সাক্ষাৎকার

‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়তে এক পুলিশ সদস্যের ১৫ বছরের লড়াই

কলেজে পড়াকালীন বন্ধুদের চক্করে নিজেও ধূমপান শুরু করেছিলেন পুলিশের উপপরিদদর্শক এসআই শফিকুল ইসলাম। কিন্তু অল্প কিছুদিন যেতেই গলা ব্যথা ও কাশি শুরু হয় তার। চিকিৎসকের পরামর্শে ধূমপান ছেড়ে দেন তিনি। ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো নিজে অনুধাবন করতে পেরে অন্য মানুষকেও ধূমপান থেকে বিরত রাখবেন বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন। এরপর কলেজ ছেড়ে ১৯৯৬ সালে একজন কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করেছিলেন বাংলাদেশ পুলিশে।

১৯৯৮ সালে কর্মজীবনে ধূমপান নিয়ে আরও একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা হয় শফিকুল ইসলামের। মনের মধ্যে লুকানো ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নটা নীরবেই রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০০৩ সালে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নটার আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে শুধু ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করেন ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলন। নিজের দায়িত্ব পালন শেষে যে অবসর সময়টুকু তিনি পেতেন, সেই সময়েই রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ফুটপাতের দোকানদারসহ নিম্ন আয়ের নানা মানুষের কাছে গিয়ে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে সচেতনতা সৃষ্টি করতে আলোচনা করতেন। এমনকি ডিউটিরত অবস্থাতেও সুযোগ পেলেই ধূমপায়ী মানুষের কাছে গিয়ে তাদের নানাভাবে বোঝাতেন তিনি।

শফিকুল ইসলামের এমন ব্যতিক্রম কার্যক্রমে প্রথম দিকে অনেকে তাকে পাগল পুলিশ বলত। কিন্তু ধীরে ধীরে তার সচেতনতামূলক এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই সচেতনতামূলক আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। বর্তমানে তার এই সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ২৯১ জন বিসিএস কর্মকর্তা। এ ছাড়াও ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন থানা, উপজেলা এবং জেলায় তার সংগঠনের সদস্য রয়েছেন, যারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এই সচেতনতামূলক কার্যক্রমটি তুলে ধরেন।

শুধু তা-ই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ নামের একটি গ্রুপ খুলেছেন শফিকুল ইসলাম। সেখানে তার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৮ হাজার ২৩৩ জন। আর ফলোয়ার প্রায় দুই কোটি। শফিকুল ইসলামের দাবি, তারা সবাই অধূমপায়ী।

শফিকুল ইসলামের ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলন এখন শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেরও ছড়িয়ে গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান ও ফিনল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশে শফিকুলের প্রচেষ্টায় চলছে এই সচেতনতামূলক আন্দোলন।

‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান এসআই শফিকুল ইসলাম তার সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো।

আপনার ছোট থেকে বেড়ে ওঠা, ব্যক্তিগত জীবন এবং পুলিশে যোগদান সম্পর্কে কিছু বলুন।

শফিকুল: আমার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কাদৈর গ্রামে। বাবা তফাজ্জল হোসেন ও মা মহারানী বেগম—দুজনই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আমি তৃতীয়। ১৯৯৬ সালের ১ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে (সিএমপিতে) একজন কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করি। এরপর চাকরির পাশাপাশি রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করি। বর্তমানে  ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা থানায় পুলিশের উপপরিদদর্শক (এসআই) পদে কর্মরত। আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের একজন শহীদ আনোয়ারা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথমম বর্ষে এবং অন্যজন দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। ছেলের বয়স সাড়ে তিন। ঢাকার উত্তরার পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে থাকি।

‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ নামের এই আন্দোলন কেন শুরু করেছেন?

শফিকুল: মূলত  ২০০৩ সাল থেকে আমি এই আন্দোলন শুরু করি, যখন আমি সিএমপিতে ছিলাম। আমিও একদিন ধূমপান করতাম। সেটা ১৯৯১ সালের দিকের ঘটনা, তখন আমি কলেজে পড়তাম। তবে চুরি করে, কিংবা বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। আমি নিজে কিনে তেমন একটা খেতাম না। ১৯৯২ সালের দিকে আমার নানা রকম শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। গলা ব্যথা, কাশিসহ নানা রকমের সমস্যা অনুভব করে আমি ধূমপানটা ছেড়ে দেই। তখন আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি, যেভাবেই পারি মানুষকে ধূমপান থেকে বিরত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাব। আর একদিন বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত দেশ হিসেবে দেখব।

সাধারণ মানুষের কাছে ধূমপানের  ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরছেন শফিকুল। 

‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ নামের এই আন্দোলন শুরুর দিকে কীভাবে কাজ করেছিলেন?

