জানা-অজানা

মিথ্যা যৌতুক মামলায় পুরুষের করণীয়

দাম্পত্য কলহের কারণে যৌতুক মামলা থেকে শুরু করে খুনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। তবে বেশিরভাগ নারীরা সংসারে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হলেই যৌতুকের মামলা দিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মিথ্যা মামলা দেয়ার কারণে পুরুষরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন।

সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতনের মিথ্যা মামলা অনেক বেড়ে গেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে ভুয়া ও মিথ্যা মামলা দায়েরের ফলে সামাজিকভাবে অপদস্থ হওয়া ছাড়াও মামলার খরচ জোগাতে নিঃস্ব হচ্ছে অনেকেই। মিথ্যা মামলায় যে কোনো পুরুষ হয়রানির শিকার যাতে না হয় সে জন্য ‘যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটা পুরুষদের জন্য সুসংবাদ।

যৌতুকের মিথ্যা মামলায় শাস্তির বিধান

‘মিথ্যা মামলাসংক্রান্ত শাস্তির ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ করেন বা করান তাহলে তিনি বা তারা অনধিক ৫ বছর মেয়াদের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আসুন জেনে নেই মিথ্যা যৌতুক মামলা থেকে বাঁচতে কী করবেন?

এজাহারের কপি সংগ্রহ

মিথ্যা মামলা হলে এজাহারের কপিটি সংগ্রহের চেষ্টা করুন। একজন ভালো আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করুন। তিনি আপনাকে একটি ভালো পরামর্শ দেবেন।

আত্মসমর্পণ

নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবেন।

চার্জশিট বা অভিযোগপত্র

মিথ্যা মামলায় চার্জশিট বা অভিযোগপত্র হয়ে গেলে নিম্ন আদালতে জামিন চাইতে হবে। জামিন না-হলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে।

অব্যাহতি

আপনি মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন।

গ্রেফতার

অনেক সময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ এসে আপনাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে সাধারণ গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। তাই আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে হবে। আদালতে জামিন আবেদন

যদি থানায় মামলা না হয়ে আদালতে মামলা (সিআর) হয় তাহলে আদালত সমন দিতে পারেন কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিন চাইতে পারেন। পাল্টা মামলা

দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা অভিযোগকারী বা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আপনি পাল্টা মামলা করতে পারেন।

ক্ষতিপূরণ

মিথ্যা নালিশ আনয়নকারী সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ করা যায়। কোনো পুলিশ কর্মকর্তা আমলযোগ্য নয় এ রকম কোনো মামলায় মিথ্যা প্রতিবেদন দিলে তার বিরুদ্ধেও এ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ প্রদান করা যায়।

আনোয়ারুল কবীর বাবুল, অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button