ধর্ম ও জীবন

জুহদ বা দুনিয়া বিমুখতা (শেষ পর্ব)

ঝিনাইদহের চোখঃ

এখন আমরা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের প্রতি দৃষ্টিপাত করব তাঁর দুনিয়া বিমুখতার প্রতি অভিমত বা তিনি দুনিয়া বিমুখী হিসেবে কেমন ছিলেন।

১. মুগীরা বিন শোবা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (সা.) দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ সালাত আদায় করার কারণে উভয় পা ফুলে যায় এমন কী পা ফেটেও যায়। তাই আমি রাসূলকে জিজ্ঞাসা করলাম আল্লাহ কি আপনার পূর্বের এবং পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেননি? তিনি বললেন আমি কি আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপনকারী বান্দা হব না? (বুখারী হাঃ৪৪৫৯)

২. একদা রাসূল (সা.) চাটাইয়ের উপর শুয়ে ছিলেন এমন কী তার শরীরের চাটাইয়ের দাগ বসে গেল। তখন আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসূল!আমরা যদি আপনার জন্যে নরম বিছানার ব্যাবস্থা করে দেই? তখন তিনি বললেন দুনিয়ার সাথে আমার কী সম্পর্ক? আমিতো কেবলমাত্র একজন আরোহী যে একটা গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিল আবার কিছুক্ষণ পর তার গন্তব্যে চলে যাবে। (তিরমিযী হা : ২২৯৯)

৩. উমার (রা.) থেকে বর্ণিত আমি একবার রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রবেশ করে তাঁর শরীরে চাটাইয়ের চিহ্ন দেখতে পেলাম এবং একটা পাত্রে এক সা'(দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম) যব দেখতে পেলাম। তখন আমার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল তখন বলল হে ওমার তুমি কান্না করছ কেন?

তখন আমি বললাম আমি কান্না করব না কেন? আপনার খাবারের পাত্র এমন আর কাসরা ও কিসরা শাষকদের ফুলমূলে পূর্ণ, অথচ আপনি হলেন আল্লাহর রাসূল। তখন তিনি বললেন, হে ওমার এই দুনিয়াটা হচ্ছে তাদের জন্য আর আখেরাতটা আমাদের জন্য। (সহিহ মুসলিম, হা- ২৭৬৪)

৪. ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্নিত রাসূল (সা.) বলেন দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহর নিকট মশার ডানা পরিমাণও হতো তাহলেও তিনি কাফেরদের এক ঢোক পানি পান করারও সুযোগ দিতেন না। (তিরমিযী হা- ২৩২০)

৫. জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একবার রাসূল (সা.) একটা মৃত কাটা কানবিশিষ্ট ছাগলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি ছাগলের কাটা কান ধরে সাহাবাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, তোমাদের মাঝে কেউ কি এটা এক দিরহাম দিয়ে কিনবে? তখন আমরা বললাম- হে আল্লাহর রাসূল, এটা কে এক দিরহাম দিয়ে কিনবে? এটাতো এমনিই মৃত, তার ওপর কান কাটা। তখন তিনি বললেন তোমাদের কেউ বিনামূল্যে নিবে? তখন আমরা একই কথা বললাম তখন রাসূল (সা.) বললেন, তোমাদের নিকট যেমন এটা মূল্যহীন। ঠিক আল্লাহর নিকটও এই পৃথিবী তারচেয়ে বেশি মূল্যহীন। (সহিহ মুসলিম, হা- ২৯৫৭)

উল্লেখিত আয়াত এবং হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে এই পৃথিবীটা খুবই নগণ্য, যার মূল্য আল্লাহর নিকট নেই। রাসূলের নিকটও নেই অথচ আমরা এর জন্যই মারা-মারি, হানা-হানি, কাটা-কাটি, আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলছি। তাইতো প্রতিটি মানুষের জীবনে দুনিয়া বিমুখতা অপরিহার্য।

তাহলে সমাজে পৃথিবীর সকল স্থানেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করবে, যেমনটা রাসূলের যুগে করেছিল। তাই চলুন আমরা অর্থহীন ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্য সব নষ্ট না করে স্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তত হই। আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করুন (আমিন)।

লেখক : রাসেল আহমাদ বিন জাকির হুসাইন, দাওরা হাদীস (আল জামিয়া আস-সালাফিয়্যাহ)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button