#ঝিনাইদহের চোখঃ
বাংলাদেশ থেকে ১৪টি খাতে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪০০ বিশেষায়িত দক্ষ কর্মী নিবে জাপান। সেখানে একজন কর্মীর মাসিক বেতন হবে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা। তবে এ জন্য প্রত্যেক কর্মীকে দক্ষতার পাশাপাশি জানতে হবে জাপানি ভাষা।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুব কম সময়ে দেশে জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ নিয়ে যে কেউ জাপানে যাওয়ার সুযোগ নিতে পারেন।
মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, জাপানে ভাষা শিক্ষা ও দক্ষতা ছাড়া কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই। বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করলে বেশি পরিমাণে দক্ষ কর্মী পাঠানো যাবে। কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) অধীনে ২৬টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার) ৪ মাস মেয়াদি জাপানি ভাষা শিক্ষার কোর্স চালু করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বেসরকারি পর্যায়ে কারিগরি ও ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
কেন্দ্রগুলো হলো:
বাংলাদেশ কোরিয়া টিটিসি (মিরপুর), শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা টিটিসি (মিরপুর), বাংলাদেশ কোরিয়া টিটিসি (চট্টগ্রাম), খুলনা টিটিসি, রাজশাহী টিটিসি, রংপুর টিটিসি, পাবনা টিটিসি, রাঙামাটি টিটিসি, বান্দরবান টিটিসি, নোয়াখালী টিটিসি, ময়মনসিংহ টিটিসি, নীলফামারী টিটিসি, যশোর টিটিসি, দিনাজপুর টিটিসি, মাদারিপুর টিটিসি, নরসিংদী টিটিসি, মাগুরা টিটিসি, মৌলভীবাজার টিটিসি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ টিটিসি, কুষ্টিয়া টিটিসি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া টিটিসি, জয়পুরহাট টিটিসি, গাইবান্ধা টিটিসি, ঝিনাইদহ টিটিসি, প্রবাসী কল্যাণ ভবন (ঢাকা), জামালপুর টিটিসি ও নেত্রকোনা টিটিসি ।
এছাড়া, মিরপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা টিটিসি ও পাবনা টিটিসিতে ৪ মাস মেয়াদি কেয়ার গিভার কোর্স চালু আছে।
কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাব অনুযায়ী, গত বছর মাত্র ১৬৩ জন টেকনিক্যাল ইন্টার্ন জাপানে পাঠাতে পেরেছে বাংলাদেশ। চলতি বছর ৪০০ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও জুলাই পর্যন্ত গেছে মাত্র ১১৯ জন। আরও প্রায় এক হাজার কর্মীর ভাষা প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন জেলার ২৭টি কেন্দ্রে ৪০ জন করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিএমইটি। চার মাস মেয়াদি জাপানি ভাষা শেখার এসব প্রশিক্ষণের পর পরীক্ষায় বসেন কর্মীরা। উত্তীর্ণ হলে আইএম জাপানের ব্যবস্থাপনায় আরও চার মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষানবিস হিসেবে তাদের জাপানে নিয়ে যাওয়া হয়। জাপান সরকারের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী তারাও নতুন এই ভিসা সিস্টেমে আবেদন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে বিএমইটির উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ইলিয়াস হোসেন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, সব টিটিসিতে একসঙ্গে কোর্স হয় না। বিভিন্ন সময় চালু করায় একটু ব্যবধান আছে। যার যেখানে সুবিধা হয় সেই এলাকার টিটিসিতে যোগাযোগ করলে অধ্যক্ষের মাধ্যমে জানা যাবে কবে কোর্স শুরু হবে। চার মাসের জন্য ভর্তি বাবদ ১ হাজার টাকা দিতে হবে। আমাদের এখানে ভর্তি হলে সুবিধা হলো প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী আমাদের ডেটাবেজে চলে আসতে পারেন। পরবর্তী সময়ে আমাদের যেসব সুযোগ সুবিধা আছে, সেগুলাও তারা পাবেন।
১৪টি খাতে যত ভিসা দেবে জাপান:
