তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই এসেছেন
ঝিনাইদহের চোখ ডেস্ক:
তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রশংসিত মহামানব হিসেবে। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হিসেবে। পবিত্র কোরআনের ধারক ও বাহক হিসেবে। সুলতানে মদিনা হিসেবে। দুনিয়া আখেরাতের বাদশা হিসেবে।
এ রকম কোনো ব্যক্তিত্বের জীবন রূপরেখা বর্ণনা করা কোনো স্বাধারণ মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়, তা তিনি এ বিষয়ে যতই বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ হন না কেন। কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয় এ মহান ব্যক্তির পূর্ণত্বের পরিমাপ করা।
যিনি আল্লাহতায়ালার নুরে আলোকিত হয়ে অসামান্য কিতাব আল কোরআনের অবিচল ছাঁচে চরিত্রকে গড়েছেন। কবি বলেছেন, ‘বাহ্যত মনে হয় কোরআনের পাঠক, প্রকৃতপক্ষে তিনি নিজেই কোরআন।’
তিনি অসংখ্য মানুষকে হিদায়াতের কিস্তিতে আরোহণ করিয়েছেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে হিদায়াতের ওই কিস্তি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ তরঙ্গের মুখে পড়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কিস্তি কালের সাগরে ভাসমান। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পতাকা পতপত করে উড়ছে। আজো মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান ও মর্যাদা সুরক্ষিত এবং তার হিদায়াত সমানভাবে বহমান।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কোরআন। কোটি কোটি মানুষ এ কোরআন অধ্যয়ন করে মণি-মুক্তময় জ্ঞান আহরণ করছে। তবে যুগে যুগে ইসলামের শত্রুরা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সূর্যোদীপ্ত চেহারাকে ধুলো-মলীন করে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করেছে। ইসলাম যাতে বিকশিত হতে না পারে। তারপরও অপার রহস্যময় এ পৃথিবীতে এমন কোনো জ্ঞানী-গুণী নেই, যার কানে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহ্বান পৌঁছেনি।
যুগে যুগে নবী রাসূলরা এ পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন একটি উদ্দেশ্য নিয়ে। শান্তির দিকে মানুষকে আহ্বান জানানো। সত্যের আহ্বান জানাতে গিয়ে এশিয়া-ইউরোপ-আফ্রিকা প্রভৃতি মহাদেশে দাওয়াতি কাজ ছড়িয়ে দিয়েছেন।
এ সম্পর্কে বিশ্ব বিখ্যাত লেখক এইচও আর্মস্ট্রং তার বই খড়ৎফ ড়ভ অৎধনরধ তে লিখেন, ‘পৃথিবী থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন, অজানা, অপরিচিত, অস্বাস্থ্যকর ও মরুময় এ আরব ভূমি।
এ ভূমির কঠোরতা আর নির্দয়তার মতো এর মানুষগুলোও ছিল অত্যন্ত বর্বর আর নিষ্ঠুর। তারা ছিল দরিদ্র, আর দুঃখ কষ্টে জর্জরিত। শতধাবিভক্ত, ব্যভিচারে আসক্ত ও বর্বরতায় লিপ্ত এক জাতি। কিন্তু হঠাৎ সেখানে এক মহান মানুষ জন্ম নিলেন। যিনি সব আরবকে ঐক্যবদ্ধ করলেন।
বর্বর মানুষের হৃদয় বিশ্বাসে ভরিয়ে দিলেন। এভাবে তার ক্ষমতা দ্রুত বেড়ে গেল। দশটি বছর তিনি আরব শাসন করলেন। তার অনুসারীরা ইউফ্রেটিস নদী পাড়ি দিয়ে পারস্যের সীমানা ছাড়িয়ে গেল।
উত্তরে তারা সিরিয়া পার হয়ে এশিয়া মাইনরে পৌঁছে রোম সাম্রাজ্যের অজেয় কনস্টান্টিনোপলের প্রাচীরে আঘাত করে। পশ্চিমে সাহারা মরুভূমি পাড়ি দিয়ে আফ্রিকা হয়ে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত পৌঁছে গেল। সেখান থেকে স্পেনের সীমা ছাড়িয়ে ফ্রান্সে কম্পন তুলল। এভাবেই ইসলাম পৃথিবীর দিগদিগন্তে ছড়িয়ে পড়ল। আরব মরুভূমির বালুকাময় প্রান্তর থেকে ছড়াল আত্মবিশ্বাস আর অনুপ্রেরণার চালিকাশক্তি।’
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক সময় জন্ম নিলেন, যখন সমগ্র পৃথিবী অন্ধকারে ডুবেছিল। তিনি কোরআনের নুরে রাঙালেন জগৎ। তিনি বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহ পাকের অনন্ত অসীম রহমত ও নিয়ামতের জীবন্ত প্রতীক হয়ে থাকবেন চিরদিন।
এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ফরমান, ‘তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি øেহশীল, দয়াময়।’