যেতেই হবে মাগো-মিঠুন কুমার কর্মকার
ঝিনাইদহের চোখঃ
মাগো, আর পারলাম না নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখতে। এবার আমাকে ছুটতে হবে নিজ গৌন্তব্যে, মোকাবেলা করতে হবে অদৃশ্য শত্রæর সাথে। মাগো, হয়তো যুদ্ধ জয়ে সামিল হবো দেশের তরে; নয়তোবা ক্ষুদার জ্বালায় অনাহারে তিল তিল করে মরার চেয়ে অদৃশ্য শত্রæকে পরাজিত করার অদম্য সাহসীকতায় আমাকে দৃঢ় মোকাবেলার সৎসাহস আমায় জোগাবে।
তবুও যেতেই হবে মাগো…
আর পারছি না নিজেকে সবার সামনে অবিবেচকের মতো নিরবতায় হেলে দুলে সময় কাটাতে। পারছি না আর মৃত্যু ভয়ে ঘরের অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন কাটাতে। কারণ জানোতো! আমিই এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। দীর্ঘদিন হয়ে গেল সামান্য ত্রাণ আর প্রোণোদনায় সাময়িক অনাহার কাটানো গেছে। কিন্তু নিজেকে আর কিছুদিন বাঁচাতে পারলেও বেশিদিন হয়তো পরিবারের অনাহারে দিন যাপন সহ্য করতে পারব না।
দেখো মা, কিভাবে বৃদ্ধ, শিশু, অসহায় নারী-পুরুষ ক্ষুদার জ্বালায় আত্মচিৎকারে ফেটে পড়ছে। জীবন দুর্বিসহ যন্ত্রণায় ছটফট করছে একটু বাঁচিবার তরে।
আমাকে যেতেই হবে, মাগো…
দেখো মা, কত কামার, কুমোর, জেলে, শ্রমিক জীবিকার তরে নেমে পড়েছে। জীবন বাজি ধরে কাজ করছে একটু অন্ন জোগাতে।
ভাবছো তুমি, মাগো, তারা হয়তো অদৃশ্য জীবাণুতে আক্রান্ত হবে!
দুর মা, মিছে মিছে ভাবছো। তুমিতো জানো না মাগো, তারা কত শত বাঁধা, প্রতিকূল উপেক্ষা করে জীবন পরিচালনা করে। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করে। তাদের জীবন লৌহ দন্ডের ন্যায় দন্ডীয়মান দৃঢ় মজবুত, সব প্রতিকূলতা নিয়ে ছোট থেকে বেড়ে উঠা। তাই অদৃশ্য জীবাণু তাদেরকে সহজে কাবু করতে পারবে না।
তবুও ভাবছো। শেষ পরিণতি যেন মৃত্যু না হয়ে দাঁড়ায়! হুম, ভাবতে পারো। তবে আমরা বাঙালিরা সব বিষয়ে মানিয়ে নিতে পারদর্শী। মাগো, তবুও মৃত্যু ভয়ের কথা ভাবছো! ভাবতে পার।
তবে মাগো, তিল তিল করে অনাহারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার চেয়ে অদৃশ্য জীবাণুর সাথে লড়াই করে পরাজিত হওয়া মন্দ কী?
তবুও মনে প্রশান্তি আসবে তোমার সন্তানেরা লড়াই করতে জানে। সে যেমন পরিস্থিতিই হোক না কেন আমরা নির্ভীক, সাহসী জাতি। দেখবে মা, একদিন আমরা জয়ী হবই।
যেতে হবেই মাগো কর্মক্ষেত্রে।
মাগো, তোমার সন্তানেরা যদি কর্মক্ষেত্রে অদৃশ্য জীবাণুর কাছে পরাজিত হয়ে মৃত্যু বরণ করে তাহলে মনে করো তারা পরিবার ও দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। মাগো, আমরা থেমে গেলে শুধু পরিবার নয়, দেশ থেমে যাবে।
তাই যেতেই হবে, মাগো। শুধু তুমি দুর থেকে দুয়া, আশির্বাদ একটু ভালোবাসা দিয়ো…