অন্যান্য

কম খরচে ঘর সাজানোর কৌশল

ঝিনাইদহের চোখঃ

ঘর কি দিয়ে সাজালে ভালো লাগবে এই নিয়ে আমরা অনেক ভাবনা চিন্তা করি। দেখতে ভালোর পাশাপাশি যাতে একটু এলিগ্যান্ট লাগে সেটাও মাথায় রাখতে হয়। ঘর এমনভাবে সাজানো উচিৎ যাতে সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরলেও মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়।

চাইলেই একটু বুদ্ধি খাটিয়ে খুব কম খরচে এবং নতুন আঙ্গিকে নিজের ঘর সাজানো যায়। এর জন্য প্রয়োজন কিছু কৌশলের-

১. রঙের পরিবর্তন: ঘরকে আকর্ষণীয় করে তুলতে রং কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই ঘরের আকারকে প্রাধান্য দিয়ে রং নির্বাচন করুন। হালকা রং ব্যবহারে ঘরকে বড় দেখায় আর গাঢ় রং ঘরকে ছোট দেখায়। যদি নতুন করে রং করা সম্ভব না হয় তবে আগের রং ওপর আবার নতুন এক কৌটা রং লাগিয়ে নিন, দেখবেন ঘরের উজ্জ্বলতা বেড়ে গেছে।

২. সঠিক সোফা নির্বাচন করুন: সোফা ঘরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই বলে অনেক দামী সোফা দিয়ে ঘর সাজাতে হবে এমন কোন কথা নেই। আজকাল মেঝেতে বসার ব্যবস্থা বা ফ্লোরিং বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আপনি যদি ফ্লোরিং পছন্দ না করেন তবে বাঁশ কিংবা বেতের সোফা দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। অল্প খরচে অনেক সুন্দর বেতের সোফা কিনতে পাওয়া যায়।

৩. কুশন ব্যবহার: ঘর সাজাতে কুশন ব্যবহার করতে পারেন। রঙিন কুশনের ব্যবহার ঘরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। সোফার রঙ খুব সাধারণ অনুজ্জ্বল হলেও তার সঙ্গে রঙিন কুশন মানিয়ে যাবে সহজেই। যে কোনো একটি উজ্জ্বল রঙের কুশন সোফা ও বিছানায় রাখতে পারেন। আবার চার-পাঁচটি রঙ এর কুশন কভারও ব্যবহার করতে পারেন।

৪. গাছ ও ফুল: অন্যান্য ঘর সাজানোর জিনিসের তুলনায় ফুল এবং গাছ বেশ সস্তা। গাছ দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন বাসাটি। গাছ ঘরকে রঙিন ও জীবন্ত করে তুলবে। জানালার ধার ঘেঁষে লতানো গাছ লাগানো যেতে পারে। ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস না থাকলে গাছের বদলে রেখে দিতে পারেন একগুচ্ছ তাজা ফুল। ঘরের কোণে কয়েকটি তাজা ফুল রেখে দিলে নিমিষেই ঘর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বাগান করার সখ যাদের আছে, তারা পুরোনো বোতল কেটে, বা টিনের কৌটোয় অথবা কাচের ছোট জারে ছোট গাছ বা লতাগুল্ম এনে সাজাতে পারেন ঘরের ভেতরটা। বইয়ের তাকে, কিংবা জানালার কার্নিশে, টেবিলের ওপর বা আসবাবের পাশে অল্পস্বল্প সবুজের ছোঁয়া আপনার ঘরে নিয়ে আসবে সজীবতা।

৫. ল্যাম্প: অল্প খরচে ঘরে আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে চাইলে ল্যাম্পের জুড়ি মেলা ভার। ঘরের এক কোণে একটি রঙিন ল্যাম্প রেখে দিন। সেটা হতে পারে হলুদ, লাল, নীল, কমলা কিংবা সবুজ অথবা বেশ কিছু রঙের মিশ্রনে তৈরী। ঝুলানোর জন্যও বিশেষ কিছু ল্যাম্প পাওয়া যায়।

