ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে অনশন স্থগিত করলো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শাহীন
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
আজ বিকেল ৪টায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শাহীন আলমকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়ে যাওয়ার জন্য নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আসেন। তিনি তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অনশন ভঙ্গ করবেন না। পরে সন্ধ্যায় আসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সেলিম রেজা। তাকেও সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অনশন ভঙ্গ করবেন না বলে জানিয়ে দেন তিনি। পরে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে আজ রাত ১০টায় তিনি অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।
উল্লেখ্য- ঝিনাইদহ জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আজ সোমবার সকাল ৯টা আমরণ অনশনে বসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে স্নাতক পাস করা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এস এম শাহীন আলম।
জেলা প্রশাসক ঢাবি শিক্ষার্থী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শাহীন আলমকে আপাতত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং পরবর্তী সময়ে সরকারি চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আলমপুর গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের ও মোছা. ফারা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান শাহীন আলম। তিনি তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। বাড়ির কাছে আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েন। হঠাৎ একদিন জ্বর হয়। ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে জ্বর সেরে যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে যায় তার। তবুও থেমে থাকেনি পড়ালেখা। ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। এখন মাস্টার্স শেষ করার অপেক্ষায় আছেন তিনি।
২০২০ সালের জুলাই মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিনা পয়সায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। করোনাকালে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার চিন্তা থেকে এ উদ্যোগ নেন শাহীন। দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারে পারদর্শী করে তোলেন তিনি। তিনি প্রমাণ করেছেন, তারাও পারেন। কিন্ত তার ভাগ্যে জুটেনি সরকারি চাকরি। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও শেষ পর্যন্ত চাকরি হয়নি তার। টাকা নেই। খুঁটির জোরও নেই। চরম অবহেলা থেকে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন তিনি।
করোনাকালীন দেশ বিদেশের ১১৩ জন শিক্ষার্থীকে অনলাইনে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে সাড়া ফেলে দেন শাহীন। অনলাইন মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণ দিতে কারো কাছ থেকে একটি কানাকড়িও নেননি তিনি। নিজে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণও দেন দেশ বিদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের। সেই থেকে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।
এখন হতাশায় ঘিরে ধরেছে শাহীনকে। তিনি উল্লেখ করেছেন ‘যতক্ষণ না সরকারি চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা না পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব। শুধু নিজের জন্য নয়, দেশের সব শিক্ষিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর জন্য একই দাবি তুলেছেন তিনি।