ঝিনাইদহে চুইঝাল চাষ শুরু
ঝিনাইদহের চোখ-
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার আরজান আলী হাসানহাটি গ্রামে প্রায় ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন চুইঝাল। এছাড়াও ৫ শতক জমিতে রয়েছেন চুইঝালের নার্সারি। তাদের চাষ দেখে এখন অনেকেই চুইঝালের চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র এহসানুল হক জিহাদ বলেন, করোনাকালে কলেজ বন্ধ থাকায় কিছু একটা করার পরিকল্পনা থেকে চুইঝাল চাষ শুরু করি। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই চুইঝালের চাষ। এরপর খোঁজখবর নিয়ে চুইঝালের চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে চাষ শুরু করি। প্রথমে সখের বশে হয়ে ৩৫ টাকা দিয়ে একটি চারা কিনে আনি। বোনের বাড়ি থেকে কিনে আনা চারাটি বাড়িতে লাগানোর এক বছর পর মূল্য হয় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। এতে অনেকটা লাভের মুখ দেখতে পেই, পরিকল্পনা করে বড় করে চাষ করবো। অবশেষে ২ বিঘা জমিতে চুইঝালের চাষ করতে সক্ষম হয়েছে। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বাণিজ্যিক ভাবে চুইঝালের চাষ শুরু। ডুমুরিয়া থেকে কাটিং এনে ২০ টি চারা তৈরি করি নার্সারীতে। সেই চারা দিয়ে বর্তমানে দুই বিঘা জমিতে চুইঝালের চাষ। জমিতে প্রায় ৪০০ টি চারা রয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি পিস চারা তৈরিতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ টাকা। বর্তমানে নার্সারীতে প্রায় ২০ হাজারের মতো চারা রয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য প্রতিপিচ ৩৫ টাকা হলে ৭ লক্ষ টাকার চারা রয়েছে। চুইঝাল চাষ করতে তেমন আর্থিক ভাবে তেমন ব্যায় হয় না কিন্তু অন্যান্ন ফসলের চেয়ে এ চাষটি অনেক লাভজনক। এলাকার অনেক কৃষকই এবার চুইঝালের চাষ করবে বলে তারা এ জমিতে এস পরামর্শ নিচ্ছে ও চারা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। চুইঝাল এখন দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের ভোজন রসিকদের কাছে প্রিয় ও পছন্দের একটি মসলা জাতীয় ফসল। কালীগঞ্জে এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হচ্ছে চুইঝালের।
চুই লতা জাতীয় গাছ, এর কাণ্ড লতানো প্রকৃতির, ধুসর বর্ণের, পাতা পান পাতার আকৃতির সবুজ বর্ণের। রসালো ঝাল স্বাদেও চুইঝাল এর কাণ্ড মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাংসের সঙ্গে এর ব্যবহার বেশি। চুই লতা জাতীয় গাছ বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আম, জাম, নারকেল, সুপারি ইত্যাদি গাছের গোড়ায় এটি রোপন করা যায়। রোপনের এক বছর পর থেকেই চুই খাওয়ার উপযুক্ত হয়, তবে কয়েক বছর বয়সী চুইয়ের স্বাদ বেশি ভালো।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, চুইঝাল একটি উপকারী এবং বাণিজ্যিক ফসল। বিভিন্ন অঞ্চলে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পতিত জমি ব্যবহার করে অল্প সময়ের মধ্যে কৃষকদের অধিক মুনাফার জন্য আমরা চুইঝাল চাষের পরামর্শ দিয়ে থাকি। চুইঝাল অপ্রচলিত অর্থকারী ফসল। এটি যে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক আয়ের একটি ফসল।
শিক্ষক আরজান আলী জানান, করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠা বন্ধ। এরমধ্যে জিহাদকে চুইঝালের চাষের কথা বলি। সে রাজি হওয়ায় এ অঞ্চলে চুইঝালের চাষ শুরু করেছি। প্রতি মাসে চুইঝাল চাষ করে অন্তত ৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব বলে তিনি জানান। জিহাদের সাথে আমিও চাষে সময় দিই প্রতিনিয়ত। এ চাষে সময় কম দিলেও সমস্যা নাই। নার্সারী থেকে অনেকেই চুইঝালের চারা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে নার্সারীতে ৪ জন বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিদিন তারা ৫০০ টাকা করে মজুরি পাই।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মো. মোহায়মেন আক্তার জানান, তার জানামতে উপজেলায় এটিই চুইঝালের প্রথম চাষ। তারা যোগাযোগ করলে যেকোন ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। নতুন করে চাষ করলে তাদের সহযোগিতা করবো। এ চাষে তেমন খরচ নেই ও শ্রম দিতে হয় কম। আবার লাভের পরিমাণ ও অনেক বেশি।