‘আখেরি চাহার শোম্বা’ এবং আমাদের যত ভুল ধারণা
ঝিনাইদহের চোখঃ
‘আখেরি চাহার শোম্বা’র আগমন ঘটেছে আরবি ও ফারসি শব্দযুগল থেকে। এর আরবি অংশ আখেরি, যার অর্থ ‘শেষ’। ফারসি অংশ শোম্বা, যার অর্থ ‘মাসের ৪র্থ বুধবার’। ২৩ হিজরির শুরুতে মহানবী (সা.) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২৮শে সফর বুধবার মহানবী (সা.) সুস্থতাবোধ করেন।
এ দিনটিকে প্রতি বছর ‘‘শুকরিয়া দিবস” হিসেবে পালন করা হয়। আর এ দিনটিকেই আমাদের উপমহাদেশে “আখেরি চাহার শোম্বা” বলা হয়। অসুস্থ অবস্থাতেই ইন্তেকালের কয়েকদিন পূর্বে তিনি গোসল করেছিলেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
আয়েশা রাঃ. বলেন, রাসূল (সা.) যখন আমার ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেলে তিনি বললেন, তোমরা আমার ওপর ৭ মশক পানি ঢালো, যেন আমি আরাম বোধ করি এবং লোকদের মাঝে গিয়ে উপদেশ দিতে পারি। তখন আমরা এভাবে তাঁর দেহে পানি ঢাললাম। এর পর তিনি মানুষের কাছে বেরিয়ে যেয়ে তাদেরকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন এবং তাদেরকে উপদেশ প্রদান করলেন। (সহীহ বুখারী-৪/১৬১৪, ৫/২১৬১)
এখানে সুস্পষ্ট যে, রাসূল (সা.) তাঁর অসুস্থতার মধ্যেই অসুস্থতা ও জ্বরের প্রকোপ কমানোর জন্য ঐ ভাবে গোসল করেন এবং মসজিদে গিয়ে সবাইকে নিয়ে নামাজ আদায় করে প্রয়োজনীয় উপদেশ প্রদান করেন। এই গোসল করার ঘটনাটি কত তারিখে, কী বারে ঘটেছিল তা হাদীসের কোনো বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
যেহেতু, মূল ঘটনাটি তারিখসহ প্রমাণিত নয়, সেহেতু সে ঘটনাটির উদযাপন করার প্রশ্নই উঠে না। এর পরেও আামদের বুঝতে হবে যে, কোনো আনন্দের বা দুঃখের ঘটনায় আনন্দিত বা দুঃখিত হওয়া এক কথা নয়। আর প্রতি বছর সেদিনের আনন্দের বা দুঃখ প্রকাশ করা বা “আনন্দ দিবস” বা “শোক দিবস” উদযাপন করা ভিন্নকথা। রাসূল (সা.) এর জীবনে অনেক আনন্দের দিন বা মূহুর্ত এসেছে। যখন তিনি অত্যান্ত আনন্দিত হয়েছেন তখন শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য আল্লাহর দরবারে সেজদা করেছেন ও বিভিন্নভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পরের বছর বা পরবর্তী বছর কোনো সময়, কোনো দিন বা মুহূর্তকে বাৎসরিক আনন্দ দিবস হিসেবে উদযাপন করেননি।
এ জন্য রাসূল (সা.) এর নির্দেশ বা সাহাবিদের কর্ম ছাড়া এরূপ কোনো দিন বা মুহূর্তকে দিবস হিসেবে পালন করা বা এগুলোকে বিশেষ ইবাদত, বিশেষ নেকির কারণ বলে মনে করার কোনো সুযোগ নেই।
এ জন্য ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী রা. তার গ্রন্থে লিখেছেন যে, সফর মাসের শেষ বুধবার বা আখেরি চাহার শোম্বায় যে বিশেষ নফল নামায, বিশেষ কিছু সূরা, আয়াত ও দো’আ পাঠ এবং দান খয়রাতের মাধ্যমে আদায় করা হয় তা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। (আল্লামা আব্দুল হাই লাখনাবী, কিতাবুল আসার- ১১১ পৃঃ)
তাই সফর মাসের শেষ বুধবার বা আখেরি চাহার শোম্বায় কোনো প্রকার বিশেষ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এদিনে বিশেষ কোনো নেকি বা বরকত লাভ করা যাবে বলে ধারণা করা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা।
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতিব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।