করোনা নামের মহামারি তুমি যাও—এম এ কবীর (সাংবাদিক)
ঝিনাইদহের চোখঃ
এক.
ছোট বেলায় দুটো মহামারিকে দেখেছি, কলেরা মহামারি আর গুঁটি বসন্ত মহামারি। নাম মুখে আনা বারণ ছিল। ‘অসুখ’, ‘বলা’ ডাকা হত। মনে পড়ে, মায়ের বুকে লুকিয়ে থাকতাম। মশারী ফেলে রাখা হতো চব্বিশ ঘণ্টা। গভীর রাতে সুনসান নীরবতায় কুকুরের কান্নার সুর সবাইকে ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখত। এই বুঝি ‘বলা’ আসছে গোপনে, বাতাসে, দেও এর মাধ্যমে। যে পাপ করেছে মানুষ, তার কাফ্ফারা হিসেবে এই মহামারি।
নিরাময়ের কিছু ব্যবস্থার কথাও মনে আছে। হুজুরের পড়া পানির ঝিটকা দেয়া হতো শরীর আর ঘরে- বাইরে। আমাদের ঘরের মূল ফটকে বেড়ার সাথে নিম গাছের ডাল লাগিয়ে রাখা হতো। উদ্দেশ্য ছিল ‘বলা’-‘মুসিবত’, ‘আলগা’- বাতাস যেন ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। মা প্রতিদিন সাদা বেলে মাটি দিয়ে ভিটার ডেলা লেপে দিতেন। একটা নান্দনিক শিল্পের ছাপও থাকত। দীর্ঘদিনের পরিচিত নারী ভিক্ষুকদেরকে ভিক্ষা দেয়া হতো না। আমাদের কাছারি ঘরের কাছ পর্যন্ত নারী-পুরুষ ভিক্ষুকরা দাঁড়িয়ে মুষ্টি চাল ভিক্ষা চাইতো।
গ্রামের হেকিম সাহেবের লাল মিকচারের দাওয়াই দেয়া হতো। আজও মনে পড়ে, মা দৌড়ে গিয়ে জ্বর সারানোর জন্যে গায়ে সরু সাদা কাগজের থরে থরে দাগ কাটা ছোট বোতলের মিকচার আর কতক পুরিয়া পাউডার নিয়ে আসতেন। ‘আল্লাহ শাফি’ করে মা খাওয়াতেন। মশারির ভেতরে থেকেই পথ্য আর খাওয়া দাওয়া চলতো। মা-ই লোকমা ধরে ধরে খাওয়াতেন। করলা ভাজি ছিল গরম ভাতের সাথে প্রধান তরকারি।
আহা, মায়ের হাতে কত থাপ্পড়- ই না খেয়েছি ওই তিতা করলা না খাবার জন্যে। কালি জিরার ভর্তা না খেলে ‘বলা’ যাবেনা–‘বলা’ মুক্তির জন্যে- মায়ের আশার বাণীর কথা -এই করোনা সংকটে বার বার মনে পড়ে। মুড়ি আর চিড়া খেতাম সুস্বাদু নারকেলের সাথে। মধু ছিল আর এক প্রয়োজনীয় উপকরণ।
আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমাদের চার গ্রামের অতন্দ্র প্রহরি ময়রার বাপের কথা। ছোট খাট পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব এই কাকা আমাদের কে রমজানের সেহরির সময় টিনের চুঙ্গা ফুকে এ পাড়া থেকে ওই পাড়ায় গিয়ে ঘুম থেকে উঠাতেন। একইভাবে ওই দুটো মহামারির সময় ময়রার বাপের ভুমিকা খুব মনে পড়ে। এই দুর্যোগের রাতে তিনি বাড়ি থেকে বাড়ির সদর ফটকে গিয়ে সবাইকে মহামারি থেকে সাবধানে থাকার কথা বলতেন। গভীর রাতে এই পাড়া ওই পাড়ায় আজান দিতেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার কথা বলতেন; ধর্ম কর্ম পালন করার কথা বলতেন। যে যা পারে তার থেকে টাকা উঠাতেন। একটা ‘ ফান্ড’ তৈরি করতেন গরীব হতভাগ্যদের জন্যে যাদের পরিবারের দাফন করার সামর্থ্য ছিলনা। আমার কল্পনায় এখনো দেখতে পাই মশারীর নিচে মমতাময়ীর হাতের পরশ নিচ্ছি আর ইথারে ময়রার বাপের চুঙ্গা ফুকানোর বানী শুনছি ঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইল্লাল্লাতে নূর, পাক মুখে বলি আল্লাহ্ ’বালা’ কর দূর”। ভাবছি, বহু মহামারি সংকট আমরা অতিক্রম করেছি। এখনও করব ইনশাল্লাহ। ভাবতে ভাবতে কেন জানি চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে।
দুই.
