আইয়ুব বাচ্চুর দেয়া গিটার আজও আগলে রেখেছেন তার গুরু
মৃত্যুর কোনো নীতিমালা নেই। থাকলে হয়তো বাবার আগে পুত্রের মৃত্যু হতো না, গুরুর আগে শিষ্যের মৃত্যু হতো না। মানুষ এই নীতি তৈরি করে নিতো। কিন্তু জন্মের মতোই মৃত্যুর বিষয়েও একমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী স্রষ্টা।
তিনি যখন যাকে খুশি জন্ম দেন, যাকে খুশি মৃত্যু দান করেন। সেখানে কোনো সিরিয়াল মেইনটেইনের বিষয় নেই। সেখানে কোনো অনুরোধ-অনুনয়ের সুযোগ নেই। তাই যুগে যুগে পিতার কাঁধেও বয়েছে পুত্রের লাশ। মৃত কন্যার গোসল দিয়েছে জন্মধারিনী মা। এগুলো বেদনার, কিন্তু মৃত্যুর মতো অমোঘ সত্যের বাস্তবতাও বটে।
সেই বাস্তবতার খেয়ালে গুরু আজও আছেন, চলে গেছেন শিষ্য। সেই শিষ্যের স্মৃতি বুকে নিয়ে তিনি কাঁদছেন, দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। গর্বও করছেন শিষ্যের জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা দেখে। সেই শিষ্যের নাম আইয়ুব বাচ্চু। গিটার হাতে যিনি এলআরবি’র হয়ে দুনিয়া মাতিয়েছেন।
আর গুরুর নাম জ্যাকব ডায়াস। চট্টগ্রামের ছেলে আইয়ুব বাচ্চু। ব্যান্ডের জগতে হাতেখড়িও তার সেই বন্দরনগরীতেই। চট্টগ্রামের প্রথম ব্যান্ড দল স্পাইডারের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাকব ডায়াসের কাছে নিয়েছিলেন গিটারের শিক্ষা। যে শিক্ষা সুবাস ছড়িয়েছে বিশ্বময়। যে শিক্ষা গুরুকে করেছে গর্বিত।
জ্যাকব ডায়াসের কাছে গিটার শিখেছিলেন বাচ্চু। ১৯৮৯ সালে স্পাইডার ব্যান্ড দল গঠিত হলে সেই দলের হয়ে গিটার বাজিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। স্পাইডারের পর সোলসে যোগ দেন। এরপর ১৯৯১ সালে নিজের দল এলআরবি গড়ে তোলেন।
খ্যাতি আর জনপ্রিয়তায় গুরুকে ভুলে যাননি আইয়ুব বাচ্চু। ভালোবেসে গুরুকে নিজের একটি গিটার উপহার দিয়েছিলেন তিনি। সেই গিটার আজও আগলে রেখেছেন তিনি। জ্যাকব থাকেন চট্টগ্রামেই। প্রিয় মানুষটির মৃত্যুর খবর শুনে হতবাক হয়ে গেছেন। এসেছিলেন বাচ্চুর জানাজায়ও। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার আগে ও চলে গেলো। খুব কষ্ট পেয়েছি। ওর মৃত্যু ওকে যেন আরও বেশি জনপ্রিয় করে দিলো। আমি এখন থেকে বাচ্চুর ছবি আমার বুকপকেটে রাখবো।’
তিনি বলেন, ‘বাচ্চু যে গিটার দিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো সেটি সে ‘স্পাইডার’ ব্যান্ড দলকে উপহার দিয়েছিলো। একদম কাগজ করে লিখে দিয়েছে। সেটি এখনো আছে আমার কাছে। খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছি আমি। এই গিটার আমাকে কষ্ট দেবে, আনন্দও দেবে।’