ঝিনাইদহের মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিময় বাড়ীটি অযত্নে পড়ে আছে
ঝিনাইদহের চোখ-
দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও স্বাধীনতার অনেক স্মৃতি, দুঃখ বেদনা মানুষের মনে নাড়া দেয়। জাগ্রহ করে যুদ্ধের লোমহর্ষক স্মৃতি। যার সবকিছুই ইতিহাসের পাতায় খুজে পাওয়া যায় না। তেমনিই একটি ঘটনা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৬নং গান্না ইউনিয়নের পার্বতীপুর গ্রামের।
সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ায় পার্বতীপুর গ্রামের হাজী আসকর আলীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দুরে কাঁদা মাটির রাস্তা পেরিয়ে হাজী আসকর আলীর বাড়ীর বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্রাম নিতেন। সেখানে খাওয়া দাওয়া করত। একদিন হঠাৎ মধ্য আষাঢ়ের নির্ঝর দুপুরে বাড়িটি ঘিরে ফেলে পাকিস্তানি সেনারা।
ওই বাড়িতে তখন অবস্থান করছিল বীর মুক্তিযুদ্ধের ৮নং সেক্টরের সাব কমান্ডার দুদু মিয়া সরকার, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু তাহের, ইলাহী বকস্, সুলতান আহম্মেদ, সিদ্দিকুর রহমান, তহুরুল ইসলাম, সাহেব আলী, মফিজ উদ্দীন ময়ফল, মোঃ সামছুল হক ও বাবুর আলী মন্ডলসহ ১৪/১৫ জন বীর সেনানী। তারা পাক বাহিনীর আসার কথা জানতে পেরে পালিয়ে বাড়ির পেছনের বিলে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। ভাগ্যের জোরে তারা বেঁচে গেলেও পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাড়িটি।
স্মৃতিময় দিনের স্মৃতিচারণ করে মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বলেন, হাজী আসকর আলী’র ৩ ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে মমতাজ উদ্দিন তখন পাকিস্তান আর্মিতে কর্মরত অবস্থায় বিদ্রোহ করে কারাগারে বন্দি ছিলেন। বাকি দুই ছেলে ও তাদের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন হাজী আসকর আলী। যুদ্ধশেষে আবার বাড়ী ফিরে মেরামত করে নেন তিনি।
তৎকালীন আঞ্চলিক কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ দুদু মিয়া সরকার জানান, আমরা প্রতিদিন অপারেশন শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার এবং বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বিলের ধারে নির্জন পল্লীতে হাজী আসকর আলী’র বাড়িতে অবস্থান করতাম। কিন্তু ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে একদল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং পুড়িয়ে দেয়। কিছু পুড়ে যাওয়া টিন ছাড়া হাজী আসকর আলীর পুড়িয়ে দেওয়া সেই বাড়ির এখন কোন স্মৃতিই নেই।
পরবর্তিতে সেখানে নতুন ঘর স্থাপন করেছে। তবুও ওই বাড়িটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার ও সাহস জোগানোর সাক্ষি হিসেবে দাড়িয়ে আছে। সবচে আশ্চার্য্যরে বিষয় বাড়ীর মালিক হাজী আসকর আলী মুক্তিযোদ্ধা হলেও তিনি আজও স্বীকৃতি পাননি।
এলাকাবাসি স্মৃতিময় ওই বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের ক্ষতিগ্রস্থ তালিকায় অন্তভর্‚ক্তসহ সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।