৬. রাস্তার পাশের দোকান থেকে কিনুন: সবসময় বড় দোকানগুলো থেকে যে শোপিস বা ঘর সাজানোর জিনিস কিনতে হবে এমন তো নয়। অনেক সময় রাস্তার পাশেও পেতে পারেন দারুন কিছু ঘর সাজানোর জিনিস। পথে আসা যাওয়ার সময় খেয়াল করুন রাস্তার দোকানগুলোকে। পেয়ে যেতে পারেন আপানার পছন্দের কোন ঘর সাজানোর উপকরণ।

৭. আসবাবপত্রের জায়গা পরিবর্তন: ঘরের আসবাবপত্রগুলোর জায়গা পরিবর্তন করে দেখতে পারেন কেমন লাগে ঘরটি। হয়তো দেখা যাবে আসবাবপত্রের জায়গা পরিবর্তনের ফলে ঘরটি আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে।

৮. সাজিয়ে রাখুন টুকিটাকি জিনিসপত্র: ঘরে নানা ধরনের টুকিটাকি জিনিসপত্র থাকে, যদি ঘরকে আরও সুন্দর দেখতে চান তাহলে টুকিটাকি জিনিসগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। সুন্দর করে গুছিয়ে রাখুন সব কিছু। দেখা যাবে অল্প কিছু পরিবর্তনের ফলে ঘর লাগছে আরও সুন্দর। ছোটবেলা থেকে আমরা কমবেশি সবাই কিছু না কিছু জমিয়েছি। ডাকটিকেট থেকে শুরু করে মার্বেল, স্বচ্ছ পাথর, ঝিনুক, রঙ্গিন বোতাম ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস কাঁচের জার বা বোলে করে সাজিয়ে রাখতে পারেন।

৯. বাতিল জিনিসের ব্যবহার: ঘরে ভিন্নতা আনতে ব্যববার করতে পারেন ফেলে দেওয়া বাতিল জিনিসপত্র। অনলাইনে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে বাতিল জিনিস দিয়েও বানিয়ে ফেলতে পারেন সুন্দর সব শোপিস।

১০. ফ্রেমে ফ্রেমে বৈচিত্র্য: কত ছবি অ্যালবামে পড়ে থাকে দিনের পর দিন। ছবিগুলো অল্প খরচে বাঁধাই করে নিন, খোলা দেয়ালে মনের মত সাজান। ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি আপনার স্মৃতিময় হাস্যোজ্জ্বল মুহূর্তগুলো আপনার ঘরকে রাঙ্গিয়ে রাখবে। এছাড়াও আপনার হাতে করা কোনো শিল্প, কিংবা ক্যালেন্ডারের পাতায় পছন্দের কোনো ছবি, ম্যাগাজিন-কাটিং অথবা সুন্দর র‍্যাপিং পেপার ফ্রেমে বাধিয়ে দেয়ালে ঝোলাতে পারেন। ছোট বড় ফ্রেম দিয়ে সাজানো দেয়াল আপনার রুচিশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।

১১. আয়না কেবল সাজসজ্জার জন্য নয়: ড্রেসিং টেবিল ছাড়াও ঘরে রুচিশীল আয়নার ব্যবহার ঘরে আনতে পারে নতুন মাত্রা। দেয়ালজোড়া আয়না যেমন ঘরের আকার বড় দেখাতে ও আলোকিত করতে সাহায্য করে, তেমন আকর্ষণীয় ফ্রেমের ও ডিজাইনের আয়না রুমের শোভা বাড়াতে পারে বহুগুনে। বাজারে ও অনলাইনে কম খরচে সুন্দর যেসব আয়না পাওয়া যায়, সেগুলো কিনে ঘরের দেয়ালে মনের মত সাজাতে পারেন।

ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে একটু বুদ্ধি আর সৃজনশীলতা অনেক সময় আপনার ব্যক্তিত্ব আর রুচির পরিপূরক হয়ে উঠতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button