ঝিনাইদহের চোখঃ
কৃষকরা অল্প ব্যায়ে ফসলের ক্ষেতে পানি পাবেন, চাষ করে লাভবান হবেন।
এই লক্ষ্যে এনজিওদের দিয়ে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে ঝিনাইদহের বিভিন্ন মাঠে সোলার পাম্প চালিত ডিপটিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বছর যেতে না যেতেই সেই পাম্পগুলো নষ্ট হতে শুরু করেছে। এ বছর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার হরদেবপুর গ্রামের মাঠে স্থাপিত ৪ টি পাম্প নষ্ট থাকায় শতাধিক কৃষকের প্রায় ৫ শত বিঘা জমিতে ধানের চাষ করতে পারেনি। বিঘার পর বিঘা জমি পড়ে আছে।
অবশ্য কৃষকরা বলছেন, তিনটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে এই পাম্পগুলো স্থাপন করা হয়। ইনপ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপপমেন্ট লিমিটেড (ইডকল), এনার্জিপ্যাক ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড ও এইড ফাউন্ডেশন এই পাম্পগুলো স্থাপন করেন। কিন্তু পাম্পগুলো একবছর ভালোভাবে চলার পর নষ্ট হয়ে গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলার হরদেবপুর গ্রামের ৫ টি পাম্প নষ্ট হয়ে যায়। যার মধ্যে একটি ভালো করা হলেও বাকিগুলো আজো নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে।
হরদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা উদয় শংকর বিশ^াস জানান, ২০১৫ সালে পূর্বে তারা হরদেবপুর গ্রামের মাঠে গড়ার বিলে নানা ফসলের চাষ করতেন। কৃষকরা তেমন লাভবান না হলেও ক্ষতির মধ্যে পড়েনি। এরপর ওই বছরের জানুয়ারি মাসে তাদের মাঠে সোলার পাম্প চালিত ডিপ-টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নেন এইড ফাউন্ডেশন নামের ঝিনাইদহের একটি এনজিও। তারা গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। কৃষকদের জানানো হয় অল্প পয়সায় তারা জমিতে সেচ পাবেন। বছরের সব সময় পানি পাওয়া যাবে। বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এই সকল কথায় কৃষকরা উদ্ভদ্ধ হন, তারা অল্প টাকায় জমি দেন।
উদয় শংকর বিশ^াস জানান, তাদের গ্রামের মাঠে গড়ার বিলে প্রায় ৬ শত বিঘা জমি আছে। এখানে ২০১৫ সালে ৫ টি সোলার পাম্প স্থাপন করা হয়। কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি থাকে বোরো মৌসুমে ধানের জমিতে বিঘা প্রতি ৩৬ শত টাকা তারা এইড ফাউন্ডেশনকে পরিশোধ করবেন। অন্য মৌসুমে আরো কম লাগবে। যার স্যালো মেশিন দিয়ে চাষ করতে গেলে কৃষকদের খরচ হতো বোরো মৌসুমে বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকা। এভাবে চুক্তির মাধ্যমে ২০১৬ সালের বোরো মৌসুম থেকে তারা পানি ক্রয় করতে শুরু করেন। প্রথম বছর ভালো ভাবে পাম্পগুলো চলেছে, কৃষকরাও লাভবান হয়েছেন। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে পাম্প নষ্ট হতে শুরু করে। পর্যায় ক্রমে তাদের গ্রামের ৫ টি পাম্পই নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকরা পড়ে যান বিপাকে। বিভিন্ন চাষ থেকে ধানের চাষে ফিরে এসে এখন পানির অভাবে ধান চাষ করতে না পারলে তারা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হন। বর্তমানে ওই মাঠে প্রায় ৫ শত বিঘা জমি পড়ে আছে।
কৃষক উদয় শংকর আরো জানান, এই অবস্থায় তারা এইড ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা দাবি করেন পাম্পগুলো চালুর ব্যবস্থা করতে। কিন্তু তারা এনার্জিপ্যাক ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড কে দায়ি করেন। তারা জানিয়ে দেন মেরামতের দায়িত্ব তাদের। কারন এই পাম্প স্থাপনে তারা মালামাল সরবরাহ করেছেন। তাদের লোকজন থেকেই স্থাপন করেছেন। আর এনার্জিপ্যাক এর কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন এইড ফাউন্ডেশন তাদের ঠিকঠাক বিল পরিশোধ করেনি, যে কারনে তারা নতুন করে কোনো কিছু করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে এইড ফাউন্ডেশনের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক মোঃ আশাবুল হক জানান, ঝিনাইদহ জেলার সদর, কোটচাঁদপুর, হরিনাকুন্ডু, শৈলকুপা ও কালীগঞ্জ ৪২ টি সোলার পাম্প স্থাপন করেন তারা। ২০১৫ সাল থেকে এই পাম্পগুলোস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫ টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৮ টি, হরিনাকুন্ডু উপজেলায় ৪ টি, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৪ টি ও শৈলকুপা উপজেলায় ১ টি পাম্প স্থাপন করা হয়। এগুলো স্থাপনে বাজেট ছিল প্রায় ১৭ কোটি টাকা। সোলার পাম্প এর মাধ্যমে প্রতিটিতে কমপক্ষে ৮০ বিঘা জমি চাষ করা সম্ভব। হিসাব অনুযায়ি ৩ হাজার ৩৬০ বিঘা জমি চাষ করা সম্ভব হবে এই পাম্পগুলো দিয়ে।
তিনি আরো জানান, ২০১৭ সাল থেকে এই পাম্পগুলোর কিছু কিছু নষ্ট হতে শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে ১২ টি পাম্প নষ্ট হয়। যার মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার হরদেবপুর গ্রামের ৫ টি পাম্প নষ্ট হয়।
আশাবুল হক জানান, ইতিমধ্যে অন্য কোম্পানী থেকে মালামাল ক্রয় করে যে পাম্পগুলো তারা স্থাপন করেছিলেন সেগুলো সচল করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু হরদেবপুর গ্রামে এনার্জিপ্যাক ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড এর স্থাপন করা ৫ টি ভালো করা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশ্য ইতিমধ্যে তারা একটি সচল করে দিয়েছেন, বাকিগুলো করেননি। তিনি আরো বলেন, ইডকল থেকে অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে তারা এনার্জিপ্যাক ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড এর বিল পরিশোধ করবেন। যে কারনে তাদের দেড় কোটি টাকার মতো বকেয়া রয়েছে। তারা দাবি করেছিলেন, কৃষকের স্বার্থে পাম্পগুলো চালু করার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু তারা করছেন না। যে কারনে এলাকার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
এনার্জিপ্যাক ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড এর সিইও মোঃ আক্তারুজ্জামান মুটোফোনে জানান, এইড ফাউন্ডেশনের কাছে তারা এখনও ২ কোটির অধিক টাকা পাবেন। এই টাকা পরিশোধ না করলে তারা নতুন করে প্রকল্পে ব্যয় করতে পারছেন না। তারপরও কৃষকের কথা চিন্তা করে তারা একটি সচল করে দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তার ভাষায় পাওনা পরিশোধ করলে অবশ্যই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হতো, কৃষকরা উপকৃত হতো।
সূত্রঃ প্রথম আলো