ঝিনাইদহে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, পরিবেশ হুমকির মুখে
ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের মাটিতে ক্রমাগত কমে যাচ্ছে প্রাকৃতিক ও জৈব সারের মাত্রা। কিন্তু রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের মাত্রা বেড়েছে। ফলে তা কৃষির জন্য যেমন হুমকি, তেমনি পরিবেশের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে জেলার ছয়টি উপজেলার জন্য বছরে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ টন রাসায়নিক সারের মধ্যে বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (বিসিআহসি) গত বছর ৫৯ হাজার ৯৪০ টন সরবরাহ করে। বাদবাকি সার ডিলাররা অন্যস্থান থেকে সংগ্রহ করে চাহিদা মেটান।
এছাড়া বছরে খরিপ-১, ২ ও ৩ এ তিনটি মৌসুমে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫১ টন জৈব সার কৃষকরা উৎপাদন করে থাকেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৫৮৯ টন কম্পোস্ট, ১ হাজার ৯৫০ টন খামারজাত সার, ৩১২ টন ভার্মি-কপোস্ট ও ১ লাখ ৮৬ হাজার টন সবুজ সার রয়েছে।
ঝিনাইদহের জমিতে যেহেতু ফসলের নিবিড়তা ২৫১.২ ভাগ, চাহিদার তুলনায় জৈব সার একবারেই অপ্রতুল। কৃষকদের জন্য অধিকহারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গবাদিপশু পালন জৈব সারের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিবেশবিদ মিজানুর রহমান বলেন, আগে কৃষকরা তাদের জমিতে শুধুমাত্র গোবরসার বা প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করতো। ১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিকে রাসায়নিক সার বাজারে এলে কৃষকদের তা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করা হয়। প্রায় শতভাগ কৃষক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ধারণা না থাকায় ওইসব রাসায়নিক প্রয়োগে তুলনামূলক ভালো ফল পাওয়ায় সেদিকে ঝুঁকে পড়ে। প্রায় সাত দশক ধরে রাসায়নিক ব্যবহারে একদিকে যেমন কৃষকরা রাসায়নিক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। এবং তারা কৃষিজমিতে গোবরসার প্রয়োগ প্রায় বন্ধ করে দেয়। আর গবাদিপশুর মলমূত্র জমিতে প্রয়োগের বদলে রান্নাঘরের জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়।
কৃষিবিদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৯০ দশকে পরিবেশ ও কৃষিকে রক্ষার জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি স্বোচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমেও জৈব সারকে উৎসাহিত করতে প্রকল্প নেয়া হয়। ওই সময় সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকারক রাসায়নিকের বিরুদ্ধে বলা যায় একপ্রকার আন্দোলনই শুরু হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরেও বেসরকারি স্বোচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে প্রায় প্রতিযোগিতা শুরু করলেও কোনো অজানা কারণে সরকারি ওই উদ্যোগ থেমে যায়।
সদর উপজেলার কামারকুণ্ডু গ্রামের গৃহবধূ মোমেনা খাতুন বলেন, তিনি নিজের বাড়ির চারটি গরুর গোবর থেকে ঘুটে বানিয়ে তা পারিবারের রান্নাবান্না বাদেও সাতশ’ থেকে আটশ’ টাকায় বিক্রি করেন। ওই ঘুটে দুটি পরিবারের রান্নায় ব্যবহৃত হয়। একটি পরিবারের রান্নায় ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকার ঘুটে লাগে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জিএম আব্দুর রউফ বলেন, জৈব সার তৈরির মাধ্যমে জমির উর্বরতা বাড়াতে কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কাজে সম্পৃক্ত করছেন। রাসায়নিক সারের সহজলভ্যতার কারণে এবং গবাদিপশুর সংকটের জন্য জৈব সার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।