করোনায় শেষ লেখাপড়া, পেটের ক্ষুধায় কোটচাঁদপুরের মাদরাসাছাত্র এখন অটোচালক
কাজী মৃদুল, ঝিনাইদহের চোখ-
‘স্বপ্ন ছিল ছেলে-মেয়ে দুটিকে লেখাপাড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব। আজ সেই স্বপ্ন ধুলায় মিশে শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। করোনা নামক অদৃশ্য রোগে মানুষ আর আমার চায়ের দোকানে আসে না। তাই সংসার চালাতে আর পারছি না। সরকারি অনুদান এক দিন ১০ কেজি চাল ২ কেজি আলু পেয়েছি। আর ভাগ্যে জোটেনি। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই পড়াশোনা ছেড়ে ছেলেকে নামাতে হয়েছে সংসার চালানোর জন্য অর্থ রোজগারে। আমার ছেলেটি এখন ইজিবাইকচালক।’ কথাগুলো বলছিলেন আর ঘাড়ে থাকা গামছা দিয়ে বারবার চোখ মুচছিলেন এক স্বপ্নপূজারি পঙ্গু পিতা। এই স্বপ্নপূজারি ব্যক্তিটি হলেন ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার সাবদালপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের পঙ্গু চা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম।
তিনি আরো বলেন, দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। বড় ছেলে মোস্তফা কামাল কোটচাঁদপুর উপজেলার সাবদালপুর দারুল উলুম আলিম মাদরাসার শেষ বর্ষের ছাত্র। আর মেয়ে স্বর্ণালী একই মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ছেলে-মেয়ে দুটি আমার ভীষণ মেধাবী। আমি একজন পঙ্গু মানুষ। আমার একটি পা নেই। তবু অভাবের সংসার হলেও কারো কাছে কখনো হাত পাতিনি। এ অবস্থায় চায়ের দোকান দিয়ে সংসারের চাহিদা যতটুকু পেরেছি মিটিয়ে এসেছি এত দিন। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন নজরুল।
ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ খান বলেন, চা বিক্রেতা নজরুল ইসলামের চাষাবাদের জমি ছিল এক বিঘা। তা-ও গেল আস্ফান ঝড়ে তার কাঁচা ঘরবাড়ি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হলে জমিটি বন্ধক দিয়ে বাড়িটি মেরামত করেন। বাকি টাকা দিয়ে চায়ের দোকানে কিছু মালামাল তোলেন। এরপর আবার করোনার কবলে পড়ে বেচাকেনা না থাকায় দোকানের পুঁজিও শেষ হয়ে গেছে তাঁর। তার ওপর রয়েছে দোকানভাড়া।
চা দোকানি নজরুল ইসলামের ছেলে মোস্তফা কামাল বলেন, বাবার বড় ইচ্ছা ছিল আমি লেখাপড়া শেষ করে সংসারের হাল ধরব। কিন্তু সংসারের অবস্থা দেখে বাধ্য হয়েই লোন তুলে একটি ইজিবাইক কিনে ভাড়া মেরে বেড়াচ্ছি। করোনার কারণে যাত্রীও কম। একদিকে লোনের কিস্তি, অন্যদিকে সংসারের কথা চিন্তা করে প্রচুর খাটতে হয়। সারা দিন খুব পরিশ্রম হয়ে যায়। রাতে বাড়ি ফিরে আর বই নিয়ে বসতে ইচ্ছা করে না।
মাদরাসার প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, মোস্তফা কামাল আমার মাদরাসার একজন মেধাবী ছাত্র। আমরা মাদরাসার বেতনসহ মাদরাসাকেন্দ্রিক সব বিষয় দেখব।
বিষয়টি নিয়ে সাবদালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এবং ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি নয়াব আলী নাছির বলেন, নজরুল ইসলাম পঙ্গু বিধায় তাকে পঙ্গুভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সাহায্যে তেমন একটা ইউনিয়ন পরিষদে না আসায় আমরা এসব মানুষকে তেমন কিছু সাহায্য করতে পারি না। তবে আগামীতে দেখব ওই পরিবারের জন্য কিছু করা যায় কি না।