কতিপয় বিশেষ আজান
ঝিনাইদহের চোখঃ
১. সন্তান ভুমিষ্ট হলে আজান-
আবু রাফে’ রাঃ. বলেন, রাসূল (সা.) কে দেখেছি, ফাতেমাতুজ্জোহরা রাঃ. হাসান বিন আলীকে প্রসব করলে রাসূল (সা.) তাঁর নাতিী (হাসান) কানে নামাজের আজান দিলেন। (সহীহুল জামে, হা- ৫৮৮১)
পক্ষান্তরে ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দিলে রাত কানা রোগ ক্ষতি করতে পারে না- এ হাদীসটি জঈফ বা আমল অযোগ্য । (সিলসিলাযয়ীফাহ, হা- ৩২১)
সুতরাং নবজাতক ছেলে-মেয়ে উভয়ের উভয় কানে আজান দেওয়া রাসূল (সা.) এর সুন্নাত। বর্তমানে সুন্নাতের নিয়ম বির্সজন দিয়ে মন গড়া নিয়ম পালন করা হচ্ছে।
২. জিন ভূতের ভয়ে আজান-
সুহাইল রাঃ. বলেন, একবার আমার আব্বা আমাকে বনি হারেসায় পাঠান, আমার সাথে এক বালক সঙ্গী ছিল। এক বাগান হতে কে যেন তার নাম ধরে আমার সঙ্গীকে ডাক দিল, আমার সঙ্গী বাগানে খুঁজে দেখল। কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। ফিরে এসে আমার আব্বার কাছে সে ঘটনা উল্লেখ করলাম।
আব্বা বললেন, যদি জানতাম যে তুমি এই দেখতে পাবে, তাহলে তোমাকে পাঠতাম না। তবে শোন! যখন এই ধরনের কোন শব্দ শুনবে তখন নামাযের মত আজান দিও। কারণ আমি আবু হুরায়রা রাঃ. কে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, যখন নামাজের আজান দেওয়া হয় তখন শয়তান (জিন) বায়ু ছাড়তে ছাড়তে তাড়াতাড়ি পালিয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম, হা-৭৪৪-১৮/৩৮৯) শয়তান (জিন-ভূত) মানুষকে ভয় দেখায়, ভয় না পেয়ে আজান দিলে শয়তায় (জিন বা ভূত) পালিয়ে যায়।
৩. ঝড় বৃষ্টির সময় আযানের বিশেষ শব্দ-
ঝড়-বৃষ্টি বা অতিরিক্ত ঠান্ডা ও কুয়াশার সময় মসজিদে আসতে কষ্ট হলে মুআজ্জিন আজানে নিন্ম লিখিত শব্দ অতিরিক্ত বলবে- হাইয়্যা আলাস স্বলাহ্ ও হাইয়্যা আলাল ফালাহ্ এর পরিবর্তে- স্বল্লু ফী বুয়ূতিকুম, অর্থাৎ তোমরা বাড়ীতে নামাজ পড়। (সহীহ মুসলিম, হাঃ-১৪৮৯-২৬/৬৯৯)
অথবা যথানিয়মে আজান দেওয়া শেষে বলবে-
ক. আলা স্বল্লু ফী রিহাল, অর্থাৎ ‘তোমরা যার যার অবস্থান স্থলেই নামাজ আদায় করে নাও। (সহীহ মুসলিম, হা-১৪৮৭-২৪/৬৯৭)
খ. আলা স্বল্লু ফী রিহালিকুম, অর্থাৎ শোন! তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে নামাজ আদায় করে নাও। (সহীম মুসলিম, হাঃ- ১৪৮৬-২৩/৬৯৭)
৪. সেহরির আজান-
ইবনে উমার রাঃ. বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, বিলাল রাত থাকতে আজান দেয়। তাই তোমরা খাওয়া দাওয়া করতে থাকবে। ইবনে উমার রাঃ. বলেন, ইবনে উম্মে মাকতুম রাঃ. অন্ধ ছিলেন। “ভোর হয়েছে”, “ভোর হয়েছে” তাকে এ কথা না বলা পর্যন্ত তিনি ফজরের আজান দিতেন না। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত, হা- ৬৮০)
ফজরের পূর্বে তাহাজ্জুদ ও সেহরির আজান মহানবী (সা.) এর যুগ হতে প্রচলিত আছে এবং আজও সেই সুন্নত মক্কা মদীনাসহ সৌদি আরবের সকল স্থানে সেহরির ঐ আজান শুনতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে রমজানে। আমাদের দেশেও কিছু মসজিদে ঐ আজান রমজান মাসে শোনা যায়। বাকি সকল মসজিদে ঐ আজান প্রদানের সুন্নাত নিয়মকে বর্জন করে কুরআন তেলাওয়াত ও গজল নামক হামদ নাতের শব্দ শোনা যায়। সুতরাং নিঃসন্দেহ বলা যায় যে, সুন্নতের জায়গায় দখল করেছে মন গড়া বিধান।
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।