খোকা কবে শুনবি বল? — গুলজার হোসেন গরিব

ঝিনাইদহের চোখঃ
খোকা কবে শুনবি বল আমার ডাক?
হতবাক হই রে তোর আচারাচারে,
এখনো তোর হুঁশ হলোনা
এখনো তুই বুঝতে চাসনে
বোঝার চেষ্টাও করিস নে।
দিনরাত কষ্ট করেছি খেয়ে না খেয়ে,
স্বপ্ন দেখেছি তোকে নিয়ে।
ছবি এঁকেছি মনে মনে মনের গহীনে,
বড় হবি মস্ত বড় হবি স্বপ্নের চাইতে বড়
এতো বড় হবি!লক্ষ কোটি যুগ মানুষ জন্মলেও
তোর ধারে কাছে কেউ আসতে পারবে না।
তুই যখন পেটে ছিলি,তখন থেকেই
স্বপ্নের জাল বুনেছি,তোকে নিয়ে।
তুই পেটে দুষ্টুমি করতিস
পেটে হাত রেখে তোর দুষ্টুমি অনুভব করতাম
তোর সুন্দর জীবনের প্রার্থনা করতাম।
প্রতিদিন অনেক নাম রাখতাম
তোর বাবা দিনশেষে কাজ করে বাড়ি ফিরে এলে
তোর নাম শোনাতাম ক্লান্ত মানুষটি
মিষ্টি হাসি দিয়ে বলতেন,বাহ!সুন্দর নাম।
পেটে হাত বুলিয়ে তোকে আদর করতাম
কতো রকমে ভালোবাসতাম।
তুই যখন পৃথিবীতে আসবি তখন মনে হচ্ছিলো
আমি আর বাঁচবো না রে
সে যে কি কষ্ট-যন্ত্রনা মা ছাড়া কেউ জানেনা।
তুই জন্মালি, কী সুন্দর তোর তুলতুলে নরম দেহ!
আমি সব ব্যথা ভুলে বুকে তুলে নিলাম।
বুকের দুধ খেতে দিলাম,চুকচুক করে খাচ্ছিলি!
তুইতো দুধ ছাড়া কিছু খেতে পারবিনা জানি।
তোর চোখে চোখ রেখে শুরু হলো কথোপকথন
বুঝবি না তাও অনেক কথা বলতাম।
দিন গড়াতে গড়াতে তুই এখন বেশ বড়
হাটতে শিখেছিস কথাবলা শিখেছিস
স্কুলে যেতে শিখেছিস উচ্চ শিক্ষিত হয়েছিস
ভালো চাকুরী পেয়েছিস অনেক বন্ধুও হয়েছে তোর
অনেকের সাথে কথা বলিস তাদের কথাও বুঝিস
এখন বুঝি আমাকেই শুধু বুঝতে চাসনে।
খোকা তোর মনে নেই, ভুলে গেছিস বুঝি,
একমাত্র আমি ছিলাম তোর কাছের বন্ধু
যত্নের মানুষ।
আজ তুই অনেক বড় অনেক সুনাম তোর
দামী বাড়িতে থাকিস দামী গাড়িতে চড়িস
আমার স্বপ্নে দেখা রাজপুত্রের মতো।
তুই বড় হবার পর আজ দূরত্ব বেড়েছে আমাদের
তুই থাকিস শহরে আর আমি থাকি গ্রামে
একদম একলা বাড়ি আমি ছাড়া কেউ নেই।
গত দুবছর হলো তোর বাবা মারা গেছেন
চাকুরীর ব্যস্ততায় আসতেও পারিস নি তুই।
মানুষটাকে একটু মাটি দিতে,
যে মানুষটা তোর জন্য দিনেরপরদিন
অক্লান্ত কাজ করে গেছেন সারাজীবন।
খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোকে আসবি খোকা?
একলা ঘরে আর ভালো লাগছে না
খোকা জানিস না তোর বাবা মরার পর
আমি কতো একা!কতো কষ্টে কাটে জীবন
আয় খোকা আয় নিয়ে যা আমাকে।
আমি এখনো রান্না করতে ঘর মুছতে পারি
কাপড়-চোপড় ধুইতে পারি।
শুনেছি তোরা না কি কাজের বুয়া রেখেছিস
আমাকে না হয় কাজের বুয়া করেই কাছে রাখ
তবুও তো প্রতিদিন দেখতে পাবো তোকে
আমার নাড় ছেঁড়া ধন আমার খোকা কে।