বিজ্ঞানী দার্শনিক আইজ্যাক নিউটন বলেছেন, ‘আমি যদি মানুষের জন্য কিছু করে থাকি, তবে তা সম্ভব হয়েছে আমার ধৈর্য ধরে চিন্তা করার ক্ষমতার কারণে।’
তিন.
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন টুডো এ সংকটে দেশবাসীর সামনে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের জন্য আজ আমি প্রধানমন্ত্রী, জনগণের সেবা ও নিরাপত্তা দেয়া আমার প্রধান কাজ। আমি চাইলে নিজে ঘরে বন্দী থাকতে পারতাম। তবু সাহস নিয়ে আপনাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি, বের হচ্ছি। কারণ আপনারাই আমার অক্সিজেন। আপনারা সুস্থ্য থাকলেই আমি সুস্থ্য। আপনাদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে কিছুই নেই।’ প্রিয় জাস্টিন টুডো! স্যালুট আপনাকে। আপনার কথা আগামীর বিশ্ব স্মরণে রাখবে। সাধারণ মানুষ স্বস্তি চায়। একটু আশ্বাস চায়। দেখতে চায় এই দুঃসময়ে রাষ্ট্রের আন্তরিকতাটুকু।
চার.
৬৩৮ সালে প্লেগে আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম সেরা শাসক হজরত ওমর (রা.)। তিনি ছুটে বেড়িয়েছেন প্লেগে আক্রান্ত তার শাসনাধীন প্রতিটি অঞ্চলে। এ সময়ে ৬৩৯ সালে প্লেগে আক্রান্ত হয়ে জীবন দিয়েছিলেন সিরিয়ার গভর্নর আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ। রোগে আক্রান্ত মানুষকে নিয়ে কাজ করার সময় তাঁকে মদিনায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ওমর। তিনি যাননি। বলেছিলেন, আমার সৈন্য ও সাধারণ মানুষকে রেখে মদিনায় নিরাপদে যেতে পারি না। আমি তাদের সঙ্গে থেকেই কাজ করে যাব।
পাঁচ.
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার লিখেছেন,
‘মঙ্গল দীপ জ্বেলে অন্ধকারে দু-চোখ আলোয় ভর প্রভু,
তবু যারা বিশ্বাস করে না তুমি আছো, তাদের মার্জনা করো প্রভু…।’
ছয়.
