প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সাড়ে ৬ বছর পার, ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতাল
রামিম হাসান
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সাড়ে ৬ বছর পার হয়েছে। সর্বশেষ ঝিনাইদহে এসে তিনি শিশু হাসপাতালটি উদ্ধোধন করেছিলেন। কিন্তু শুধুমাত্র লোকবল নিয়োগ না হওয়ার কারণে হাসপাতালটি এখন ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
২৫ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি শিশু হাসপাতাল, যেখানে পদভার থাকার কথা ছিল শিশু রোগী, অভিভাক কিংবা চিকিৎসকদের। কিন্তু সেই হাসপাতাল চত্বর এখন জঙ্গলে পরিনিত হয়েছে।
জেলা শহরের বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় তিন একর জমির উপর সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে ২০০৫ সালের জুন মাসে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। নির্মাণ শেষে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাসপাতাল ভবনটি হস্তান্তর করা হয় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। হাসপাতালটিতে রয়েছে ২৫ শয্যার মূল হাসপাতাল ভবন, চারটি আবাসিক ভবন। তারপর থেকে আর আলোর মুখ দেখেনি হাসপাতালটি।
২০০৮ সালে হাসপাতালের জন্য অধিদপ্তর থেকে অপারেশন থিয়েটার যন্ত্রাংশ, এক্স-রে মেশিন, ব্লাড ওয়ার্মারসহ চিকিৎসার জন্য প্রায় ২ কোটি টাকার মালামাল পাঠানো হয়, পাঠানো হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকার নানা ধরনের ফার্নিচার।
অযতেœ পড়ে থাকার পর ২০১৬ সালে অধিকাংশ যন্ত্র পুনরায় ফেরত পাঠানো হয়। আর শিশু হাসপাতালের ২টি এক্স-রে মেশিন, রেফ্রিজারেটর, এসি, ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতালে। সদর হাসপাতালে থাকা ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মুল্যের ৫০০এমএ এক্স-রে মেশিনটিও নষ্ট হয়ে গেছে।
হাসপাতালে স্থাপন করা একমাত্র কলটিও নষ্ট। ফলে নেই কোন পানির ব্যবস্থা। বিদ্যুতের পিলার ও তার টাঙানো হলেও দেওয়া হয়নি বিদ্যুত সংযোগ। ফলে অযত্ন অবহেলায় তা যত্রতত্র ভেঙে পড়ে আছে।
এ ভাবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় বন-জঙ্গলে ছেয়ে গেছে হাসপাতাল চত্বর। জঙ্গলের ঘনত্ব এত বেশি যে অন্যান্য ভবন গুলো চোখে পড়ে না। ভবনগুলো বেয়ে বেড়ে উঠছে লাতাপাতা। ফলে শিশু চিকিৎসার ক্ষেত্রে চরম বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। চালু না হওয়ার কারণে শিশু হাসপাতালের পরিবর্তে সদর হাসপাতালে শিশুদের নিয়ে আরেক দফা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এতে চরম ক্ষুদ্ধ তারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এত টাকা দিয়ে সরকার শিশু হাসপাতালটি নির্মাণ করল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা চালু হলো না। চালুই যদি করতে না পারলাম তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রতিষ্ঠানটি বানানোর কি দরকার ছিল?
তারা আরো বলেন, হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় শিশু রোগীদের নিয়ে আমাদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়। এটি চালু হলে আমাদের শিশুরা সঠিক চিকিৎসা পেত।
সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা সুলতানা জানান, পদসৃজনের পরও বেতন-ভাতা চালু না হওয়ায় লোকবল নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। অর্থনৈতিক বেতন-ভাতা চালু হলে লোকবল পদায়নের মাধ্যমে হাসপাতাল চালু করা সম্ভব হবে।
ঝিনাইদহ ২৫ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি শিশু হাসপাতালের জন্য ২০১৪ ও ২০১৬ সালে দুই ধাপে দুইজন শিশু বিশেষজ্ঞসহ পাঁচজন চিকিৎসক, ২১ জন নার্স, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ছয়জন এবং আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ৪র্থ শ্রেণির ১২ জন এর পদ সৃষ্টি হয়। সেই থেকে পদ সৃজন হলেও পদায়ন হয়নি কারও।
কয়েক বছর আগে কোন মতে ডেপুটেশনে একজন এমবিবিএস ডাক্তার, দুইজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ও একজন এমএলএসএসকে দিয়ে বহিঃবিভাগ চালু করা হলেও আদৌ হাসপাতালে যায় না এমবিবিএস ডাক্তার। কোনমতে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারকে দিয়ে প্রেসক্রিপশনেই সীমাবদ্ধ চিকিৎসা কার্যক্রম। শিশু হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ডেপুটেশনে দায়িত্ব পালন করা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার রোকসানা ওয়াজেদ রুপালী জানান, এখানে কোন ওষুধ দেওয়া হয় না। রোগী আসলে শুধু প্রেসক্রিপশন করে দিই।