ধর্ম ও জীবন

জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদায় ইসলাম যা বলে

জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। তবে এ সম্পর্কিত হাদিস তুলে ধরার আগে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্য একটি হাদিস তুলে ধরতে চাই। যে হাদিসটি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন সেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘মানুষ যখন মারা যায় তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল ছাড়া। আর তাহলো যথাক্রমে সাদকায়ে জারিয়াহ, এমন ইলম বা জ্ঞান; যা দ্বারা উপকৃত হয়, এমন নেক সন্তান যে তাদের জন্য দোয়া করে।’

উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বলা যায়, সাদকায়ে জারিয়াহ কী তা জানতে জ্ঞানার্জন আবশ্যক। আবার মানুষের উপকার হয় এমন জ্ঞান দানের জন্য জ্ঞানার্জন জরুরি। আর পিতামাতার জন্য দোয়া করবে এমন নেক সন্তানও তৈরি হবে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে। সুতরাং জ্ঞানার্জনের গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব তুলে ধরে অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। হাদিসে এসেছে-

– হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেন।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)

জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে যারা জ্ঞানার্জন করে কিংবা যারা কল্যাণকর জ্ঞানদান করেন তাদের জন্য রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। প্রিয়নবি হাদিসে তাও বর্ণনা করেছেন-

– হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শুধু কল্যাণকর ইলম (জ্ঞান) শিক্ষার জন্য কিংবা শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে সকাল বেলা মসজিদে যায়, তার জন্য এমন একজন হাজির সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। যিনি তার হজকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করেছেন।’ (তাবারানি, তারগিব)

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমার এ মসজিদে আসলো; তার উদ্দেশ্যটা যদি শুধু কল্যাণকর ইলম (জ্ঞান) শেখা কিংবা শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে তার মর্যাদা আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের স্থানে।’ (ইবনে মাজাহ)

সর্বোপরি কথা হলো, যারা জ্ঞানার্জনের পথে বের হয় তারা উভয় জগতেই সফলকাম। দুনিয়াতে তাদের জন্য রহমত কল্যাণ ও মাগফেরাতের দোয়া করা হয়। আর পরকালের কল্যাণতো সুনির্ধারিত। হাদিসে এসেছে-

– হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অর্জনের পথে চলে, আল্লাহর এর দ্বারা তাকে জান্নাতে পৌছে দেবেন। ফেরেশতারা ইলম অর্জনকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা পেতে দেন। অনন্তর আলেমদের জন্য আসমান-জমিনের সব প্রাণী ক্ষমা প্রার্থনা করে এমনকি পানির জগতের মাছসমূহও।

সব নক্ষত্ররাজির ওপর পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা যেমন প্রাধান্য, ঠিক তেমনি (সাধারণ) আবেদের ওপর (ইলম অর্জনকারী) আলেমদের মর্যাদা তেমন। আলেমগণ নবিদের ওয়ারিশ। আর নবিগণ কোনো দিনার বা দিরহাম উত্তরাধিকার রেখে যাননি। বরং তারা মিরাস হিসেবে রেখে গেছেন ইলম বা জ্ঞান। সুতরাং যে ইলম (জ্ঞান) অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ লাভ করেছে।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইলমে দ্বীন শেখার এবং শিক্ষা দেয়ার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button