জানা-অজানা

কৃষকের ছেলে থেকে যেভাবে শান্তিতে নোবেল

ঝিনাইদহের চোখঃ

চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছেন ইথিওপিয়ার সংস্কারপন্থী প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। তিনি এই পুরস্কার জিতেছেন প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধের অবসান এব দেশের মধ্যে জাতিগত সংঘাত সমাধানে বিরাট ভূমিকার পালনের স্বীকৃতি হিসাবে।

অথচ তিনি সে দেশের কোনো প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান নন, সামান্য এক কৃষক পিতার ঘরে তার জন্ম। কিন্তু বিশ্বের মানুষকে শান্তির পথ দেখিয়ে আজ তিনি পৃথিবী জুড়ে সমাদৃত।

যদিও আবি আহমেদ ক্ষমতায় এসেছেন এই সেদিন। গত বছরের এপ্রিলে তিনি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ছয় মাসের মাথায় গত বছরের জুলাইয়ে ইরিত্রিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন। এই চুক্তির জন্য তিনি বিশ্ব জুড়ে হয়েছেন প্রশংসিত।

তিনি ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার ইথিওপিয়া যুদ্ধ চলছিলো গত দু দশক ধরে (১৯৯৮ থেকে ২০১৮)। প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের ওই যুদ্ধ-সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ হাজারের বেশি মানুষ। আবি আহমেদ ক্ষমতায় আসার পরপরই সেই অচলাবস্থার নিরসন করেন।

১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট ইথিওপিয়ার কাফা প্রদেশের বেশাহাসা নামক ছোট্ট এক শহরে জন্মগ্রহণ করেন আবি আহমেদের। তার বাবা আহমেদ আলি হলেন দেশটির মুসলিম ধর্মাবলম্বী অরোমো জাতিগোষ্ঠীর। আর মা টেজেতা ওলডে একজন খিস্টান।

তার কৃষক বাবার স্ত্রী ছিলেন চারজন। মোট ১৩ ভাইবোনের মধ্যে আবি আহমেদ হলেন সবার ছোট। তার মায়ের যে ছয় সন্তান ছিল তাদের মধ্যেও সর্বকনিষ্ঠ তিনি। তাইতো পরিবারে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়েছে তাকে। একসময় ঘরে থাকার জায়গা না পেয়ে বারান্দায় ঘুমিয়েছেন।

আবি আহমেদে রাজনীতিতে আসেন ২০১০ সালে। এর আগে তিনি আফ্রিকার আরেক দেশ রুয়ান্ডায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের দূত হিসেবে কাজ করেন। রাজনীতিতে এসেই মানুষের কল্যাণের কথা বলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। যার ফলে ইথিওপিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ২০১৬ সালে। এরপর সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে ইথিপিওয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন গতবছর।

ক্ষমতায় এসেই তিনি বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের কেবল কারাগার থেকে মুক্ত করে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তাদের ওপর চালানো রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও নৃশংসতার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। এছাড়া তার পূর্বসূরি যাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে দেশ ছাড়া করেছিল, সেই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের তিনি দেশে স্বাগত জানিয়েছেন।

২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাসীন জোটের নেতা হেইলেমারিয়াম হঠাৎ জোটের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন। হেইলেমারিয়ামের পদ ছাড়ার পরই তার উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতা পান অরোমো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৪২ বছর বয়সী আবি।

গরিব কৃষকের সন্তান থেকে দেশের সর্বোচ্চ পদে পৌঁছে যাওয়া আবি আহমেদ আসলেই এক বিস্ময় ব্যক্তিত্ব। তিনি বর্তমান আফ্রিকার দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির সংস্কারের নেপথ্য নায়কে পরিণত হয়েছেন। ৪৩ বছর বয়সী এই আফ্রিকান নেতা নিজ সমাজ ব্যবস্থাকে একটা বড় পরিবর্তনের দিকে নিয়ে গেছেন, যা তাকে বিশ্ব জুড়ে পরিচিতি এনে দিয়েছে। স্বীকৃতি হিসাবে লাভ করেছেন বিশ্বের সম্মানজনক পুরস্কার নোবেল শান্তি পুরস্কার।

ওয়েবসাইট ও টেলিভিশন চ্যানেলও অবরোধমুক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি একটি নতুন ইথিওপিয়া উপহার দেবেন। সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় সমতা আনবেন।

অঅসলে আফ্রিকায় তার মতো নেতা খুব বেশি দেখা যায়নি। মহাদেশটির সবচেয়ে কমবয়সী নেতা হলেও কাজের মাধ্যমে আফিকার গন্ডি ছাড়িয়ে নিজেকে পরিচিত করেছেন একজন বিশ্বজনীন নেতা হিসেবে। যুদ্ধ আর ক্রমবর্ধমান হারে জাতিগত সংঘাত বাড়তে থাকা একটা দেশকে নতুনের দিশা দেখিয়েছেন তিনি।

তাই তো নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি এ বছর পুরস্কারের জন্য আবি আহমেদের নাম ঘোষণা করে বলেছে, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা, বিশেষ করে প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা সীমান্ত সংঘাত নিরসনে তার যে ভূমিকা মূলত সেটাকেই পুরস্কৃত করা হলো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button