অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হতে সাবধান!
ঝিনাইদহের চোখঃ
অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী বলতে এমন সাক্ষী বোঝানো হয়, যা ব্যক্তি হতে পৃথক হয় না। কিয়ামতের মাঠে আল্লাহ অবিচ্ছেদ্য সাক্ষীর মাধ্যমে মানুষকে অপরাধী প্রমাণ করবেন। আর এসব সাক্ষী হচ্ছে মানুষের হাত, পা, শরীর, কান, চোখ, ত্বক ইত্যাদি।
যেমন- মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “এদের মুখে মোহর মেরে দিব। এদের হাত কথা বলবে আমার সাথে এবং এদের পা সাক্ষ্য দিবে এদের কৃতকর্মের।” (সূরা ইয়াসিন- ৬৫)
আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে বলেন, “যে দিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে তাদের জবান, হাত, পা, তাদের কৃতকর্মের বিরুদ্ধে।” (সূরা নূর- ২৪)
আল্লাহ তাআলা বলেন, “যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে সেদিন তাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বিভিন্ন দলে। পরিশেষে যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছাবে তখন তাদের কর্ণ, চক্ষু, ত্বক (চামড়া) তাদের কুকর্ম সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিবে।” (সূরা ফুসসিলাত- ১৯, ২০)
আনাস রাঃ বলেন, আমরা রাসূল (সা.) এর কাছে ছিলাম, হঠাৎ তিনি হাসলেন। অতপর জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কি জানো আমি কেন হাসছি?” আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন। তিনি বললেন, “কিয়ামতের দিন বান্দা তার প্রভুর সাথে ঝগড়া করবে, সেই কথাটি স্বরণ করে হাসছি। বান্দা বলবে, হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে যুলুম হতে নিরাপত্তা দান করনি? আল্লাহ বলবেন, হ্যাঁ। তখন বান্দা বলবে, আজ আমি আমার সম্পর্কে আপনজন ব্যতীত আমার বিরুদ্ধে অন্য কারো সাক্ষী গ্রহন করব না। তখন আল্লাহ বলবেন, আজ তুমি নিজেই তোমার সাক্ষী হিসেবে এবং কিরামান-কাতিবীনের সাক্ষ্যই তোমার জন্য যথেষ্ট। অতপর আল্লাহ তাআলা তার মুখে মোহর লাগিয়ে দিবেন এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বলা হবে, তোমরা কখন কী কী কাজ করেছো বল। তখন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমূহ তাদের কৃতকর্মসমূহ প্রকাশ করে দিবে। তারপর তার মুখকে স্বাভাবিক অবস্থায় খুলে দেওয়া হবে। তখন বান্দা স্বীয় অঙ্গসমূহকে লক্ষ্য করে আক্ষেপের সাথে বলবে, হে দুর্ভাগা অঙ্গসমূহ! তোরা দূর হ, তোদের ধ্বংস হোক! তোদের জন্যই তো আমি আমার প্রভুর সাথে ঝগড়া করেছিলাম।” (মুসলিম, মিশকাত, হাঃ ৫৫৫৪)
উরু ও কাঁধের সাক্ষ্য প্রদান-
বাহয ইবনু হাকিম তার পিতার মধ্যস্থতায় বর্ণনা করেন, তার দাদা বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের মুখ বন্ধ করে ডাকা হবে, তখন সর্ব প্রথম তোমাদের উরু এবং কাঁধকে জিজ্ঞেস করা হবে। (ইবনু কাছির, হাঃ ৫৬৬৯)
আদী ইবনে হাতেম রাঃ বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সঙ্গে তার প্রভু কথাবার্তা বলবেন না। তার ও তার প্রভুর মধ্যে কোন দোভাষী এবং এমন কোনো পর্দা থাকবে না যা তাকে আড়াল করে রাখবে। সে তার ডানদিকে তাকাবে তখন পূর্বে প্রেরিত আমল ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। আবার বামে তাকাবে, তখনও পূর্বের প্রেরিত আমল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। আর সামনের দিকে তাকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না, যা একেবারে চেহারার সামনে অবস্থিত। সুতরাং খেজুর গাছের ছালের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম হতে বাঁচতে চেষ্টা কর। (বুখারী, মুসলিম)
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা কুমারপাড়া জামে মসজিদ, আড়াইহাজার নারায়ণগঞ্জ।