শেষ রাতের ইবাদতকারীকে মাফ করে দেয়া হয়

ঝিনাইদহের চোখঃ রোজায় অনেকেরই অভ্যাস হয়েছে হাতে তাসবিহ রেখে ইসমে জাতের জিকির বা তেলাওয়াত করা, রোজার পরেও আমাদের এ অভ্যাস চালু রাখলে অনেক মানসিক পেরেশানি দূর হয়ে যাবে।
রোজার কারণে যেমন অনেক অযাচিত কর্ম থেকে আমরা দূরে থাকতাম তেমনি অবসরে বা সফরে হাতে তাসবিহ্ থাকলে আপনি নানা ফেতনা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যানবাহনে উঠলেই দেখবেন মানুষ নানা পরচর্চায় লিপ্ত হয়ে যায়।
পরচর্চার ক্ষতি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ওয়াইলুল্লি কুল্লি হুমাজাতিল্লুমাজা, ধ্বংসে ডুবেছে তারা যারা পরচর্চা পরনিন্দা করে বেড়ায়। এ থেকে বেঁচে থাকতে পত্রিকা নিয়ে সময় কাটায়। দেখা গেছে সেখানেও ঝামেলা। পত্রিকার খবর নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ ঝগড়া শুরু হয়ে যায়।
তাই আমার অভ্যাস হাতে তাসবিহ নিয়ে জপতে থাকি। দেখি এর সুফল। কেউ আমাকে পক্ষে-বিপক্ষে টানে না। একদিন কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরছি। আমার পাশে মধ্য বয়সী শুশ্রূধারী এক ভদ্রলোক। আমি তো তাস্বিহ জপে চলছি। তিনি কিছু বলতে চাইলেও আমার তাসবিহ জপার একাগ্রতায় বলতে পারছেন না।
অনেক পর তিনি নেমে যাবেন তার আগে আমাকে বলেন ভাই একটি কথা, হাতে তাস্বিহ নিয়ে জপা তো বিদাত। তাসবিহ জপতে হয় মনে মনে। আর হিসাব রাখতে হয় আঙুলের কর গুণে।
আমি বলি তাস্বিহ জপা এবং আঙুলে হিসাব রাখার কথা যেহেতু আছে তাইলে কোনো বস্তুর মাধ্যমে হিসাব বিদাত হলেও তা উত্তম বিদাত বলেই গণ্য হবে। আপনি তো আমার পাশেই বসা।
আপনি তো হাতের কর গুণে মনে মনে কোনো তাস্বিহ জপেছেন বলে মনে হল না। বরং শুরু থেকেই চেষ্টা করছেন আমার সঙ্গে বিদাত সংক্রান্ত আলাপ জুড়তে। আসলে একটি শ্রেণী আমাদের আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল রাখতে নানা ফন্দি-ফিকির খুঁজে বেড়ায়।
আপনি এটা বিশ্বাস করেন কিনা? তিনি বলেন, বিষয়টি আমি এভাবে দেখিনি। সত্যিই তো আল্লাহর নামে মনে মনে জিকিরের কথাটি যেহেতু আছে তাহলে হিসাবের জন্য উত্তম কিছু ব্যবহার নাজায়েজ বলা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।
আমি বলি নবীজি (সা.)-এর আমলে আসহাবে সুফফার সাহাবিরা খেজুর দানা দিয়ে খেজুরের রশিতে গিঁট দিয়ে বিভিন্ন তাস্বিহ-তাহ্লিলের হিসাব রাখতেন এবং তা নবীজি নিষেধ করেননি বরং মুচকি হেসে অনুমোদন দিয়েছেন। আর আঙুলে জপার যে বিষয়টি সেটি হল এই সুফফার সাহাবিরা নবীজি (সা.)-এর কাছে আরজ করেন ইয়া রাসূলাল্লাহ আমাদের দান-দক্ষিণা করার সাধ্য নেই।
আমরা দাতাদের কাতারে হাশরের ময়দানে কীভাবে থাকব? নবীজি (সা.) ফরমান প্রতি নামাজ বাদে হাতের আঙুলের কর গুণে সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পড়লে তাদের কাতারে শামিল হতে পারবে।
কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ আদায়ে সচেষ্ট হওয়া, রোজার মাসে সাহরি খেতে শেষ রাতে জাগতে হয়। অনেকে ঘুম থেকে উঠে পাক-সাফ হয়ে দু-চার রাকাত নফল পড়ে যা তাহাজ্জুদের নামাজে শামিল হয়। রোজার পরও তা অব্যাহত রাখব।
কেননা শেষ রাতের ইবাদতকারীকে আল্লাহ মাফ করে দেন ‘ওয়াল মুস্তাগফিরিনা ফিল আসহার’। আমরা যদি রমজানের আমলগুলো আমাদের বাকি জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি আমাদের পরমাত্মা হবে বিকশিত, জীবন হবে স্বার্থক। আল্লাহ আমাদের রোজার শিক্ষায় জীবন কাটানোর তৌফিক দান করুন। আমিন।