কালীগঞ্জে অবাধে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার, ঝুঁকিতে পথচারী ও শিক্ষার্থীরা
বেলাল হুসাইন বিজয়, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহের চোখ-
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে গ্যাস সিলিন্ডারের রমরমা ব্যবসা। উপজেলার পৌর শহরসহ ছোট-বড় বিভিন্ন বাজারের দোকানে লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছাড়াই চলছে এ ব্যবসা। সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনেই প্রতিটি বাজারেই চলছে এ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা দোকানগুলোয় খোলামেলাভাবে সিলিন্ডারের গ্যাস বিক্রি করায় চরম ঝুঁকিতে চলা ফেরা করতে হচ্ছে ক্রেতা, পথচারী ও জনসাধারণসহ শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও অতিরিক্ত দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন পানের দোকান চায়ের দোকান, মুদি দোকান, মনোহরি, ওষুধ, রড-সিমেন্ট ও ইলেকট্রনিক্সসহ প্রায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণভাবে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে।
ঝুঁকিপূর্ণভাবে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়াও পৌর শহরের বিভিন্ন মোড়ে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসা চলছে অহরহ। এ দোকানগুলোয় নেই প্রাথমিক বিপর্যয় রক্ষায় ড্রাই পাউডার ও সিও ২ সরঞ্জামসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। এতে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ বৈধ গ্যাসের ডিলাররা। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ফলে পথচারীদের জীবণের ঝুকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তাদের আশঙ্কা যেকোন সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আমাদেরকে জিম্মিকরে গ্যাস সিলিন্ডার প্রতি ৫০-১০০ টাকা বেশি নিচ্ছে। ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়তি মূল্যে গ্যাস কিনতে হচ্ছে। অতিসম্প্রতি রাজধানী ঢাকার রূপপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলার বারবাজার, কোলাবাজার, গাজীরবাজার, সুইতলা মল্লিকপুর, বলরামপুর, চাঁপরাইল, নলডাঙ্গা, সোনালীডাঙ্গা, সুবর্ণসাড়া, তত্তিপুর, মাইজদিয়া, কাষ্ঠভাঙ্গা, ধোপাদী, মান্দারবাড়িয়া, বগেরগাছি, কুল্ল্যাপাড়া,রঘুনাথপুর, কিয়া বাগান, ভাতঘাড়া, দুলালমুন্দিয়া, বালিয়াডাঙ্গা, লাউতলা, সিংগীর বাজারসহ আরও কিছু বাজারে অনুমোদন ছাড়াই এদিকে বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪ এর দ্যা এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪ এর ৬৯ ধারার ২ বিধিতে বলা হেয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া কোনভাবেই (গ্যাস) এলপিজি মজুদ করা যাবেনা। বিধি অনুযায়ী ৮টি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। একই বিধির ৭১ নং ধারায় বলা হয়েছে, আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ট অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ থাকতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বারবাজারে এক শিক্ষক বলেন, উপজেলার ছোট বড় হাটবাজারে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান। তারা পান, চা, মুদি, মনোহরি, ইলেকট্রিক দোকানে এ ব্যবসা চলছে। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করছে। দোকানের সামনে রাস্তার পাশে এসব গ্যাস রাখায় হুমকির মুখে পড়েছে সাধারণ ক্রেতা, পথচারী ও শিক্ষার্থীরা।
এব্যাপারে বারবাজার মায়ের দোয়া ইলেকট্রিক দোকানি মসলেম হোসেন বলেন, সিলিন্ডার গ্যাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। যারা এ ব্যবসা করছে তারা সমিতির নিকট থেকে অনুমতি নেননা। অবৈধ এ ব্যবসা বন্ধ করা দরকার।
কালীগঞ্জ ফায়ার স্টেশন মাস্টার ড. মামুনুর রশিদ বলেন, লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি কম। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভ করতে গিয়ে বিস্ফোরক অধিদফতরের নাম ক্ষুণœ করছে। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণের পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখার বিধান থাকলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এই নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই সাধারণ ব্যবসার মতই চালিয়ে যাচ্ছে গ্যাসের ব্যবসা। জনসমাগম স্থলে কোনো ধরনের সতর্কবার্তা ছাড়াই বিপজ্জনকভাবে এ ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা যেমন দÐনীয় অপরাধ তেমনি অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসার কারণে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্ণা রানী সাহা জানান, বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গ্যাস সিলিনন্ডার কোম্পানী কি ভাবে ব্যবসায়ীদের গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করছে সেটা ভেবে পাচ্ছিনা। তবে অচিরেই অবৈধ অনুমোদনহীন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের আওতায় আনা হবে।