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চীনের উহানের একটি ছবি দেখলাম। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৮৭ বছর বয়সী লিউ কাই। তিনি বুঝতে পারছিলেন জীবনপ্রদীপ নিভে আসছে। সময় আর বেশি নেই। চলে যেতে হবে চিরতরে। মৃত্যুর হিমশীতল পরশ স্পর্শ করবে। এরপর কীভাবে শেষকৃত্য হবে জানেন না এই বৃদ্ধ । শুধু বুঝলেন তিনি চলে যাচ্ছেন। আর ফিরবেন না এ পৃথিবীতে। ডাকলেন একজন ডাক্তারকে। বললেন, আমার শেষ একটা ইচ্ছা আছে বাবা। আপনি কি পূরণ করতে পারবেন? সারা শরীর পার্সোনাল প্রটেকশন্স ইকুইপমেন্টস অ্যাপ্রোনের আবরণের ভিতর থেকে ডাক্তার বিস্ময় নিয়ে তাকালেন। এই মুহূর্ত বড় কঠিন। কেউ কারও জন্য কিছু করতে পারছে না। প্রিয়জনরা কেউ পাশে আসছে না। ডাক্তার নিজেও কাজ করছেন ঝুঁকি নিয়ে। সামান্য ভুলে তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন। তবু বয়স্ক মানুষটির শেষ ইচ্ছা জানতে চান। বয়স্ক মানুষটি এবার বললেন, মৃত্যুর আগে সূর্যাস্ত দেখতে চাই। চোখের সামনে দেখতে চাই পৃথিবীর শেষ সূর্যটার ডুবে যাওয়া। এরপর অন্ধকারে তলিয়ে যাবে সবকিছু। আমিও। বৃদ্ধ ভেবেছিলেন, তার শেষ ইচ্ছা হয়তো পূরণ হবে না। কিন্তু না,ব্যবস্থা নিলেন ডাক্তার। বৃদ্ধকে সূর্য ডোবার মুহূর্তে হাসপাতালের বেডসহ নিজে নিয়ে আসেন খোলা আকাশের নীচে। দুজনের চোখের সামনেই সূর্যটা ডুবতে থাকে। অবাক বিস্ময় নিয়ে দুজনই তাকিয়ে থাকেন আকাশের দিকে। দুজনই তাকিয়ে থাকলেন সূর্যটা একেবারে না ডুবে যাওয়া পর্যন্ত। পিপিই অ্যাপ্রোনের আবরণে ডাক্তারের চোখে অশ্রæছিল কিনা বোঝা যাচ্ছিল না। সূর্যাস্তের পর লিউ কে আবার নিয়ে আসা হয় হাসপাতালের ভেতরে। আহারে! কি করুণ দৃশ্য! কি কষ্ট আজ মানুষের!
সাত.
এ রকম কত দিন চলবে? কেউ জানেন না। আশাবাদীরা বলছেন তিন-চার মাস। আবার এমন ভীতিপ্রদ হিসেবও পড়েছি, যা বলছে অন্ততঃ দেড় বছর।
ভাইরাসরা বাঘ-সিংহের মতো নীতিতেই শিকার ধরে। তবে সমস্ত মানুষকে সমান ভাবে বেকায়দা করতে পারে না। যারা একটু বুড়ো-টুড়ো। শরীরের ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা কম, তাদেরই ভালো করে কব্জা করে। ফলে সাবধান না হলে বয়স্ক মানুষদের পক্ষে এই বসন্তই ‘রোদনভরা’ হয়ে উঠতে পারে। অনবরত প্রচারমাধ্যমে বলা হচ্ছে, এই ভাইরাসের সঠিক মোকাবিলা করতে হলে ‘আমাদের’ গৃহবন্দি হয়ে থাকা আবশ্যক। কিন্তু কেন এই তালাবন্দি হওয়ার আহ্বান? না হলে বাংলাদেশে কি হবে ? সাবধানতা অবলম্বন না করলে নিশ্চিত মহামারী।
আট.
