এ যেন একের ভিতরে তিন
সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ
আগে বিক্রি করলেন ডগা,এখন ফল বা মেছড়ি পরে বিক্রি করবেন বীজ। এ যেন একের ভিতরে তিন। ইতোমধ্যে ডগা আর মেছড়ি থেকে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। পরে বীজ থেকেও আসবে বেশ। সব মিলিয়ে কৃষক জাহাঙ্গীরের যাবতীয় খরচ বাদে দেড় লক্ষাধিক টাকা আসবে বলে আশা। তার ভাষ্য,অন্য ফসল চাষ করে উৎপাদন ব্যয় বাদ দিলে খুব বেশি লাভ থাকে না।
আবার ব্যয়বহুল রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে উৎপাদিত সবজি খেলে মানবদেহের চরম ক্ষতি। তাই তিনি ২৫ শতক জমিতে জৈব পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের পুঁইয়ের চাষ করেছেন। এখন এলাকার অন্য কৃষকদের নজরও পুইয়ের দিকে। লাভবান কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বারোপাখিয়া গ্রামের মৃত দলিল উদ্দীনের ছেলে।
সরেজমিনে, কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেনের মেছড়ির ক্ষেতে গেলে দেখা যায়, পাটকাঠি আর বাঁশ ও শক্ত মোটা সুতায় তৈরী করা হয়েছে বান বা টাল। যে বানের উপর যেন প্রতিযোগীতা করে বেয়ে বেড়াচ্ছে পুইয়ের ডগাগুলো। সব ডগার গিরায় গিরায় ধরে আছে বিভিন্ন বয়সী মেছড়ি। কিছু লালচে রঙের এখনই খাওয়ার উপযোগী। কিছু মাঝারি আবার কিছু একবারে ছোট। রাত পোহালেই হাটের দিন তাই কৃষক জাহাঙ্গীর কৃষি শ্রমিক নিয়ে মেছড়ি তুলতে মহাব্যস্ত।
কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মাঠে তার মোট ৮ বিঘা মত চাষযোগ্য জমি আছে। অন্য জমিগুলোতে ধান ও অন্য ফসলের চাষ করেছিলেন। আর ২৫ শতকের একখন্ড জমিতে পুঁইয়ের চাষ করেছেন। কিন্ত পুঁইয়ের জমিটি থেকে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা আয় হয়েছে। যা অন্য সবগুলো জমির ফসল বিক্রি করেও এতোটা লাভ হয়নি। তিনি আরও বলেন, পুঁইয়ের জমিটি অপেক্ষাকৃত নিচু। ফলে জলাবদ্ধতা হতে পারে এমন ঝুঁকির মধ্যেও এ জমিতে পুঁইয়ের চারা লাগিয়েছিলেন। প্রায় ৯ মাস আগে লাগানো চারাগুলো যখন তরতাজা হয়ে উঠেছিল তখন কয়েকদফা বৃষ্টির আঘাতও এসেছে। কিন্ত দ্রæত পানি নিষ্কাষনের জন্য ক্ষতি হয়নি। পরে লতাগুলো খানিকটা লম্বা হলে শক্ত করে টাল বা বান দিয়েছিলেন লতাগুলো আপন গতিতে বেড়ে উঠতে। এর কিছুদিন পর থেকেই পুইশাকের ডগা কেটে বিক্রি শুরু করেন। প্রায় ৩ মাস এ ডগা বিক্রি করে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন। পরে ফল আসার সময়ে শীতের আগমনের সাথে সাথে কিছুদিন ডগা কাটা বন্ধ রেখে পরিচর্যা করতে থাকেন। এ সময়ে প্রত্যেক ডগার গিরায় গিরায় মেছড়ি বা বীজ বড় হলে চড়া দামে বিক্রি শুরু করেন। তিনি বলেন প্রথমদিকে প্রতিকেজি মেছড়ি ৮০ টাকায়ও বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে ২ দিন মেছড়ি তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। এখনও গাছ সতেজ রয়েছে ফলে আরও বেশ কিছুদিন মেছড়ি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
কৃষক জাহাঙ্গীর আরও জানান, এ চাষে তেমন একটা খরচ নেই। একটু ঘনঘন সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। তিনি জানান, যেহেতু সবজি তাই এ ক্ষেতে রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সার প্রয়োগ করেছেন। এতে একদিকে খরচ সাশ্রয় হয়েছে অপরদিকে বাজারের অন্য মেছড়ির চেয়ে নিরাপদ ছাড়াও স্বাদও হয়েছে ভালো। তাই এলাকায় তার ক্ষেতের মেছড়ির চাহিদা অনেক বেশি।
মোক্তার হোসেন নামের ওই গ্রামের এক কৃষক জানান, তাদের মাঠটি বেশ নিচু। একটু ভারি বর্ষা হলেই পানি জমে যায়। ফলে জাহাঙ্গীরের পুঁইয়ের ক্ষেতটি ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও তার কঠোর পরিশ্রমে ভালো জাতের বীজ হওয়ায় ভালো পুঁইশাক হয়েছে। অথচ যখন ক্ষেতে পুইয়ের চারা রোপন করে তখন গ্রামের মানুষ বেশ ঠাট্ট্রা করেছিলেন। বরং এ ক্ষেত থেকে পুঁইশাক আর মেছড়ি বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছেন তা অন্য ফসলের ৫ বিঘা চাষ করেও হয়নি। তিনি বলেন, আগামীতে তিনিও এক বিঘা জমিতে পুঁইশাকের চাষ করবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বারোপাখিয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন তার ২৫ শতক জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের পুইয়ের চাষ করেছেন। প্রথম দিকে প্ুঁইয়ের ডগা বিক্রি করে বেশ পয়সা পেয়েছেন। এখন বিক্রি করছেন পুঁইয়ের ফল বা মেছড়ি। তিনি আরও জানান, চলতি বছরে সবজির দাম ভালো থাকায় কৃষক জাহাঙ্গীর বেশ লাভবান হয়েছে। তিনি কয়েক দফা কৃষক জাহাঙ্গীরের ক্ষেতে গিয়েছেন। অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য তাকে উৎসাহিত করেছেন।