কালীগঞ্জজানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

ঠিকানা হলো কালীগঞ্জের সেই প্রতিবন্ধি মা ও ফুটফুটে আদরীর

সাবজাল হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সেই মানসিক প্রতিবন্ধির ভূমিষ্ট কন্যা আদরীরর ভার প্রধানমন্ত্রীর নেওয়ার পর মা ও মেয়ের কল্যানে রবিবার বিকালে উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের আয়োজনে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফুটফুটে চেহারার আদরীকে অনেকে নিতে আগ্রহ দেখালেও সভায় আশ্রয়দাতা আমজাদ- ছাকিরন দম্পতির হাতে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিনিময়ে তাদের ভরন পোষনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দিনমজুর আমজাদকে একটি মটর ইঞ্জিনচালিত ভ্যান দেওয়া হচ্ছে। এদিকে দুপুরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ শেখ হাসপাতাল পরিদর্শন করে মা ও শিশুর খোঁজ খবর নেন। এ দপ্তরের পক্ষ থেকে তাদের সেবায় দেয়া হয়েছে একজন সমাজসেবাকর্মি। তিনি হাসপাতালের সেবিকাদের পাশাপাশি সার্বক্ষনিক প্রতিবন্ধি মা ও নবজাতক আদরীর সেবা করে যাচ্ছেন। শনিবার সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধির আশ্রয়দাতা আমজাদ – ছাকিরন দম্পতির হাতে ১০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য,অন্তঃসত্ত¡া অসহায় মানসিক প্রতিবন্ধির আশ্রয়দাতা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের আশ্রয়দানকারী দিনমজুর আমজাদ- ছাকিরনের মহত্বের কথা তুলে ধরে গত ২ অক্টোবর ”দিনমজুর আমজাদের মানবিকতার দৃষ্টান্ত” শিরোনামে দৈনিক সংবাদ ও খুলনাঞ্চাল পত্রিকা ছাড়াও ঝিনাইদহের চোখে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। ওই দিন বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিবন্ধি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এরপর হাসপাতালে ছুটে আসেন স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা ও স্থানীয় মিডিয়াকর্মিরা। জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ ফুটফুটে চেহারার শিশুটিকে আদরের সাথে কোলে তুলে নিয়ে নাম দেন আদরী। এ সময় প্রতিবন্ধির আশ্রয় ও সেবাদানকারী দিনমজুর আমজাদ -ছাকিরন দম্পতির হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন জেলা প্রশাসক। এছাড়াও প্রতিবন্ধি মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য যাবতীয় ব্যয় সরকারী ভাবে বহন করা হবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।

প্রকাশ থাকে যে, আনুমানিক ২২/২৩ বছরের পরিচয়হীন এই মানসিক প্রতিবন্ধি উপজেলার কোলাবাজারে ঘোরাফেরা করতেন। কখনও ময়লা কাপড় চোপড় শরীরে জড়িয়ে আবার কখনও অর্ধলঙ্গ অবস্থায় থেকে মুখে বিড় বিড় করে কথা বললেও বোঝার যেতো না। কেউ কিছু বললে কখনও তেড়ে আসতেন। আবার কখনও দেখা যেতো ঠান্ডা মেজাজে। কিন্ত গত সপ্তাহ খানেক আগে দিন আগে ময়ধরপুর গ্রামের রাস্তার পাশে অসুস্থ অবস্থায় তিনি পড়ে ছিলেন। সে সময়ে চোখ মেলে তাকাতে পারলেও তার ছিলনা কোন নড়াচড়া। সেই সময়ে পথচারী ও গ্রামের লোকজন দেখতে ভীড় শুরু করেন। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে তা কমতে থাকে। কিন্ত অসহায় অসুস্থ মানুষটি তো কারও না কারও সন্তান বা বোন। এটা ভেবে বিবেকের তাড়নায় ওই গ্রামের আমজাদ আলী,আব্দুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন তাকে নিয়ে কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখেই বললেন মেয়েটি অন্তঃসত্ত¡া।

এ সময়ে তার পর্যাপ্ত খাওয়া দাওয়া আর বিশ্রাম দরকার। দেয়া হলো প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা। এরপর বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠতেই অসহ্য পাগলামী শুরু করে দেন। অস্থির করে তোলে গোটা হাসপাতাল এলাকা। বাধ্য হয়ে সাহায্যকারীরা তাকে নিয়েই ফেরেন এলাকায়। এ সময়ে অস্থিরতার কারনে সকলেই এড়িয়ে যান। কিন্ত এমন অবস্থায় অসুস্থ প্রতিবন্ধিকে বিবেকের তাড়নায় আর বাজারে ছেড়ে দিতে পারেননি দিনমজুর আমজাদ আলী। গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে তিনি নিজ বাড়িতে নিয়ে আশ্রয় দেন। দিনমজুর আমজাদের অভাবের সংসার হলেও তার স্ত্রী ছাকিরন নেছা নিজের সংসারের সদস্যের মত করে সেবা যতœ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এরপর শুক্রবার বিকেলে কালীগঞ্জ হাসপাতালে এই প্রতিবন্ধি ফুটফুটে চেহারার কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে বেজায় খুশি হন আমজাদ – ছাকিরন দম্পতি।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শারমিন শিরিন লুবনা জানান, আদরী ও তার মা সুস্থ আছেন। তবে আদরী ভূমিষ্ট হওয়ার আগে পজিশন সাভাবিক না থাকায় প্রতিবন্ধি মায়ের ছোট্্র একটি অপারেশন করা হয়। ফলে আরও দু একদিন সময় লাগবে। তাদের চিকিৎসা ও সেবা শশুষায় যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা জানান, তিনি সারাক্ষনই সাধ্যমত খোঁজখবর নিচ্ছেন। হাসপাতাল ছাড়ার পর অসহায় মানসিক প্রতিবন্ধি মা ও কন্যা আদরী কোথায় থাকবেন সে বিষয়টিও ভাবতে হচ্ছে। সে কারনেই উপরি দিকনির্দেশনার প্রেক্ষিতে রবিবার বিকালে উপজেলা শিশু কল্যান বোর্ড জরুরী সভা করেছেন। যে কোন প্রয়োজনেই তিনি তাদের পাশে থাকবেন।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, একজন অসহায় প্রতিবন্ধিকে নিয়ে মানবিকতার প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আনায় দৈনিক সংবাদ ,খুলনাঞ্চাল প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট পরিবারকে ভূয়সী প্রশংসা ও ধন্যবাদ দিয়ে জানান, সমাজের যে কোন অসহায় মানুষের জন্য মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। সকলে সেদিকে এভাবে নজর দিলে দেশ ও আমাদের সমাজটা হবে আরও সুন্দর।

তিনি বলেন আরও বলেন, সাথে সাথে দিনমজুর হয়েও আমজাদ – ছাকিরন দম্পতি এ প্রতিবন্ধিকে পরিবারের একজন সদস্যের মত করে সেবা দিয়ে মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক তাঁর পক্ষ থেকে আশ্রয়দাতা পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগীতা প্রদান করা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমজাদ- ছাকিরনের বাড়িতেই তাদের চাওয়া মতে থাকবেন প্রতিবন্ধি ও তার কন্যা আদরী। আমজাদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগীতা করতে আমজাদের চাওয়া মতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি মটর চালিত ভ্যান কিনে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও মা মেয়ের পূনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button