কুরআন তিলাওয়াতের নিয়মাবলী
ঝিনাইদহের চোখঃ
কুরআন আল্লাহর বাণী। এর তিলাওয়াত সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সমান।যা তিলাওয়াতে অধিক ছাওয়াব রয়েছে। কিন্তু আমরা কিভাবে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করব? এর আদব কি? কি পরিমাণ আয়াত পড়ব? কতদিনে কুরআন খতম করব। আমাদের প্রতি কুরআনে দাবি কি? এ বিষয়গুলো জানা প্রত্যেকেরই অতি প্রয়োজন।বিখ্যাত তাফসিরকারক হজরত ইমাম ইবনে কাছির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কুরআন পাঠের কিছু আদব তথা নিয়ম-নীতি উল্লেখ করেছেন। যা জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো –
কুরআন পাঠের আদব-
ক. পবিত্রতা অর্জন করে কুরআন তিলাওয়াত করা
খ. পবিত্র ও উত্তম পোশাক পরে কুরআন পাঠ করা
গ. ক্বিবলামুখী হয়ে বসে কুরআন পাঠ করা
ঘ. কুরআন পাঠের পূর্বে মিসওয়াক করে নেয়া
ঙ. পূর্ন মনোযোগের সঙ্গে কুরআন পাঠ করা
চ. কুরআন পাঠের সময় বিনা প্রয়োজনে কারো সঙ্গে কথা না বলা
ছ. কুরআন পাঠের সময় ছাওয়াবের বা কল্যাণের আয়াত পাঠ করলে থামা এবং আল্লাহর কাছে উক্ত ছাওয়াব বা কল্যাণ প্রার্থনা করা। এছাড়া শাস্তির আয়াত পড়লে থামা এবং তা থেকে পানাহ চেয়ে দোয়া করা।
জ. কুরআন কারিম খুলে না রাখা এবং কুরআনের ওপর কোনো কিছু দিয়ে চাপিয়ে না রাখা
ঝ. অন্যের কাজের ব্যাঘাত বা সমস্যার সৃষ্টি এমন আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত না করা;
ঞ. বাজার বা কোলাহল পরিবেশ, যেখানে মানুষ ফাহেশা কথা ও কাজে লিপ্ত সেখানে কুরআন কারিম তিলাওয়াত না করা
ট. কুরআন তিলাওয়াত অবস্থায় হাই উঠলে কুরআন কারিম পাঠ বন্ধ করা।
কুরআন পাঠের পদ্ধতি-
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কুরআন পঠনের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে তিনে বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন টেনে টেনে পড়তেন। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পাঠ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’টেনে পড়তেন; ‘আর রাহমান’ টেনে পড়তেন; ‘আর রাহিম’ টেনে পড়তেন।’ (বুখারি)
তিলাওয়াতের পরিমাণ-
সাহাবায়ে কেরাম আজমাঈন নির্দিষ্ট পরিমাণে রাতে এবং দিনে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। সাত দিনের কম সময়ে কেউ কুরআন খতম করতেন না। পাশাপাশি তিন দিনের কম সময়ে কুরআনের তিলাওয়াত খতমের ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাই কুরআনের তিলাওয়াত হতে হবে সুন্দরভাবে, সহিহ শুদ্ধভাবে; যে ভাবে তিলাওয়াত করলে কুরআনের হক আদায় হয়। কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে তাজবিদ এবং তারতিলের সহিত।
তিলাওয়াতকারীর প্রতি কুরআনে দাবি-
আমরা প্রতিদিন কুরআন কারিম তিলাওয়াত করি। কিন্তু এই কুরআন কেন নাজিল হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ আমাদের কি বলছেন। কিভাবে আমাদের জীবন-যাপন পরিচালনা করতে হবে। আরও অনেক বিষয়াবলী কুরআনে এসেছে যা আমাদের জানা নেই। তাই কুরআনের দাবি হচ্ছে- কুরআন বুঝে অধ্যায়ন করা। এবং কুরআন অনুযায়ী মানুষের জীবন গড়া। কেননা কুরআনের আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে মানুষ।
আসুন আমরা কুরআনের নির্দিষ্ট একটি অংশ তিলাওয়াত করি। যত ব্যস্তই থাকি না কেন, আমরা কুরআনের নির্ধারিত অংশ তিলাওয়াত এবং অধ্যয়নে সচেষ্ট হই। কেননা কল্যাণ কাজ যত অল্পই হোক নিয়মিতভাবে আদায় করলে অধিক ছাওয়াব পাওয়া যায়। আমরা কুরআনের তিলাওয়াত ছেড়ে দেব না। সুতরাং তিলাওয়াতের পাশাপাশি এক আয়াত পরিমাণ হোক আমরা নিয়মিত কুরআন অর্থসহ অধ্যয়ন করব। আল্লাহ আমাদেরকে উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে কুরআন তিলাওয়াত এবং অধ্যয়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।