হারাম উপার্জনকারীর দোয়া কবুল হয় না
হারাম রিজিক, হারাম খাদ্য বড় সাংঘাতিক বস্তু। হারাম খাদ্য শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় ঢুকে যায়। পুরো শরীরে প্রভাব বিস্তার করে। যার কারণে হারাম কিছু খেলে তার দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। তার কোনো ইবাদত আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘একজন মানুষ লম্বা পথ সফর করেছে, ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। এরপর সে না ঘুমিয়ে রাতে নামাজ পড়ে এবং আল্লাহকে ডেকে ডেকে দোয়া করেÑ হে আল্লাহ! তুমি আমার গোনাহ মাফ কর। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, কাপড়চোপড় হারাম। তার সবকিছুই হারাম। সুতরাং ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত শরীরে, না ঘুমিয়ে সে যত মনোযোগ সহকারেই দোয়া করুক না কেন, আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে না।’ (মেশকাত : ২৭৬০)।
দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কাপড়চোপড়, খাওয়াদাওয়া, ব্যবসাবাণিজ্য সবকিছু হালাল হতে হবে। তাছাড়া যত দোয়াই করুক না কেন, তা কবুল হবে না। অন্যত্র রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ১০ টাকা দিয়ে কাপড় কেনে, তার একটি টাকা হারাম হলেও যতদিন তা ব্যবহার করবে, ততদিন আল্লাহ তায়ালা তার নামাজ কবুল করবেন না।’ (মেশকাত : ২৭৮৯)।
১০ টাকার এক টাকা হারাম হলে যদি নামাজ কবুল না হয়, তাহলে সব টাকা হারাম হলে কী হবে! নামাজ কবুল হবে কীভাবে? দোয়া কীভাবে কবুল হবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র আরও মারাত্মক কথা বলেছেন, ‘যে শরীর হারাম খাদ্য দ্বারা লালনপালন করা হয়েছে, সে শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মেশকাত : ২৭৮৭)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ‘একটি যুগ আসবে যখন মানুষ উপার্জন করতে এ কথা চিন্তা করবে না যে, আমি হালাল পন্থায় উপার্জন করছি, নাকি হারাম পন্থায়।’ (বোখারি : ১৯৪১)।
উপার্জনের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। হারাম থেকে বিরত থাকতে হবে। ভাগ্যে যতটুকু আছে, তা আসবেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো প্রাণী তার রিজিক শেষ করার আগ পর্যন্ত মারা যাবে না। সাবধান! সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে সৎপথ অবলম্বন করো। তকদিরে লেখা রিজিক আসতে বিলম্ব হলেও অসৎ পথে উপার্জন করো না। আল্লাহর আনুগত্য করেই কেবল তার কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব।’ (মেশকাত : ৫৩০০)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র আরও সতর্ক করে বলেন, ‘কোনটা হারাম আর কোনটা হালাল, তা পরিষ্কার। হালাল ও হারামের মাঝে কিছু সন্দেহযুক্ত জিনিস আছে, যা অনেকেই বুঝতে পারে না। যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত জিনিস থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার ইজ্জত-সম্মান ও দিন হেফাজত করতে পারবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত জিনিস উপার্জনে লিপ্ত হলো, সে হারামের মাঝে লিপ্ত হলো।’ (মুসলিম : ২৯৯৬)।
অনুলিখন : মুহাম্মাদ আশরাফুল আলম