করোনা মোকাবেলায় অনুকরনীয় কালীগঞ্জের আনন্দবাগ
আরিফ মোল্ল্যা, ঝিনাইদহের চোখঃ
গ্রামে কেউ এখনও আক্রান্ত হয়নি। তারপরও প্রয়োজন সচেতন হওয়া। সরকারী ঘোষনার পাশাপাশি মহামারি করোনার কবল থেকে সকলকে বাঁচাতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন আনন্দবাগ গ্রামবাসী নিজেরাও লকডাউন ঘোষনার মাধ্যমে করছেন অন্য গ্রামের চেয়ে ব্যতিক্রমী কাজ। এ গ্রামের যুবকেরা নিজেদের গ্রামটিকে বাঁচাতে নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। তারা গ্রামটিতে প্রবেশের প্রধান সড়কে করোনা সম্পর্কে সতর্কতামূলক ফেস্টন লিখে বাঁশ দিয়ে গতিরোধক টানিয়ে দিয়েছেন। এমন অবস্থায় গ্রামবাসীরা কেউ ঘর থেকে বাইরে যাচ্ছেন না বললেই চলে। একান্তই জরুরী প্রয়োজনে কেউ বাইরে গেলে গতিরোধকের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকেরা তার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করছেন অথবা হাতে জীবানুনাশক স্প্রে করে দিচ্ছেন। আবার বাইরে থেকে ফিরে আসলেও একইভাবে হাত পরিষ্কারের ব্যবস্থা করছেন। সাথে সাথে গ্রামের বাইরের সকলকে এ গ্রামে আপাতত না আসার জন্য অনুরোধ করেছেন গ্রামবাসী। এভাবে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য গ্রামবাসীকেও সচেতন করছেন এ গ্রামটি।
আনন্দবাগ গ্রামের বয়োবৃদ্ধ ইউনুচ আলী জানান, স্বাস্থ বিভাগের কর্মকর্তা ও গনমাধ্যমের মাধ্যমে করোনা ভয়াবহতা সম্পর্কে সব তারা জেনে শিহরিত হয়েছেন। বর্তমান সরকারের ঘোষিত লক ডাউন হলেও অন্য গ্রামগুলোতে এখনও কিছু অসচেতন মানুষ অযথা ঘুরে বেড়াচ্ছেন যা কাম্য নয়। এতে আসতে পারে চরম বিপর্যয়। তাই গতকাল পবিত্র জুম্মার নামায শেষে তারা গ্রামবাসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী শুক্রবার পর্যন্ত তাদের গ্রামের সকল মানুষের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে লক ডাউন পালন করবেন। অপরিচিত অথবা কোন আত্মীয় সজনদেরকেও এ অবস্থার মধ্যে তাদের গ্রামে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তাদেরকে বলে দেয়া হচ্ছে বেঁচে থাকলে দেখা হবে। কিন্ত এখন আমরা বাড়িতে থেকে সকলেই ভালো থাকার চেষ্টা করি।
ওই গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিন জানান, লকডাউনে বাধ্য করতে স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন ভাবে সচেতন করার চেষ্টা করছেন। তারপরও অসচেতন কিছু মানুষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অথচ এ সময়ে লক ডাউনের কোন বিকল্প নেই। আবার গ্রামবাসীদের কেউ জরুরী প্রয়োজনে বাইরে গেলে তাদের গতিরোধ করে হাতে সাবান অথবা জীবানুনাশক স্প্রে করে দেয়া হচ্ছে। আবার ফিরে আসলে একইভাবে হাত জীবানুমুক্ত করে গ্রামে ঢুকতে পারছেন। এ জন্য গ্রামে প্রবেশের স্থানগুলোতে যুবকেরা পর্যায়ক্রমে কাজ করছেন। তিনি আরও জানান, গ্রামে যারা হতদরিদ্র আছে তাদেরকে গ্রামের সামর্থবানেরা সকলেই সাহায্য করছেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা জানান, খবর শুনে তিনি শনিবার বিকালে গ্রামটিতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, গতিরোধকে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকদেরকে রাস্তা না আটকানোর কথা বলে এসেছেন। আবার হতদরিদ্রদের খোঁজ রাখতে বলেছেন। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন যেভাবে গ্রামটিকে লকডাউন করে নিজেদের গ্রামটি বাঁচাতে কাজ করছেন এ জন্য গ্রামবাসী ধন্যবাদ পাওয়ারযোগ্য।
দেশের সব গ্রামগুলোতে যদি এমন সচেতনতা সৃষ্টি হয়ে নিজেদেরকে সুরক্ষার চেষ্টা করতো তাহলে আরও সুন্দর হতো।