শফিকুল: ১৯৯৬ সালে আমি পুলিশের চাকরিতে যোগদান করার পরে থেকেই ভাবতে থাকি কীভাবে মানুষকে ধূমপান থেকে বিরত রাখার কাজটা শুরু করা যায়। কিন্তু শুরু করার সাহস বা অনুপ্রেরণাটা পাচ্ছিলাম না। তবে আমি সিএমপিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালের দিকে একটি আলোচিত ঘটনা ঘটেছিল। চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের (ডিসি) রুমে এক ব্যক্তি হঠাৎ ঢুকে ডিসি সাহেবকে পিস্তল ঠেকিয়েছিল। তাকে জিম্মি করে ওই ব্যক্তি বলেছিল, ‘আপনি সারা দেশে ধূমপান বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন।’ এরপর প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে আটক করা হয় এবং ডিসিকে উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনার পর আমি একটি শিক্ষা পেয়ে গেলাম যে, বাংলাদেশে ধূমপানমুক্ত একটি আন্দোলন করা যায়। তবে সেটা ওই ব্যক্তির মতো কাউকে পিস্তল ঠেকিয়ে বা জিম্মি করে নয়। এরপর আমি সর্বসাধারণ মানুষের কাছে যেতে শুরু করলাম।

শুরুর দিকে মানুষের কেমন সাড়া পেতেন?

শফিকুল: প্রথম দিকে আমি রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ঠেলাগাড়ির চালক অর্থাৎ নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে যেতাম। যারা আমার মতো একজন কনস্টেবলের কথা শুনতে পারে বা শুনবে। এমন মানুষদেরকেই টার্গেট করে, আমি তাদের বোঝাতাম। তখন অনেকেই আমাকেই পাগল বলত, কেউ ছাড়তে চাইত না, অনেকে আবার ছাড়তও। তবে আমি সবার কাছেই রেগুলার যেতাম।

আনুষ্ঠানিকভাব কবে থেকে এবং কীভাবে ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’-এর কার্যক্রম শুরু করেছিলেন?

শফিকুল: আমি সিএমপি থেকে বদলি হয়ে ২০০৪ সালে ঢাকায় র‍্যাবে এসে যোগদান করি। র‍্যাবে আসার পরে আমি উত্তরখান, দক্ষিণখান এলাকায় র‍্যাবের পোশাক পরে গিয়ে অনেক মানুষকে বলতাম ধূমপান ছেড়ে দিতে। তবে আমি কিন্তু কাউকে কোনোদিন জোর করিনি। আমি মানুষকে এমনও বলেছিলাম, ভাই আপনারা যদি ধূমপান ছেড়ে দেন তবে আমি প্রতিদিন আপনার কাছে আসব। আমার একটাই উদ্দেশ্য, আপনারা আমার বন্ধু হবেন। যারা ধূমপান ছেড়ে দেবেন, তারাই আমার বন্ধু হতে পারবেন।

তখন অনেকে আমার কথা শুনে ধূমপান ছেড়ে দিত। আর যারা ধূমপান ছেড়ে দিত তখন থেকেই আমি খাতা-কলমে তাদের আমার সদস্য করে নেওয়া শুরু করলাম। আর ওই সময়ই অর্থাৎ ২০০৪ সালেই আমি আমার সংগঠনের নাম দিলাম ‘ ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’। আমি আমার একটা ব্যক্তিগত ডায়েরিতে সদস্যদের নাম লেখা শুরু করলাম। আমার স্ত্রী হলো এই সংগঠনের প্রথম বা এক নম্বর সদস্য। তাকে দিয়েই শুরু করলাম। আমি হলাম এর চেয়ারম্যান।

উঠান বৈঠকে ধূমপানে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছেন শফিকুল ইসলাম। 

কোন কোন প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাথমিকভাবে সেমিনার শুরু করেছিলেন?

শফিকুল: প্রতিষ্ঠানগুলো বলতে প্রথমে আমি চাকরির ফাঁকে বিভিন্ন স্কুলে যেতাম। সেখানে গিয়ে আমি ছাত্রছাত্রীদের বোঝাতাম। কারণ আমি একসময়ে ছাত্র জীবনে স্কুলে শিক্ষকতা করতাম। এর জন্য বিষয়টি আমার কাছে কিছুটা সহজ ছিল । আমি ছাত্রছাত্রীদের বলতাম, ছোট ভাই, তোমরা এটা খাইও না। এভাবে আমি এই পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক সেমিনার করেছি। আমি যখন এটা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করলাম তখন আমি আমার র‍্যাবের সিনিয়র অফিসারদের কাছে ধীরে ধীরে যেতে শুরু করলাম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কবে থেকে আপনার এই সংগঠনের কাজ শুরু করলেন?

