ঝিনাইদহে চেয়ারে বেঁধে দুই সন্তানকে নির্যাতনের ভিডিও স্ত্রীকে পাঠালো পাষণ্ড বাবা!
ঝিনাইদহের চোখ-
‘মাদকসেবী’ স্বামীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে সংসার ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান স্ত্রী। কোনোভাবে স্ত্রীকে বাড়িতে ফেরাতে না পেরে নিজের দুই সন্তানকে চেয়ারে বেঁধে নির্যাতন শুরু করে পাষণ্ড বাবা। প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠায় ‘মাদকসেবী’ স্বামী।
সোমবার ঝিনাইদহ সদরের ধানহাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এরইমধ্যে মা শিরিন সুলতানা দুই সন্তানের নির্যাতনের ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, নিজের দুই সন্তানকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে তাদের ‘মাদকসেবী’ বাবা। একই সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে বলছে ‘তোর মা আমার কথা শোনে না কেন’? এছাড়া সন্তানদের দিয়ে ঘর মোছানোর কাজ করানো হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৬ সালে জেলা সদরের ধানহাড়িয়া গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান শিমুলের সঙ্গে বিয়ে হয় শহরের আরাপপুর এলাকার শিরিন সুলতানার। এ দম্পতির ঘরে দুটি ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে নানা কারণে শিরিনের ওপর অত্যাচার করছিল শিমুল। অত্যাচার সইতে না পেরে দুই ছেলেকে রেখে বাবার বাড়িতে চলে যায় শিরিন। পরে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে আবার বাড়ি ফিরে আসার দাবিতে দুই ছেলেকে চেয়ারে বেঁধে নির্যাতন করে বাবা শিমুল।
মা শিরিন বলেন, বিয়ের পর থেকে প্রায়ই আমাকে মারধর করত স্বামী। কয়েকবার শালিসের পর বাড়িতে নিয়ে আবারো মারধর করে স্বামী। এ জন্য তাকে তালাক দিতে বাধ্য হই। এখন আবার আমাকে ফিরিয়ে নিতে সন্তানদের মারধর করা হচ্ছে।
ফেসবুকে দেয়া শিরিনের স্ট্যাটাসটি হলো-
‘আমার বাসা আরাপপুর ঝিনাইদহ। এই বাচ্চা দুইটা আমার। এদের বাবার অত্যাচারের কারণে আমি চলে এসেছি বাবার বাড়ি। ওরা ওদের দাদা দাদীর সঙ্গে থাকে। মাঝে মাঝে আমার কাছে আসতো। ফোনে কথা হতো। কিন্তু এখন ওদের বাবা এরকম অত্যাচার শুরু করেছে। ভিডিও করে আমার কাছে পাঠায়। আমি বাচ্চা কাছে রাখছিলাম কিন্তু জোর করে নিয়ে গেছে। বাসায় এসে ভাঙচুর করে। আমার কোনো ভাই নাই, বাবাও অসুস্থ। বাচ্চা মানুষ করার সামর্থও নাই আমার। তাই জোরও করতে পারি না। কিন্তু এখন অত্যাচারের পরিমাণ এতো বেড়ে গেছে যে আমার বাচ্চারা ওখানে থাকলে মরে যাবে। আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি বাইরে যেতে পারছি না। এমন কি আমার শ্বশুরও বলেছে ফোন করে, আমি গেলে আমাকে খুন করে ফেলবে। ওদের বাবা নেশা করে। মাথার ঠিক নাই। কাজ করে না। এমন অবস্থায় আমি খুব নিরাপত্তাহীনতাই ভুগছি। আমি আমার বাচ্চাদেরকে আমার কাছে রাখতে চাই। এবং ওর শাস্তি দাবি করছি। আপনারা আমাকে সাহায্য করেন। ওর নাম হাবিবুর রহমান শিমুল। বাসা ধানহাড়িয়া, চুয়াডাঙ্গা। ঝিনাইদহ। পিতা লিয়াকোত আলী।’
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, দুই ছেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরইমধ্যে অভিযুক্ত শিমুলকে আটক করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।