কালীগঞ্জটপ লিডনির্বাচন ও রাজনীতি

ঝিনাইদহে কোন গাছই অত্যাচার থেকে বাদ যাচ্ছে না,,,,

কালীগঞ্জ পৌরসভার সীমানাসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে বেশিরভাগ গাছেই মোটা-লম্বা গজাল পেরেক ঠুকে নির্বাচনী প্রচারের জন্য ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার টানানো হয়েছে। সড়কের দু’ধারের প্রতিটি গাছে ঝুলছে এ বোর্ডগুলো। গ্রামাঞ্চলের সড়কগুলোর বড় বড় গাছে এমন বিলবোর্ড সাঁটানো হলেও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশের শতবর্ষী প্রায় সব

গাছেই দেখা যাচ্ছে এসব পোস্টার। কিছু গাছে ৮ থেকে ১০টি প্রচার বোর্ডও ঝুলতে দেখা গেছে। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সীমানার মধ্যে সব ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজারেরও বেশিসংখ্যক গাছে ঝুলছে এমন লাখ লাখ টাকা খরচের প্রচার বোর্ড। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কিছু প্রচার বোর্ড থাকলেও ৮০ ভাগ প্রচার বোর্ডই রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ।

প্রচার বোর্ডের পেরেকে গাছের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, গাছে পেরেক লাগানোর কারণে কাঠ ধীরে ধীরে পচতে থাকে। ফলে এক একটি গাছের মূল কাণ্ডে ২০-২৫টি পেরেক গাঁথায় গাছটি পচন ধরে মারাও যেতে পারে। অথচ গাছ আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। কেননা গাছ আমাদের জীবন বাঁচানোর অক্সিজেন দিয়ে থাকে আর প্রাণীকুলের ত্যাগ করা কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। ফলে গাছ প্রাণীকূলের প্রকৃত বন্ধু। পেরেকে গাছের এভাবে ক্ষতি হলেও প্রতিকারে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললে তারাও একমত পোষণ করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গাছ মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এ আসনে বিভিন্ন দল থেকে যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী, তাদের প্রায় সবারই প্রচার বোর্ড গাছে এভাবে টানানো হয়েছে। বিষয়টি এমন যে, একজনকে দেখে অন্যজন প্রতিযোগিতামূলকভাবে বোর্ড সাঁটিয়েছেন। কাজেই এ ক্ষেত্রে নেতারা কেউ কারও ওপর দোষ চাপাতে পারছেন না। তবে তারা এটাও জানান, শুধু রাজনৈতিক দলের নেতারা নন, বিভিন্ন কোম্পানি, কোচিং সেন্টার, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের প্রচার বোর্ডও গাছে পেরেক ঠুকে টানানো হয়েছে। তারা আরও বলেন, যে প্রচার বোর্ডই হোক না কেন, গাছে গাছে মোটা মোটা গজাল পেরেক ঠুকে টাঙানো কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।

কালীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাবজাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রচার বোর্ড যেগুলো গাছে টানানো হয়েছে, তার সবই প্রায় পেরেক ঠুকে। যা গাছগুলোর খুব ক্ষতি করেছে। পেরেক ঠোকা হয়ে গেছে এখন উঠিয়ে ফেললেও গাছের গায়ে ছিদ্র থেকে যাবে। যেখান থেকে কাঠ নষ্ট হতে থাকবে। ফলে এখন পেরেক উঠিয়ে ফেললেও লাভ হবে বলে মনে হয় না। তবে গাছ ও পরিবেশ বাঁচাতে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যতে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কড়া নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, প্রচার বোর্ড গাছের ডালে তার পেঁচিয়েও সাঁটানো যেতা। সেক্ষেত্রে গাছের কোােন ক্ষতি হতো না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি খন্দকার হাফিজ ফারুক জানান, গাছগুলোতে মোটা পেরেক ঠুকে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন অথবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রচার বোর্ড টানিয়ে থাকলে অবশ্যই ভুল করেছে। তিনি বলেন, প্রতিকারের জন্য খুব শিগগিরই তারা সংশ্নিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।

ঝিনাইদহ জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা খন্দকার গিয়াস উদ্দীন বলেন, গাছে পেরেক ঠোকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তেমন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেই। তার পরও এটা গাছের ক্ষতি করছে। কালীগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে তিনি ঘুরে দেখেছেন মোটা পেরেক ঠুকে প্রচার বোর্ড সাঁটানো হয়েছে। এটা বন্ধের জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজসহ সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে গাছে পেরেক না ঠোকার জন্য মানুষকে সচেতন করছেন তিনি।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রানী সাহা জানান, গাছ আমাদের অত্যন্ত কাছের বন্ধু। গাছে পেরেক ঠুকলে অবশ্যই গাছের ক্ষতি হচ্ছে। এমন অবস্থা থাকলে এটা বন্ধের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনিও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button