নার্সিং কেয়ারে ৬০ হাজার, রেস্টুরেন্ট খাতে ৫৩ হাজার, কনস্ট্রাকশন খাতে ৪০ হাজার, বিল্ডিং ক্লিনিং খাতে ৩৭ হাজার, কৃষি খাতে ৩৬ হাজার ৫০০, খাবার ও পানীয় শিল্পে ৩৪ হাজার, সেবা খাতে ২২ হাজার, ম্যাটারিয়ালস প্রেসসিং খাতে ২১ হাজার ৫০০, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারি ৭ হাজার, ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি ৪ হাজার ৭০০, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ১৩ হাজার, মৎস্য শিল্পে ৯ হাজার, অটোমোবাইল মেনটেইনেন্স শিল্পে ২১ হাজার ৫০০, এয়ারপোর্ট গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং অ্যান্ড এয়ারক্রাফট মেনটেইনেন্স (এভিয়েশন) খাতে ২ হাজার ২০০ মিলিয়ে ৫ বছরের মধ্যে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪০০ বাংলাদেশি কর্মীকে ভিসা দেবে জাপান সরকার।
দু’টি ক্যাটাগরিতে যারা যাবেন:
প্রথম ক্যাটাগরিতে জাপানি ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা থাকলে পরিবার ছাড়া জাপানে পাঁচ বছর পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ পাবেন। আর দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে যাদের জাপানি ভাষা ও নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা প্রথম ক্যাটাগরির কর্মী থেকে বেশি থাকে, তারা পরিবারসহ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করার সুযোগ পাবেন।
ভিসা ক্যাটাগরি-১
জাপান সরকারের স্পেসিফায়েড স্কিল ভিসা ক্যাটেগরি-১ অনুযায়ী ১৪টি খাতের কর্মীরা ৫ বছরের জন্য ভিসা পাবেন। আবেদনকারীকে এই ক্যাটেগরির ভিসার জন্য জাপানি ভাষায় পরীক্ষা এবং দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হবে। এই ভিসার আওতায় কর্মীরা তাদের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারবে না। এই ক্যাটেগরির ভিসা সীমিত সময়ের জন্য নবায়ন করা যাবে কিন্তু দ্বিতীয় ক্যাটেগরির ভিসায় পরিবর্তন করার জন্য সময় বাড়ানো হবে না।
জাপানের ইমিগ্রেশন বিভাগ বলছে, প্রথম বছরে এই ক্যাটেগরিতে ৪৭ হাজার ৫৫০টি ভিসা দেওয়া হবে। বাকিগুলো আগামী ৫ বছরব্যাপী দেওয়া হবে। এছাড়া, এই ক্যাটেগরিতে শুধু নার্সিং কেয়ার খাতেই ৬০ হাজার ভিসা দেওয়া হবে।
ভিসা ক্যাটাগরি-২
দ্বিতীয় ক্যাটাগরির এই ভিসায় আবেদনের জন্য কর্মীর ক্যাটাগরি-১ ভিসা থাকতে হবে। এই ভিসার আবেদন নেওয়া শুরু হবে ২০২১ সাল থেকে। যারা তাদের কাজের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন, তারা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে, শুধু কনস্ট্রাকশন ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পের কর্মীরা এই সুযোগ পাবেন। এই ভিসার আওতায় কর্মীরা তাদের পরিবারের সদস্যদের জাপানে নিয়ে যেতে পারবেন। এমনকী টানা ১০ বছর সেখানে থাকার পর জাপানে স্থায়ী বসবাসের অনুমতিও পাবেন।
এ ব্যাপারে বায়রা’র মহাসচিব শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান সাংবাদিকদের বলেন, জাপানে যারা যাবে তারা হলো স্পেশালাইজড স্কিলড ওয়ার্কার। তারা যে ১৪টি সেক্টরে লোক নেবে, সেখানে আমাদের কর্মীদের সেভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলে তারা যেতে পারবেন। জাপানের ট্রেনিং ও মানের বিষয়ে কোনও আপস নেই। জাপানের মার্কেট কোনও সহজ বিষয় না। সুতরাং যেসব এজেন্সি এখানে কাজ করবে, তাদের পর্যাপ্ত সুবিধাসম্পন্ন হতে হবে।
মন্ত্রণালয় থেকে নীতিমালা করে দেওয়া হয়েছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় যাদের অনুমোদন দেবে, তারাই শুধু জাপানে কর্মী পাঠাতে পারবে। ইতোমধ্যে অনেকে আবেদন করেছে। এর মধ্যে ১১টি কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আরও ৩০-৩৫টি বিএমইটি প্রাইমারি ইনস্পেকশন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। যেসব কোম্পানি পাঠাবে তাদের আবার অফিস থাকতে হবে সেদেশে।তারা আবার কাগজপত্র বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিতে পাঠিয়ে ভেরিফায়েড করে মন্ত্রণালয়কে জানায়।