শফিকুল: পর্যায়ক্রমে যখন ফেসবুক চালু হলো, তখন ২০১৪ সালের দিকে আমি ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুললাম। সেই গ্রুপে তাদের আগে সদস্য করলাম; যাদের নাম আমার ডায়েরিতে আগে থেকেই লেখা ছিল। এখন পর্যন্ত আমার গ্রুপের সদস্য ২৮ হাজার ২৩৩ জন। আর আমার এই সংগঠনের সাথে এখন ২৯২ জন উপদেষ্টা আছেন, যারা সবাই বিসিএস ক্যাডার।

‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ গ্রুপের সদস্য হওয়ার নিয়ম কী?

শফিকুল: আমার গ্রুপের কেউ সদস্য হতে হলে, প্রথমে আমাকে মেসেঞ্জারে আবেদন পাঠাতে হয়। এরপর আমি সেই ব্যক্তির নামে আলাদাভাবে একটা যাচাই প্রক্রিয়ায় পাঠাই, যাতে কোনো ধূমপায়ী আমার গ্রুপের সদস্য না হয়। এ জন্য আমি তাকে যাচাই করি। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি যে এলাকায় বসবাস করেন, সেই এলাকায় আমার যারা সদস্য আছেন তাদেরকে বলি, ভাই, আপনারা অমুক ব্যক্তির একটু খোঁজখবর নিয়ে দেখুন। এলাকাভিত্তিক আমার কিছু সদস্য আছেন; যাদের আমি নাম দিয়েছি মিডিয়া টিম; তারা এই কাজই করেন।

একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন এসআই শফিকুল। 

আপনার সংগঠনের কেউ যদি ধূমপায়ী হয় বা সদস্য হওয়ার পরেও ধূমপান চালিয়ে যায়, তবে আপনারা কি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন?

শফিকুল: আমার মিডিয়া টিমের সদস্যরা আমার গ্রুপের কোনো সদস্যকে যদি ধূমপান করতে দেখে, তখন তারা তার ছবি তুলে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন। তখন আমরা ওই সদস্যকে সাসপেন্ড  করি। এরপর আমরা আমাদের গ্রুপেও জানিয়ে দেই, ওই ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করেছেন। ওই ব্যক্তিকে সাসপেন্ড করার পরে, আমরা তাকে আবার জানিয়ে দেই নতুন করে নিয়ম মেনে সদস্য হতে হবে । কারণ আমাদের শর্তের মধ্যে সেটা আগে থেকেই জানানো হয়।

আপনাদের সংগঠনের সদস্যদের কীভাবে কাজে উৎসাহিত করেন?

শফিকুল: আমরা প্রায়ই আমাদের এই সংগঠনের সাত থেকে আট জন উপদেষ্টা মিলে একটা করে ভিডিও কনফারেন্স করি। সেখানে আমরা আলোচনা করি যে, এই মাসে আমাদের কোন সদস্য কতগুলো ভালো কাজ করেছেন। সেটা যাচাই-বাছাই করে তাকে আমরা একটা সম্মাননা দিয়ে দেই। তাকে আমরা কোনো টাকা-পয়সা বা আর্থিক সুবিধা দিতে পারি না। কারণ আমরাও কারো কাছে থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেই না। এটা আমাদের একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কিন্তু সবাই মিলে একটা পোস্ট বা পদ বা সম্মানা দেওয়ার ব্যবস্থা করি।

ধূমপানবিরোধী জনসচেতনতামূলক পোস্টার। 

ধূমপায়ী ব্যক্তিদের ধূমপান ছাড়াতে আপনারা কীভাবে তাদের কাউসিলিং করেন বা কীভাবে তাদের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেন?

শফিকুল: বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে বোঝানোর চেষ্টা করি। অনেকেকে বিভিন্ন যুক্তি ও কৌশল উপস্থাপন করে বোঝানোর চেষ্টা করি। আমরা মধ্যবিত্তদের বোঝাই, যদি তারা ধূমপান ছেড়ে দেয়, তবে তারা অনেক দিক থেকেই জিতে যাব।

আমরা এটাকে এভাবে বলি, আমার পরিবারের মধ্য থেকে আমি যদি ধূমপান ছেড়ে দেই, তবে প্রথমে আমি হব অর্থমন্ত্রী। কারণ আমি প্রতিদিন ধূমপানের পেছনে যে ৫০ টাকা ব্যয় করি, যদি ধূমপান ছেড়ে দেই, তবে আমার ৫০ টাকা আয় থাকবে প্রতিদিন।

