স্বেচ্ছায় করি রক্ত দান, হাসবে রোগী বাঁচবে প্রাণ’।
এখান থেকে বিনামূল্যে ব্লাড পেয়ে ডেঙ্গু রোগী, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত, থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এই সেবার কাজে তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে তাদের কাজের পরিধি আরো বেড়ে যাচ্ছে।
সংগঠনটির সভাপতি হলেন কৃষিবিদ ফজলে রাব্বি স্বপ্ন। তিনি জানান, অসুস্থ মানুষের দুঃসময়ে জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন হয় রক্তের। পয়সা থাকলেও মেলানো যায় না নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত। সব সময় সব স্থানে সব গ্রুপের রক্ত পাওয়া যায় না। আবার রক্ত বিক্রির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে সব গ্রুপের নিরাপদ রক্ত পাওয়াটাও কঠিন।
ফজলে রাব্বি আরো জানান, প্রতিষ্ঠার দেড় বছরে ৪৯২ জন রক্তের ডোনার পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত বিনামূল্যে ৪৯৩ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ অধ্যায়নরত আশিক এলাহী জানান, যারা এ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আবার অনেকে চাকরিতেও আছেন। এ কারণেই তাদের বাইরে থাকতে হয়। আবার লেখাপড়া শেষ করে অনেকে বাড়িতে চলে এসেছেন অথবা আশপাশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন ফলে তাদের এলাকায় থাকতে হয়। তারাই মূলত কঠোর পরিশ্রম করে এ সংগঠনের কাজ বেশি করে যাচ্ছেন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আজম মুন্সি জানান, দেড় বছর আগে ঈদের ছুটিতে সবাই বাড়ি এসেছি। তখন ছয়জন সিদ্ধান্ত নেই ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে। এরপর শুরু হয় কাজ। প্রথম দিকে আশপাশের কারো রক্তের প্রয়োজন হলে মানুষকে নানান ভাবে উৎসাহিত করেছি। রক্ত নিয়ে নিজেদের উদ্যোগে ভুক্তভোগীদের সাহায্য করেছি।
এরপর কাজের পরিধি বাড়ানোর জন্য রক্তের ডোনার গ্রুপ তৈরি করেছি ফেসবুকে। নাম ‘ব্লাড ব্যাংক অব কালীগঞ্জ’। সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ডোনার। ফেসবুকে রক্তের ডোনাররা নাম ঠিকানাসহ মোবাইল নম্বর লিখে পোস্ট দেয়া শুরু করেন। এখন সবার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহে আছে। কারো প্রয়োজন হলে বিনামূল্যে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত দেয়া হয়। না পারলে অল্প সময়ের মধ্যেই জানিয়ে দেয়া হয়।
তন্নি দেবনাথ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তার সাতমাস বয়সেই থ্যালাসেমিয়া রোগ হয়েছে। এরপর থেকে মানুষের দেয়া রক্তে সে বেঁচে আছে।
তার মা কালীগঞ্জ শহরের কলেজ পাড়ার পূর্ণিমা অধিকারী জানান, স্বামী একজন চায়ের দোকানদার। অভাবের সংসার। এরপর রক্ত কিনে মেয়ের শরীরে দেয়ার কোনো সামর্থ নেই। ফলে শহরের ছেলেগুলো যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে সে জন্য তাদের ধন্যবাদ দিতে হয়।
উপজেলা নরেন্দ্রপুর গ্রামের জামসেদ রানা জানান, তার বোন শামিমা ইয়াসমিন থ্যালোসামিয়া রোগে আক্রান্ত। অনেক আগে থেকেই মানুষের রক্তদানে বেঁচে আছে। বর্তমানে কালীগঞ্জের কয়েকজন ছেলে বোনের রক্তের ব্যবস্থা করছেন।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, ‘ব্লাড ব্যাংক অব কালীগঞ্জ’ রক্ত দিয়ে মানুষের পাশে থাকছে। আমার পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।