ধর্ম ও জীবন

মূল জামাতের সময়ের পর নামাজ আদায় করার নিয়ম

ঝিনাইদহের চোখঃ

মূল জামাতের সময় পার হয়ে গেলে পরে একাকী বা জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করলে ইকামত দিতে হবে। নতুন করে ইকামত না দেওয়ার যে নিয়ম আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে তা সঠিক নয়, বরং মূল জামাত ছুটে গেলে ইকামত দিয়ে নামাজ আদায় করা সুন্নত।

১. উকবা ইবনু আমির রাঃ. বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, তোমার রব সেই ব্যক্তির উপর খুশি হন যে পাহাড়ের উচ্চ শৃঙ্গে বকরী চরায় এবং নামাজের জন্য আযান (ইকামত) দেয় ও নামাজ আদায় করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আমার ঐ বান্দাকে দেখ, সে আযান দিচ্ছে এবং নামাজ আদায় করছে ও আমাকে ভয় করছে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম। (সূনানে নাসায়ী, হা- ২৬/৬৬৭, সহীহ)

২. জাবের রাঃ. বলেন, রাসূল (সা.) সফর করে যখন আরাফাতে আসলেন এবং “নামিরা” নামক স্থানে একটি তাবু স্থাপন করা হয়েছে তা দেখতে পেলেন, তখন তিনি সেখানে অবতরণ করলেন। যখন সূর্য ঢলে পড়ল তখন তাঁর নির্দেশে “কাসওয়া” নামক উটনীর পিঠে হাওদা লাগানো হল। তারপর যখন “বাতনুল ওয়াদী” তে পৌঁছলেন, সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষন দিলেন।

তারপর বেলাল রাঃ. আযান ও ইকামত দিলেন। তিনি জোহরের নামাজ আদায় করলেন। পুনরায় ইকামত বলার পর আসরের নামাজ আদায় করলেন এবং দুই নামাজের মধ্যে কোনো নামাজ আদায় করেননি। (সূনানে নাসায়ী, হা- ৪৮/৬০৫, ৬৫৬, সহীহ)

৩. আবু মারইয়াম রাঃ বলেন, একবার আমরা রাসূল (সা.) এর সাথে সারারাত সফর করলাম। পরে রাতের শেষাংশে ফজরের নিকটবর্তী সময়ে রাসূল (সা.) এক স্থানে অবতরণ করলেন এবং কিছুক্ষণ পরই ঘুমিয়ে পড়লেন। তাঁর সঙ্গীগণও ঘুমিয়ে পড়লেন। সূর্যের আলোকরশ্মি স্পর্শ না করা পর্যন্ত কেউই জাগ্রত হলেন না।

পরে রাসূল (সা.) মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে আদেশ করলেন। মুয়াজ্জিন আযান দিলে তিনি দুই রাকাত ফযরের সুন্নত নামাজ আদায় করলেন। আবার ইকামত বললে তিনি সাহাবীদের নিয়ে ফজরের ফরয নামাজ আদায় করলেন। (সূনানে নাসায়ী, হা- ৫৫/৬২২, সহীহ)

৪. আবু সাঈদ রাঃ. বলেন, খন্দকের যুদ্ধের সময় মুশরিকরা আমাদেরকে জোহরের নামাজ থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত নামাজ পড়া হতে বিরত রেখেছিল। এটা যুদ্ধের সময় “সালাতুল খওফ” সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের ঘটনা।

তারপর রাসূল (সা.) বেলাল রাঃ. কে ইকামত দেওয়ার আদেশ করেন। তিনি জোহরের নামাজের ইকামত দেন। নবী (সা.) জোহরের আসল ওয়াক্ত আদায় করার ন্যায় জোহরের ফরয নামাজ আদায় করেন। পরে আসরের জন্য ইকামত বলা হয়। নবী (সা.) তখন আসরের আসল ওয়াক্তে আদায় করার ন্যায় আসরের ফরয নামাজ আদায় করেন। তারপর মাগরিবের আযান দেওয়া হয় এবং তা নির্ধারিত সময়ে আদায় করার ন্যায় মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। (সূনানে নাসায়ী, হা-২১/৬৬২, সহীহ)

৫. সালামা ইবনুল আকওয়া রাঃ. বলেন, তিনি সকলের সাথে জামাতে নামাজ না পেলে একাকী আজান ও ইকামত দিয়ে নামাজ পড়তেন। (সূনানে আদ-দারাকুতনী, হা- ৭/৯০৮, মওকুফ)

উপরে উল্লেখিত হাদিসসমূহ দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, মূল জামাত ছুটে গেলে একাকী বা জামাত বদ্ধভাবে নামাজ আদায়কালে ইকামত দিতে হবে। কেননা সুন্নত ও ফরয নামাজকে পৃথক করার জন্য ইকামত দেওয়া আবশ্যক। তাই মূল জামাত ছুটে গেলে সেই নামাজ পরবর্তী সময়ে আদায়কালে ইকামত দেওয়া সুন্নত।

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button