অন্যান্য

করোনা জয়ের গল্প শোনালেন দুই মেয়ে এবং তাদের বাবা

ঝিনাইদহের চোখঃ

মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ব্যবসায়ী কাজী আবুল হোসেন। তার দুই মেয়ে হালিমা তুর্য স্নিগ্ধা ও নওশিন শার্মিলী নিরা। দুজনই পড়েন স্থানীয় কলেজে। পাশাপাশি স্নিগ্ধা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত। এলাকার বেশিরভাগ মানুষের কাছেও তাই বেশ পরিচিত। মাথায় বাজ পড়ে পরিবারের সবার। কীভাবে, কেমন করে তিনি আক্রান্ত হলেন? সম্প্রতি মেয়েটি কোথায়, কার কাছে গেছে, এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে প্রশাসনও। এর পরই বেরিয়ে এলো ঘটনা। কয়েকদিন আগেই স্নিগ্ধা বন্ধু সাংস্কৃতিককর্মী আর্থ কিশোরের ফার্মেসিতে গিয়েছিলেন ওষুধ ও মাস্ক কিনতে। আর আর্থ তার দুদিন আগে অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হন।

পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েন। কিন্তু মনোবল ভাঙেনি স্নিগ্ধার। আক্রান্ত হওয়ার পর রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা তাকে কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলামমেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেন। পরদিন তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরও নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

১৯ এপ্রিল রিপোর্ট আসে, তার বাবা আবুল হোসেন ও ছোট বোন নিরার দেহেও বাসা বেঁধেছে করোনা। স্নিগ্ধার সংস্পর্শেই তারা আক্রান্ত হন। এ খবরে ভেঙে পেড়েন সংসারের বড় মেয়েটি। কারণ তার ৬০ বছর বয়সী বাবার হৃদরোগসহ শরীরে যে আরও কিছু রোগ রয়েছে। তবে মনে বল সঞ্চয় করে নিজ কৌশলেই দুই মেয়ে ও তাদের বাবা জয় করে নেন করোনার মন। তাদের দেহ ছেড়ে চলে যায় প্রাণঘাতী ভাইরাসটি।

স্নিগ্ধা বলেন, ‘আক্রান্ত হওয়ার পর আমি বাবাকে বলেছিলাম, আমার জন্য চিন্তা করো না, আমি হাসপাতালে প্রাণঘাতী করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। প্রয়োজনে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ব কিন্তু পরাজিত হব না। তবে ভেঙে পড়েছিলাম বাবার জন্য। তিনিও সুস্থ হয়েছেন নিয়ম মানার কারণে। হাসপাতালে প্রতিদিন পাঁচবার গরম পানিতে ভাপ নেওয়াসহ গারগিল করা, লেবুর শরবত, আদা-লং-লেবু দিয়ে দৈনিক ৮-১০ বার চা পান, ফলমূল খাওয়াসহ সবই করেছি। ডাক্তারদের দেওয়া ওষুধ নিয়মিত সেবন করেছি। আমি নিজেই ফেসবুক ও মিডিয়া থেকে এসব নিয়ম-কানুন জেনে সব করেছি। চিকিৎসকরাও একই পরামর্শ দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে থাকা খাওয়ার কোনো সমস্যা না থাকলেও চিকিৎসক বা নার্সরা রোগীদের কাছে আসেন না। এ জন্য আমার ভয় ছিল। দিনে একবার ডাক্তার ওয়ার্ডে এসে চোখ বুলিয়ে যান। নার্সরা ওষুধ ও খাবার দূরের একটি কেবিনে রেখে ফোনে বলে দিয়ে চলে যান। এর মধ্যেই নিজের কৌশল চালিয়ে যাই। বাবা-বোনকেও তাই করতে বলি। এর পর গত শুক্রবার আবারও বাবা-মেয়েদের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। অবাক করা ব্যাপার, সোমবার তিনজনেরই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

স্নিগ্ধা বলেন, ডাক্তাররা বলেছেন, আবারও আমাদের তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করে ফল নেগেটিভ এলে আমরা হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাব। এখন অপেক্ষা করছি শেষ রিপোর্ট এলে কখন বাড়িতে মায়ের কাছে ফিরব। প্রতিদিন মা ফোন করে আমাদের খবর নিচ্ছে। মাকে বলেছিÑ আমরা শিগগিরই তোমার কোলে ফিরে আসব।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. সৈয়দ মনজুরুল হক জানান, ভৈরবের রোগী আবুল হোসেন ও তার দুই মেয়ের রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও তাদের আবার পরীক্ষা করা হবে। ওই পরীক্ষায় নেগেটিভ এলে তারা দুই-চার দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাবেন। বাবা-মেয়েরা ভালো আছে এবং খুব তাড়াতাড়ি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে এমন প্রত্যাশা কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন মো. মজিবুর রহমান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button