ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি \সর্বশান্ত ঝিনাইদহের ট্রাক চালক
খ্ইারুল ইসলাম নিরব, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের ট্রাক, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের চট্রগ্রাম থেকে মালভর্তি করে ঢাকায় ফেরার পথে চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডুর দারোগারহাট স্কেল এলাকা থেকে ডাকাতের কবলে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছে ঝিনাইদহের এক ট্রাক চালক। সোমবার রাত পোনে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সূত্র ধরে জানা যায়, দারোগারহাট স্কেলের ইনচার্জ সুজন বলেন এখানকার একটি স্কেলে গতকাল থেকে যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দিয়েছিল। আজ তা মেরামত করা হয়। একই সাথে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম এবং চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা মহাসড়কের স্কেলে দুইটি স্কেলের পরিমাপ একই করে নির্ধারণ করার স্বার্থে ঝিনাইদহের একটি ট্রাকের ভাড়ার চালানের পরিমাণ নির্ধারণ করে সঠিক ওজন পরিমাপ করা হয়। সেজন্য ঢাকার উদ্যেশ্যে ট্রাকটি ছেড়ে গেলেও স্কেলে দুটির পরিমাপ একই করার স্বার্থে ওই ট্রাকটির ড্রাইভারকে পূনরায় বিপরীত স্কেলে নেওয়া হয়। তারপর স্কেল থেকে পরিমাপ নির্ধারণ শেষে ট্রাকটি পূনরায় ঢাকার উদ্যেশ্যে ছেড়ে আসে। এমতাবস্থায় ট্রাকটি আনুমানিক দুইশত মিটার আসার পর ডাকাতদল বলতে থাকে বিপরীত দিক দিয়ে ট্রাক কেনো নিয়ে যাস, সাইড কর। শুরু হয় ডাকাতদের নিষ্ঠুরতার কাহিনী।
ট্রাক চালক জানান, স্কেল কর্তৃপক্ষের কথামত স্কেলের পরিমাপ নির্ধারণ করার জন্য ট্রাকটির সহযোগিতা দাবি করে স্কেল কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করলে জোর দাবি করে স্কেল কর্তৃপক্ষ সেই সাথে দুই কিলোমিটার রাস্তা দুরত্ব হওয়ায় ঘুরে আসতে ১শত টাকা তেল খরচ দেয়। পাশাপাশি তাদের স্কেলের পরিমাপ সঠিক করে নেয়। এই সুযোগে ওৎ পেতে থাকা ডাকাতদল আমাদেরকে রাস্তায় মোটর সাইকেল দিয়ে গতিরোধ করে এবং গাড়ি থেকে নামতে বলে। জীবনেনর ঝুকি নিয়ে ট্রাকটি নিয়ে দিকবেদিক ছোটাছুটি করতে থাকি। একপর্যায়ে তাদের কাছে থাকা নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয় এবং একাধিকবার জোর জুলুম করতে থাকে। এভাবে কেটে যায় প্রায় দেড় ঘন্টা সময়। অবশেষে সর্বশান্ত হয়ে তারা জীবন বাচাঁতে সক্ষম হয়। তিনি আরও জানান, স্কেল এলাকায় এ্যপাসি আরটিআর মোটরসাইকেলে সড়কে প্রকাশ্যে ঘুরে ডাকাতি করে, এরা কারা! স্কেল কর্তৃপক্ষের কথামত আসায় এ ঘটনার শিকার হতে হয়েছে। তাই এদের কারও সাথে ডাকাতদের যোগসাজস থাকতে পারে। তাই তিনি তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানান।
মাগুরা জেলার আড়পাড়া বাজারের ফারুক নামের এক ট্রাক ড্রাইভার জানান, আমরা দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে থাকি। তিনি বলেন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মটর গাড়িতে আছি। বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে ডাকাতি নেয় বললেই চলে। ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম একটি ব্যস্ততম সড়ক কিন্তু এই দারোগারহাট স্কেল এলাকায় ইতিপূর্বেও এমন ডাকাতি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরা যাকে পায় তাকে হায়েনার মত করে ধরে। এমনকি কয়েকজন ট্রাক ড্রাইভারকে ডাকাতির সময় হত্যা করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার এক ট্রাক ড্রাইভারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আজ আবার এই অবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের উপায় কি হবে! তাই আমরা সড়কে নিরাপত্তার দাবি রেখে প্রশাসনসহ সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা জোনের কন্টোল রুমে ফোন করলে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই ডাকাতদল পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা হাইওয়ে জোনের ওসি সাইদুল ইসলাম বলেন, স্কেল কর্তৃপক্ষ ট্রাকটি বিপরীত দিকে নেওয়ার ফলে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ জানার পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাছাড়া মহাসড়কে সার্বক্ষণিক পুলিশের টহল চলমান রয়েছে এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্কেলে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিককার জানান, স্কেল ইনচার্জকে বিষয়টি অবগত করে সিসি টিভির ফুটেজ সংরক্ষণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীকে আইনানুগভাবে যথাযত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।