সাক্ষাৎকার

৭০-এর অধিক এমপি বাদ পড়বেন

অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভাইস চেয়ারম্যানও তিনি।

‘আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক সংসদ সদস্যকে এবারের নির্বাচনে বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী দেয়া’ এবং ‘দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই যথাসময়ে নির্বাচন হবে’ বলেও উল্লেখ করেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।

তাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় শতাধিক সংসদ সদস্য ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে পর্যালোচনা হয়েছে। আপনিও ছিলেন সভায়। আসলে কী আলোচনা হলো?

 

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : মূলত কার্যনির্বাহী সভায় আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংসদ সদস্যদের কার অবস্থান কী পর্যায়ে আছে, তা-ই পর্যালোচনা হয়েছে।

অর্ধশতাধিক এমপি মনোনয়নবঞ্চিত হবেন। প্রধানমন্ত্রী এমনটিই ইঙ্গিত দিয়েছেন

সভায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তার কাছে নানা উৎস থেকে তথ্য এসেছে। দলীয় উৎস, গোয়েন্দা তথ্য, গণমাধ্যম, তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন তথ্যই সভানেত্রী সংগ্রহ করেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ৭০-এর অধিক সংসদ সদস্যের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।

 আওয়ামী লীগের এসব ঝুঁকিপূর্ণ সংসদ সদস্যের আসনে মনোনয়নের ব্যাপারে দলীয় প্রধান কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : দলীয় সভানেত্রী বলেছেন, এবার সৎ, যোগ্য, জনপ্রিয় এবং দলের প্রতি অনুগত নেতাদের মনোনয়নের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দলীয় প্রধানের কাছে সব নেতার প্রোফাইল রয়েছে। তিনি বলেছেন, তথ্য যাচাই করেই এবার মনোনয়ন দেয়া হবে।

ইতোমধ্যে তালিকা তৈরি হয়েছে। সেই তালিকা অনুসারে অর্ধশতাধিক সংসদ সদস্য মনোনয়নবঞ্চিত হবেন। প্রধানমন্ত্রী এমনটিই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

নানা উৎস থেকে আসা তথ্যের গরমিল থাকতে পারে। মনোনয়নের ক্ষেত্রে গোয়েন্দা প্রতিবেদন নাকি তৃণমূলের সমর্থন গুরুত্ব পাবে?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : সভানেত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রার্থী বাছাই করেন। নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা দ্বারাই তিনি প্রার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তথ্যের গরমিল থাকলে তা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আছে। তিনি নানা পন্থা অবলম্বন করেন।

স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে আসতে হবে কেন

তবে অবশ্যই তৃণমূলের মতামত গুরুত্ব পাবে। কারণ ভোটারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হওয়ার কথা।

কারা বাদ পড়তে পারেন, নির্দিষ্ট সংখ্যা কি বলা যায়?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : সঠিক সংখ্যা প্রধানমন্ত্রীই ভালো জানেন। তবে ৭০-এর অধিক এমপি বাদ পড়বেন।

 

 মূলত নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে ৭০-এর অধিক এমপি ঝুঁকিতে। তাদের কর্মকাণ্ডের প্রভাব তো দলের ওপরও পড়ছে…

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : হ্যাঁ, এ নিয়ে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া আছে। একটি নেতিবাচক, অপরটি ইতিবাচক।
৭০ জন সংসদ সদস্য তাদের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারেননি। মানুষ তাদের বিপক্ষে। এতে অবশ্যই দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তৃণমূলের সমর্থন নিয়েই সরকার গঠন করতে হয়। সংসদ সদস্য জনবিচ্ছিন্ন হলে সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয়।

ইতিবাচক দিক হলো, বিপুলসংখ্যক সংসদ সদস্যকে বাদ দেয়ার মাধ্যমে দলের মধ্যে গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা, শৃঙ্খখলা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।

 বাদ পড়াদের মধ্যে হতাশা কাজ করবে কিনা…

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : হতাশ হতেই পারেন। কিন্তু গঠনমূলক নেতৃত্ব তৈরি করতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে পুরনোদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়।

সরকারি দলে অন্তর্কোন্দল থাকে। এর সঙ্গে বিপুলসংখ্যক সংসদ সদস্য বাদ হলে বিশৃঙ্খলা স্পষ্ট হবে বলে ধারণা করছেন অনেকে…

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : চার বা পাঁচবার সংসদ সদস্য হওয়ার পরও অনেকে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে চান না। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে অনেকে অজনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এটি তিনি স্বীকার করতে চান না। আবার অনেকে জনগণের সমর্থন নিয়েই নিজের অবস্থান শক্ত করেন। যারা দুর্বল অবস্থানে আছেন, সেখানে অনেক তরুণ, উদীয়মান, নিষ্ঠাবান নেতা থাকতে পারেন। তাদের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। নইলে গণতান্ত্রিক দলে পরবর্তী নেতৃত্ব তৈরি হবে কীভাবে?

 দলের কেউ বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে বলে সভানেত্রী জানিয়েছেন। এমনকি দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান বা মেয়ররাও প্রার্থী হতে পারবেন না। এমন সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবেই নতুনদের আগমনের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে কিনা?

 একজন নেতাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বা মেয়রপ্রার্থী করে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। প্রতিযোগিতার এদিনে এমন অবদান তো অস্বীকারের সুযোগ নেই। অর্থাৎ যে যেখানে আছেন, সেখানে থেকেই সরকারের উন্নয়নে শরিক হতে পারেন। তাকে আবার এমপি বানাতে হবে- এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই।

 যোগ্যতা থাকলে এমপি প্রার্থী হতেই পারেন। তাই বলে জোর করে থামিয়ে দেবেন?

 

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : আরও লোক আছে। যারা দলের জন্য নিবেদিত, মানুষের সেবায় কাজ করছেন, তাদেরও তো অধিকার আছে নির্বাচন করার। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে আসতে হবে কেন?

মেয়র বা উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও অনেক নেতা আছেন যারা এমপি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।

 এমন সিদ্ধান্ত সংসদ নির্বাচনে দলকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে কিনা?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : আমরা চ্যালেঞ্জ মনে করছি না। কার্যনির্বাহী সভায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, দলের বিপক্ষে কেউ কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। আজীবন বহিষ্কার করা হবে বিদ্রোহীদের।

 মেয়র-উপজেলা চেয়ারম্যানরাও দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। বহিষ্কার করলে ফলাফল কী হবে?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : জটিলতা মূলত এখানেই। দলীয় সিদ্ধান্ত বাদ দিলাম। স্থানীয় প্রতিনিধিরা সংসদ নির্বাচনে আসতে চাইলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। বহু পদ খালি হবে। বিশাল জটিলতা সৃষ্টি হবে। আবারও নির্বাচন নিয়ে ভাবতে হবে।

 নির্বাচনী গঠনতন্ত্রে কী বলা আছে?

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন : পদত্যাগ না করে তো কেউ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। দলীয় সিদ্ধান্ত গঠনতন্ত্রের সঙ্গে মিল থাকুক বা না থাকুক। সাধারণ জ্ঞান থেকেই বোঝা যায়, স্থানীয় প্রতিনিধিরা নির্বাচনে অংশ নিলে পরিস্থিতি কী হতে পারে?

শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই নির্বাচনের আয়োজন। বিশৃঙ্খলার জন্য নির্বাচন নয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button