ধর্মহীন, নাস্তিকদের প্রতি আল্লাহর জিজ্ঞাসা
ঝিনাইদহের চোখঃ
মহান আল্লাহ তাআলা ধর্মহীন, নাস্তিকদের সামনে কিছু প্রশ্ন রেখেছেন যে, তোমরা কি নিজে নিজেই সৃষ্টির স্রষ্টা? কিংবা এ বিশাল মহাবিশ্ব তোমাদের তৈরি? এ সব কথার কোনটাই যদি সত্য না হয় আর তোমরা নিজেরাই স্বীকার কর যে, তোমাদের স্রষ্টা আল্লাহ আর মহাবিশ্বের স্রষ্টাও আল্লাহ, তাহলে যে ব্যক্তি (মুহাম্মদ সা.) তোমাদের বলেন, “সে আল্লাহই তোমাদের ইবাদত ও উপাসনা পাওয়ার অধিকারী” তখন সেই ব্যক্তির প্রতি এত রাগ কেন?
১) মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে? না তারা নিজেরাই স্রষ্টা। (সূরা তূর- ৫২/৩৫-৩৬)
ব্যাখ্যা- যুবাইর ইবনে মুতইম (রাঃ) বদর যুদ্ধের পূর্বে মুশরিক ছিলেন। তিনি বদর যুদ্ধের বন্দিদেরকে মুক্তিপণের মাধ্যমে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য নবী (সা.) এর নিকট মদিনায় এসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি যখন নবী (সা.) এর কাছে আসলাম তখন তিনি মাগরিবের সালাতে সূরা তূর পাঠ করছিলেন এবং তিনি যখন এই আয়াত পাঠ করছিলেন তখন তা শুনে আমার অন্তর ভয়ে উড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, সালাতের পরেই আমি নবী (সা.) এর কাছে গিয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় চলে আসি। (সহীহ মুসলিম ৩/৩৩৮, ৩৩৯, তাফসীর ইবনে কাসীর – ১৭/১২৭)
২) মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
(ক) আমিই তোমাদের কে সৃষ্টি করেছি, তা হলে কেন বিশ্বাস করছো না?
(খ) তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমরা যে বীর্যপাত কর সে সম্পর্কে? তা কি তোমরা সৃষ্টি কর না আমি তাঁর স্রষ্টা?
(গ) তোমরা আমাকে বল, তোমরা জমিনে যা বপন কর সে ব্যাপারে, তোমরা তা অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি?
(ঘ) তোমরা যে পানি পান কর সে ব্যাপারে আমাকে বল, বৃষ্টিভরা মেঘ থেকে তোমরা কি বর্ষণ কর না আমি বৃষ্টি বর্ষণ করি?
(ঙ) তোমরা যে আগুন জ্বালাও সে ব্যাপারে আমাকে বল, তোমরা কি এর (লাকড়ির গাছ বা খনিজ পদার্থ গ্যাস) উপাদান তৈরি কর না আমি করি? (সূরা ওয়াকিয়্যাহ- ৫৭, ৫৮, ৬৩, ৬৮, ৭১)
ব্যাখ্যা- আল্লাহ তাআলা কিয়ামত অস্বীকারকারীদেরকে নিরুত্তর করে দেওয়ার জন্য কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার এবং পুনরুজ্জীবিত করার দলিল পেশ করতে গিয়ে বলেন, প্রথমবার যখন আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তখন তোমরা কিছুই ছিলে না। লক্ষ্য কর! মানুষের বিশেষ পানি বিন্দু স্ত্রীর গর্ভাশয়ে পৌঁছে থাকে, ঐ বিন্দুকে মানবাকৃতিতে রূপান্তরিত করার কাজ কার? এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, এতে তোমাদের কোনো হাত নেই, কোনো ক্ষমতা নেই এবং কোনো চেষ্টার তদবীর নেই। এ কাজ তো শুধু প্রবল ক্ষমতার অধিকারী সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর। (তাফসীর ইবনে কাসীর-১৭/২৪৭-২৪৮)
আবু হুরাইরা আঃ বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা বল আমি বীজ বপন করেছি, একথা বলো না আমি অঙ্কুরিত করেছি। আবু হুরাইরা রাঃ বলেন, আমি একথা শুনার পর বলি তোমরা কি আল্লাহ তাআলার নিন্মোক্ত আয়াত শুনোনি “তোমরা কি বীজ অঙ্কুরিত কর না আমি অঙ্কুরিত করি?” (বাযযার, হা- ১২৮৯, তাফসীর ইবনে কাসীর- ১৭/২৫১)
কাতাদাহ্ ও আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা যে আগুন ব্যবহার কর নিশ্চই তা জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ। অতপর সেই আগুন মহাসমুদ্রের পানিতে দু’বার ধৌত করা হয়েছে যাতে উহা হতে তোমরা উপকার পেতে পার। (মুসনাদে আহমদ- ২/২৪৪, মুয়াত্তা মালেক- ২/৯৯৪, ফতহুল বারী -৬/৩৮০, তাফসীর ইবনে কাসীর – ১৭/২৫২-৫৩)
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।