যুব প্রতিবন্ধী জাতীয় আইটি প্রতিযোগিতায় সেরা ঝিনাইদহের ইমরান
ঝিনাইদহের চোখ-
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত পঞ্চম যুব প্রতিবন্ধী জাতীয় আইটি প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছেন ঝিনাইদহের ইমরান হোসেন। গত ২১ নভেম্বর ঢাকায় অনলাইনে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের যুব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে আইসিটি চর্চা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে এবং সরকার প্রতিশ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশের উপযুক্ত মানবসম্পদ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের প্রস্তুতির জন্য প্রতি বছর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী এবং নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার (এনডিডি) এ চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ১৫৭ জন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। প্রতিযোগিরা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট ও ইন্টারনেট-এই চারটি বিষয়ে প্রতিযোগিতা করেন। সেরা ২০ জনকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিতদের মধ্যে প্রথম হন ঝিনাইদহের মো. ইমরান হোসেন। তিনি খুলনা বিভাগ থেকে একমাত্র বিজয়ী। তিনি জন্ম থেকেই বাম চোখে দেখতে পান না। কোনও চিকিৎসায় তার এ সমস্যার সমাধান হয়নি। ডান চোখ দিয়েই তিনি সব কিছু করেন।
২১ নভেম্বর দিনব্যাপী বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রধান কার্যালয় ঢাকাসহ রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর ও রংপুর বিসিসি’র আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহে একযোগে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি (সিএসআইডি)।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম ও সিএসআইডি’র নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব।
নির্বাচিত প্রতিযোগিরা বিসিসি পরিচালিত বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সে এবং আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। প্রত্যেক বিজয়ী পুরস্কার স্বরূপ পাটের ব্যাগসহ স্যুভেনিয়র, একসেট বই এবং একটি করে স্মার্ট ফোন পেয়েছেন। প্রতিযোগিতায় পৃষ্ঠপোষকতা করে ওয়াল্টন, জেনওয়েবটু এবং ফিফোটেক।
প্রতিযোগিতায় সেরা ইমরান ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের এইচ এস সি (মানবিক) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি ২০১৩ সালে ‘সপ্ত সংঘ যুব পরিবার’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বিনামূল্যে সমাজে অবহেলিত, প্রতিবন্ধী, সুবিধাবঞ্চিত, নিরক্ষর, বেকার নারী ও শিশু, যুবক যুবতীদের প্রশিক্ষণ দেন। তিনি হাতের কাজ, সেলাই, কম্পিউটার, মোমবাতি তেরি, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালনসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেন। তার নিজের একটি লাইব্রেরি আছে। তিনি ঝিনাইদহে বই বান্ধব চা দোকান, মুদি দোকান ও লন্ড্রি চালু করেছেন। তার সংগঠনের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সহস্রাধিক লোককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ইমরান হোসেন বলেন, যুব প্রতিবন্ধী জাতীয় আইটি প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার মাধ্যমে পরিচিতি ও যোগাযোগ বাড়বে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠবে।
বিসিসি খুলনার প্রশিক্ষক (আইটি) সোহেল রানা বলেন, ইমরান ২০১৯ সালে বিবিসি খুলনা থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সরকারের তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এনডিডিসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্ষমতায়ন প্রকল্পের আওতায় ইমরান ওই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণে ভালো করায় তাকে আইটি মেলায় অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এইচএসসি পাস না হওয়ায় তাতে অংশ নিতে পারেনি। এবার যুব প্রতিবন্ধী জাতীয় আইটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেরা হলো।