আর দ্বিতীয়ত আমি হব একজন পরিকল্পনামন্ত্রী। কারণ আমার কাছে যখন ৫০ টাকা প্রতিদিন বেঁচে যাবে, তখন আমি একটা পরিকল্পনা করব যে এই ৫০ টাকা দিয়ে আমি কী করতে পারি। জামা কিনব না জুতা কিনব, নাকি আমার বাচ্চার দুধ কিনব ইত্যাদি।

আর তৃতীয় আমি হব একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কারণ আমি আমার এবং আমার পরিবারের মানুষের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ধূমপান ছেড়ে দিয়েছি।

এই থিউরিটা নিয়ে আমি বেশ কিছু এলাকায় প্রোগ্রাম করেছি। আমি ইউআইইউ ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে ২০ জন ছাত্র নিয়ে এবং শিক্ষকদের সাথে সেমিনার করেছি।

ফেসবুকে পোস্ট করা শফিকুল ইসলামের পোস্টার। 

সমাজের উচ্চবিত্তদের আপনারা কীভাবে কাউনসেলিং করেন বা বোঝানোর চেষ্টা করেন?

শফিকুল: আমি অনেক স্যারের কাছে গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করেছি, স্যার আপনি কি সুস্থ আছেন? তখন ওই স্যাররা বলত, হ্যাঁ। আমি সুস্থ আছি। তখন আমি বলতাম, স্যার আমার মনে হয় আপনি সুস্থ নেই। কারণ আপানকে যদি পাঁচ তলা থেকে লাফ দিতে বলা হয়; তবে কি আপনি দিবেন? তখন উত্তরে ওই স্যার বলেন, না, ওখান থেকে পড়লে তো মারা যাব। তখন আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, স্যার পাঁচ তলার ছাদে বা কোনো বিল্ডিংয়ের ওপরে তো লেখা নাই যে এখান থেকে পড়ে গেলে আপনি মারা যাবেন। এমন কি লেখা আছে? স্যার তখন উত্তর দেন না। কারণ সেটা কোথাও লেখা নাই। আপনি কি কাউকে পাঁচ তলা থেকে পড়ে সরাসরি মরতে দেখেছেন? স্যার উত্তর দেন, না চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখিনি, তবে শুনেছি। আর আমার নিজস্ব জ্ঞান দিয়েও তো এটা স্পষ্ট বুঝতে পারি যে পাঁচ তলা বা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে গেলে মারা যাব।

আমি তখন তাকে বলি, স্যার, আপনার এত জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে আপনি এই বিষয়ে খুব বেশি সচেতন আছেন। কিন্তু সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে যে সরাসরি লেখা থাকে, ধূমপান মৃতুর কারণ। ধূমপান মৃতু ঘটায়। সেটা আপনি জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করেও কেন খাচ্ছেন? তখন ওই স্যার আর কোনো উত্তর দিতে পারেননি। কারণ তার কাছে কোনো উত্তর নেই।

এরপর আমি আবার অনেক স্যারকে জিজ্ঞাসা করি, স্যার যদি কোনো সুন্দর একটা বাথরুমে আপানাকে ঢুকে দেয়া হয়, সবকিছু চকচকে, সেখানে কোনো ময়লা বা দুর্গন্ধও নেই। এরপর যদি পুরান ঢাকা থেকে একটা স্পেশাল হাজির বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে গিয়ে আপানকে সেখানে খেতে দিতে হয়, তবে আপনি কি তা খাবেন?

স্যার তখন উত্তর দেন, না আমি খাব না। কারণ বাথরুমের ভেতরে খাওয়া যায় না। আমি তখন বললাম, স্যার এটা যে বাথরুম সেটা কীভাবে বুঝলেন? তখন স্যার উত্তর দিলেন, প্রবেশের সময় দরজায় লেখা দেখেছি। আচ্ছা স্যার, এই বাথরুমে এখন যদি একটা ১২ টাকার বেনসন সিগারেট ও একটা ম্যাচ দেওয়া হয়। তবে কি আপনি সেটা খাবেন? তখন স্যার একটা মুচকি হাসি দিলেন। আমি তাকে বললাম, স্যার এখন বলেন, আপনি কি আসলে সত্যি সুস্থ আছেন?

এভাবেই আমরা মানুষদের বিভিন্ন যুক্তি-তর্ক দিয়ে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো বোঝানোর চেষ্টা করি। তাতে কেউ জেনে-বুঝে স্বজ্ঞানে ধূমপান ছেড়ে দেয়, আবার কেউ জেনে-বুঝেও ছাড়তে পারে না।

প্রিয়.কম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button