গ্যারান্টি নয়, সম্ভাবনা। গ্যারান্টি আপাতত অলীক স্বপ্ন, সম্ভাবনা যথাশক্তি বাড়াবার চেষ্টাই একমাত্র করণীয়। কিছু সংখ্যক মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন – এত কড়াকড়ি কেন ? জনসংখ্যা এবং সংক্রমণের অনুঃপাত হিসাব দেখিয়ে অনেকেই বলছেন, এখনই এমন বাড়াবাড়ির প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু এখন তর্কের সময় নয়। অন্ততঃ কয়েক সপ্তাহ তো নয়ই। এখন প্রয়োজন শতকরা একশো ভাগ সতর্ক থাকা। এককথায় বলাই যায় যুদ্ধকালীন সতর্কতা। প্রশ্ন আবার কিছু পন্ডিত করতেই পারেন – এর ফলে মানুষ অনর্থক আতঙ্কিত হয়ে পড়বে না তো ? তার উত্তর : আতঙ্ক দূরে রাখার জন্যই চূড়ান্ত সতর্কতার প্রয়োজন। যাতে বাধ্য হয়ে জনজীবন অচল করতে না হয়, সেই কারণেই জনসমাগম ও সামাজিক মেলামেশা যথাসম্ভব কমানো জরুরি। এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি মোটের উপর নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু নির্দেশ না মানার যে প্রবণতা আমরা দেখাচ্ছি তাতে ভবিষ্যতে কী দাঁড়াবে কে জানে!
নয়.
‘করোনাভাইরাস’ এক অপরিসীম নেতিবাচকতা নিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে আবির্ভূত। অদৃশ্য এই শত্রæর প্রভাব মানুষের ওপর কতটুকু, তা এরইমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে।
কেননা, এ লেখাটি তৈরির সময় গোটা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫৬ জন, মৃতের সংখ্যা এক লক্ষ ৮৫ হাজার ১৫৬ জন এবং সুস্থ হয়েছেন, ৭ লাখ ২৯ হাজার ৮৭৩ জন। বাংলাদেশে আক্রান্ত চার হাজার ১৮৬ ,মৃত-১২৭, সুস্থ্য হয়েছেন ১০৮ জন।
দশ.
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-,
‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।’
আসলে বিশ্ববাসীর পরিস্থিতি এখন এমন, যার যার সাবধানতা-সতর্কতা তাকেই অবলম্বন করতে হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ-আতঙ্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যেকার আমদানি-রপ্তানি প্রায় বন্ধের পথে, বলা যায় জরুরি চিকিৎসা সামগ্রি ছাড়া অন্য সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্বের দেশগুলো ‘একা’ হয়ে পড়েছে। দেশে দেশে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও ক্রমে বন্ধ হচ্ছে। এতে শহর থেকে শহর বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। মানুষের সঙ্গে মানুষেরও দূরত্ব রাখতে হচ্ছে। ভয়াবহ এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এছাড়া উপায়ও নেই। যেহেতু এ ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।
এগার.
বিশ্ববাসীকে এমনিতেই নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হয়। গত ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পঙ্গ-পালের আক্রমণের বিষয়টিও সামনে আছে। পঙ্গপালের আক্রমণে প্রায় ২০ শতাংশ ফসলের হানি ঘটবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, সময়সাপেক্ষ হলেও করোনা পরিস্থিতি হয়তো মোকাবিলা করা যাবে; কিন্তু এই ‘বাধ্যতামূলক পরিস্থিতি’ শেষে যে গভীর সংকট বিশ্ববাসীকে মোকাবিলা করতে হবে, তা হলো খাদ্য সংকট। বিভিন্ন গবেষণা থেকে উঠে আসা আগাম এই আশঙ্কার বার্তা সার্বিক বিবেচনায় উড়িয়েও দেয়া যায় না।
বার.
একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, ১০০ বছরে এ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫৮টি প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, ৫০ বছরে হয়েছে ৫৩টি বন্যা, তার মধ্যে ৬টি ছিল মহাপ্লাবন। ১৫৩ বছরে হয়েছে ২০টি বড় ধরনের ভ‚মিকম্প। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এ দেশে ছোট ও বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্াস ও কালবৈশাখীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৭টি, তার মধ্যে ১৫টি ছিল ভয়াবহ। এতে সম্পদের ক্ষতি হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা (বিএমডি, ২০০৭)। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষি খাত অর্থাৎ খাদ্য উৎপাদন। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের বন্যায় ৩২৫.৯ মিলিয়ন ডলার, ২০০৪ সালের বন্যায় আউশ ও আমন ফসলের ৪৩৫.৮৯ মিলিয়ন ডলারের খাদ্যশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং ১৯৮৮ সালে বন্যায় খাদ্যশস্যের ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ২৫ লাখ টন। নভেম্বর ২০০৭ এর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ তার গতিপথে উপকূলের ১৮৬,৮৮৩ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণভাবে ৪৯৮,৬৪৫ হেক্টর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল ৩ বিলিয়ন ডলার (বিএমডি, ২০০৭)।
আবার শৈত্যপ্রবাহের ব্যাপ্তিকালের জন্য মানুষের জীবন ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, খরার কারণে বিগত ৫০ বছরে ২০ বার দেশ খরার ঝুঁকিতে আক্রান্ত হয়েছে এবং তীব্রতাভেদে আমনসহ অন্যান্য ফসল ২০-৬০% ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত খরার কারণে প্রায় ২১.৮ লাখ টন ধান নষ্ট হয়। সুতরাং, দুর্যোগের এই চিত্র থেকে স্পষ্ট হতে পারে, করোনা ভাইরাসে প্রাণহানি রোধ না হলে এর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উৎপাদনব্যবস্থায়। বলাই বাহুল্য, গোটা বিশ্বের পরিস্থিতি এমনই।
তের.
করোনাভাইরাসের এই মহামারী থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বিশ্ববাসীকে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উন্নত দেশগুলোর বিজ্ঞানীদের সমবেত প্রচেষ্টায় দ্রæততার সঙ্গে ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা আবিষ্কৃত হতে পারে। বিশ্ববাসীর মনে রাখতে হবে, এটা মানবতার বিপর্যয়। একক কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর জন্য এ বিপর্যয় নির্ধারিত নয়। মানব জাতিকে রক্ষা করতে হলে ভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যু যেমন ঠেকানো প্রয়োজন, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যও যথাযথ পরিকল্পনা জরুরি। ভবিষ্যতে অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বকে কোন দেশ শাসন করবে, এমন গুঞ্জন ইতিমধ্যে উঠেছে। আমি মনে করি, এই বিপর্যয়সংকুল পরিস্থিতিতে সেটা বিবেচ্য হওয়া উচিত নয়। বরং সামগ্রিকভাবে এ দুর্যোগ মোকাবিলা করা জরুরি। বিশ্ববাসীর প্রাণরক্ষা এবং ভবিষ্যতে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা থেকে মুক্তি দিতে পারে উন্নত দেশগুলোই। বিশ্ব নেতৃত্ব কি এগিয়ে আসবে না ভয়াবহ এই মহামারী-বিপর্যয় থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে?
চৌদ্দ.
নচিকেতা চক্রবর্তীর একটি কবিতা সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেÑ
করোনা নামের মহামারি তুমি যাও, তুমি যাও
একটা বিনীত তোমার ভয়টাকে রেখে যাও
ওগো ভয় তোমারই হোক জয়
তুমি নির্ভীক তরবারি তুমি নির্মেদ অক্ষয়
তোমারই হোক জয়।
তোমার জন্য বন্ধ হয়েছে সভ্যতা নামে দূষণ
তোমার জন্য বহুদিন পরে আকাশে হাসছে পূষণ
তোমার জন্য মানুষ ভুলেছে পুষে রাখা বিদ্বেষ
শুধু ভয় করে দিল বিভেদহীন এক দেশ।
পনের.
নবাগত এবং আপাতত অ-নিবার্য ভাইরাসটির সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য রাষ্ট্রের দায় অপরিসীম। তার পাশাপাশি ব্যক্তি-নাগরিকের দায়ও অনেক।