শীতে ঝিনাইদহে গাছিদের সীমাহিন ব্যাস্ততা
মনজুর আলম, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ চোখ-
দিনে কিছুটা গরম হলেও সন্ধা হলেই শীত, তার মানে শীতের আগমন বার্তা চলে এসেছে। সকালেও শিশির ভেজার পথ। যা শীতের আগমনের বার্তা জানান দিচ্ছে। এরই মধ্যে ঝিনাইদহের গাছিরা খেজুর গাছ তুলতে শুরু করেছে। গাছিদের ব্যাস্ততা বেড়ে গেছে। আগাম রস পাবার আশায় শেষ কিছু গাছি গাছের পরিচর্যা শুরু করেছে।
খেজুরের রস আহরনের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করে। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে ডোঙ্গা বেঁধে নিপুন হাতে গাছ চাছা ছোলা করছে। এরই মধ্যে কয়েকজন গাছে নলি মারতে শুরু করেছে। কয়েকদিন পরই গাছিদের খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়ে যাবে।
শীতে মওসুম মানেই খেজুর গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে পুরো মহল্লা। শীতের সকালে খেজুর রসের তৃপ্তি-ই আলাদা আর খেজুর রসের ক্ষীর পায়েসের মজা না-ই বা বলা হল। প্রতিদিন গ্রামের কোন না কোন বাড়িতে খেজুর রসের খবারের আয়োজন চলে। খেজুরের শুধু রসই নয়, পাটালি, নলেন গুড় ছাড়া জমেই ওঠেনা। এক সময় ঝিনাইদহের খেজুরের গুড় ছিল বিখ্যাত। এসকল এলাকার খেজুর রসের গুড় নদীয়াসহ কোলকাতাতেও ভালো চাহিদা ছিল। সে সময় ব্যবসায়িরা এলাকা থেকে গুড় সংগ্রহ করে গরু-ঘোড়ার গাড়িতে করে মাঝদিয়া বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিত। এক সময়ের ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তের পথে। কারন আগের মত খেজুর গাছ এখন আর দেখা যায়না। কোন চাষি জমিতে আলাদা করে খেজুর গাছের চাষ করেনা। শুধু রাস্তা পাশে কিংবা জমির আইলে কম বেশি খেজুর গাছ দেখা যায়। তাছাড়া এক কেজি গুড় তৈরি করতে খরচ ৪০-৫০ টাকা আর বিক্রি করতে হয় ৫৫-৬০ টাকা বড় জোর ৭০টাকার বেশি নয়। যে কারনে চাষিরা গুড় বানাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় আড়াই লাখ খেজুর গাছ গাছিরা রস তৈরির জন্য উপযুক্ত করবেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজার গোপালপুরের ফারুক হোসেন বলেন, আগাম গাছ তুললে আগেই গুড়, পাটালি তৈরি করা যায়। তাই দামও চাহিদা ভালো থাকে। তবে এখন আর আগের মত গাছি পাওয়া যাচ্ছেনা। গ্রামা হাতে গনা কয়েকজন গাছি, যারা খেজুর গাছ কাটতে পারে। পরিশ্রমের তুলনা লাভ কম, তাই নতুন করে ছেলেরা আর খেজুর গাছ কাটতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, এবছর প্রতিটি খেজুর গাছ রস তৈরির জন্য উপযুক্ত করতে ৬৫ থকে ৭০ টাকা নিচ্ছেন। তা-ও আবার গাছ তোলার জন্য লোকের অভাব রয়েছে।
একই গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আব্দুল আজিজ বলেন, গত ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও বর্তমান যে পরিমান ফসল উৎপাদন হচ্ছে, তা- হতনা। তাই শীতের প্রায় ৬ মাস কৃষকগণ গাছ কেটে, গুড় তৈরি করে সংসারের চাহিদা মেটাতো। এখন ফসলের পাশাপাশি কাজের অভাব নেই। পুঁজি কম থাকলে এনজিও থেকে ঋন নিয়ে ভ্যান গাড়ি কিনছে। তা-না হলে চায়ের দোকান দিচ্ছে। কৃষকের ২-৩ বিঘা জমির মালিকের তুলনায় এখন তাদেরই ভালো চলছে। তাছাড়া বর্তমান বউ-ঝি’ রা সকালে উঠে খেজুরের রস জালিয়ে গুড় তৈরি করতে চাই না। লোকজনও নানাভাবে কাজে ব্যাস্ত থাকায় খেজুর গাছ কেটে গুড় তৈরিতে সময় দিতে চান না। নতুনভাবে গাছের বাগান তৈরি করা হচ্ছে না। জমির আইলে কিংবা রাস্তার ধারের গাছই সম্বল। তাই দিনদিন শিতে গাছিদের ব্যাস্ততা কমে আসছে।#