মালিক বিহিন মুল্যবান গাছগুলো কৃষি জমিতে পড়ে থেকেই নষ্ট হচ্ছে
ঝিনাইদহের চোখ-
আম্পান ঝড়ে উপড়ে পড়া বড় বড় গাছগুলোর যেন কোনো মালিক নেই। চৌগাছা-ঝিকরগাছা সড়কের পলুয়া নামক স্থানে মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ১৮ টি বৃহত আকৃতির গাছ হেলে কৃষকের ক্ষেতের মধ্যে পড়ে আছে। দীর্ঘ ২০ মাস এভাবে পড়ে থাকায় একদিকে গাছগুলো নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকের ক্ষেতের মধ্যে পড়ে থাকায় তারা জমি চাষ করতে পারছেন না।
অবশ্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছেন গাছির মালিকানা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। গাছ এলজিইডির পক্ষ থেকে লাগানো হলেও জেলা পরিষদ তাদের বলে দাবি করেন। ফলে তারা অপসারন করতে পারছেন না। এতে কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি তাদের রাস্তারও ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া মুল্যবান গাছগুলো মাটি আর পানিতে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম পলুয়া। চৌগাছা উপজেলা থেকে ঝিকরগাছা উপজেলায় যেতে এলজিইডির একটি সড়ক রয়েছে। যে সড়কটি পলুয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে চলে গেছে। এই সড়কের দুইপাশে এলজিইডির রোপনকৃত অসংখ্য ছোট বড় গাছ রয়েছে। যার মধ্যে পলুয়া নামক স্থানে ছিল অসংখ্য রেন্টি গাছ। যেগুলোর মুল্য ৫ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত।
পলুয়া গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, ২০২০ সালের মে মাসে যে আম্পান ঝড় হয়েছিল সেই সময়ে এই সড়কটির অনেক স্থানে বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ে। কিছু গাছ রাস্তার উপর আর কিছু গাছ রাস্তার পাশে জনসাধারনের চাষের জমিতে পড়েছে। ঝড়ের পর রাস্তার উপর পড়ে থাকা গাছগুলো অপসারন করা হয়। স্থানীয়রাও অনেক গাছের ডাল কেটে নিয়ে যায়। কিন্তু সাধারনের চাষের জমিতে পড়ে থাকা গাছগুলো কেউ অপসারন করেনি। সেই থেকে পড়ে আছে গাছগুলো। তিনি আরো জানান, গাছগুলো মাটি আর পানিতে পড়ে থেকে শুকিয়ে গেছে। অনেকে জ¦ালানী করার জন্য গাছ খুড়ে খুড়ে নিয়ে গেছে। এখনও ১ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২০ টি গাছ পড়ে আছে। তিনি আরো বলেন, অনেকগুলো গাছ পড়ে আছে কৃষকের ধানের জমিতে। যা তাদের ক্ষেতে ফসল উৎপাদনে মারাত্বক বিঘœ ঘটাচ্ছে।
গাছ পড়ে থাকা একখন্ড জমির মালিক আব্দুল কুদ্দুস জানান, তার জমিতে দুইটি গাছ পড়ে আছে। এই গাছগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল পাননি। তিনি আরো বলেন, এই গাছের কারনে তার জমিতে ফসল কম হচ্ছে। তিনি জানান, এই গাছগুলো উপড়ে পড়ায় রাস্তারও মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে। অনেক স্থানে মাটি ধসে আছে। যা চলাচলের ক্ষেত্রেও ঝুকিপূর্ণ বলে জানান। স্থানীয় ব্যবসায়ী বাবলুর রহমান জানান, গাছগুলো অপসারন খুবই জরুরী। তিনি বলেন, গাছগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ, যা পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এগুলোর মালিক কারা তা খুজে পাচ্ছেন না। আবার সরকারি হওয়ায় কেউ কেটেও নিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে এলজিইডির চৌগাছা উপজেলা প্রকৌশলী মনছুর রহমান জানান, গাছগুলো তাদের লাগানো হলেও জেলা পরিষদ এগুলোর মালিক বলে দাবি করেন। যে কারনে তারা ইচ্ছা থাকলেও গাছগুলো অপসারন করতে পারছেন না। তিনি বলেন, রাস্তার উপর গাছ পড়ে থাকলে তারা লোকবল নিয়োগ করে সেগুলো কেটে রাস্তা পরিষ্কার করেন মাত্র। তিনি বলেন, এই গাছগুলো পড়ে থাকায় রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। অনেক স্থানে রাস্তার পাশ ধসে আছে। তিনিও এই গাছগুলো অপসারন জরুরী বলে মনে করেন।
এ বিষয়ে যশোর জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট এলাকার সদস্য হবিবর রহমান জানান, গাছগুলো অপসারনের জন্য তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি এই গাছ অপসারনের জন্য কাজ করেছেন। আশা করছেন অল্পদিনের মধ্যে একটি টেন্ডার হবে এবং গাছগুলো অপসারন হবে।