‘কারাে দোষচর্চা করতে গিয়ে তার গুণগুলাে ভুলে যাবেন না’
ঝিনাইদহের চোখঃ
ড.মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আরিফী, আরব আলেম ও মুসলিম স্কলার
আমরা অনেকে এমন মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকি যাদের কেউ কেউ কোনাে অন্যায় করে বসে কিন্তু তার মধ্যে সামান্য হলেও ভালাে কোনাে গুণ থাকে। তাই আমরা যদি তার ভালাের দিকটা তুলে ধরি তা হবে উত্তম।
কথিত আছে, এক ডাকাতদল মানুষের বাসায় চুরি করত আর এই লুণ্ঠিত অর্থের কিছু গরিব-দুঃখী ও এতিমদের কল্যাণে ব্যয় করত! আর কিছু অংশ দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করত!
এমন অনেক মহিলার কথাও শুনে থাকবেন, যারা শুধু পেটের দায়ে পতিতাবৃত্তি করছে। অনেক অস্ত্রধারীও এমন রয়েছে যারা মানুষকে খুন করতে উদ্যত । কিন্তু ছােট একটি শিশু বা এক নারীর ভালােবাসায় তার হৃদয় বিগলিত হচ্ছে সে ছুড়ি ফেলে দিচ্ছে।
প্রত্যেক মানুষের বক্ষপিঞ্জরে একটি হৃদয় আছে। অনেক সময় তা গলে যায়। তার থেকে মায়া, মমতা আর ভালােবাসা ঝরে পড়ে। বস্তুত প্রত্যেক মানুষের মাঝে ভালাে গুণও আছে। সেই ভালাে গুণের ভিত্তিতেই তার সাথে আচরণ করুন।
প্রথমেই কারও প্রতি খারাপ ধারণা পােষণ করবেন না। আমাদের নবী মুহাম্মদ সা.-এর অপরাধীদের ওজর আপত্তি তালাশ করতেন। আর অন্যায়কারীদের প্রতিও ভালাে ধারনা রাখতেন।
কোনাে অপরাধীর মুখােমুখি হয়েও তার অন্যায় ও ভুলের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে প্রথমে তার ঈমানি অবস্থা লক্ষ্য করতেন। কারাে প্রতি খারাপ ধারনা পােষণ করতেন না। সবার সাথে এমন আচরণ করতেন যেন এরা তাঁর ছেলে বা ভাই। নিজের জন্য যেমন ভালােটা পছন্দ করতেন সবার জন্যই তেমন পছন্দ করতেন।
রাসূলুল্লাহ সা.-এর যুগে এক ব্যক্তি শয়তানের ধোঁকায় মদ পান করত । একবার মদ পান করা অবস্থায় তাকে রাসূল সুগ-এর কাছে আনা হলাে। তখন রাসূল -এর নির্দেশে তাকে শাস্তি দেয়া হলাে। কিছুদিন পর আবার মদ খেল। আবার আনা হলাে, আবার শাস্তি দেয়া হলাে ।
কিছুদিন যাওয়ার পর লােকটি আবার মদ খেল। আবার আনা হলাে ও শাস্তি দেয়া হলাে। কিছুদিন যাওয়ার পর লােকটি আবার মদ খেল। আবার আনা হলাে ও শাস্তি দেয়া হলাে।
এবার যখন লােকটি বের হয়ে যাচ্ছিল তখন এক সাহাবি নিয়ে বলে ওঠলেন , তার উপর আল্লাহর অভিশাপ হােক । একই কাজ সে আর কতবার করবে! হুজুর ও তার দিকে ফিরে তাকালেন (রাগে তার চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে গেছে) বললেন, “তাকে অভিশাপ দিয়াে না। আমি জানি সে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল -কে ভালােবাসে”। (বােখারী ও মুসলিম)
মানুষের সাথে আচার ব্যবহার করুন ন্যায়পরায়ণতার সাথে। তাদের ভালাে অভ্যাসগুলাে স্মরণ করুন। কারাে দোষচর্চা করতে গিয়ে তার গুণগুলাে ভুলে যাবেন না। তাদেরকে বুঝিয়ে দিন যে, আপনি তাদের ভালাে গুণগুলাের বিষয়ে সচেতন আছেন। তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে না।
মনে রাখুন, মানুষের ভেতরের মন্দ অভ্যাস সম্পর্কে বলার আগে তার ভালাে গুণটিকে স্মরণ করুন।