পাঠকের কথা
ওপারে তুমি ভাল থেকো —-আসিফ হাসান কাজল
ওপারে তুমি ভাল থেকো দাদা
কোন একদিন অবশ্যই তোমার সাথে
ওপারেই দেখা হবে—————–আসিফ হাসান কাজল
তখন আমি ডাক পিয়নের কাজ করতাম। সত্যি বলতে কি এই ৩জি/৪জি এর যুগেও হরহামেশাই আমাকে চিঠির বাহক হয়ে অনেক দিনই করতে হয়েছে এই কাজ। প্রেরক ছিলেন পিতা, আর প্রাপক পুত্র! মৌখিকভাবে আমাকে বলা হতো তুই চিঠিটা সোহরাব এর কাছে পৌছে দিস। আমার ঔষধ কিনতে টাকা শেষ। আমি বেয়াদবি হবে জেনে কখনো সেই চিঠিতে চোখ বুলিয়ে দেখিনি! তবে বুঝতাম ছোট্ট বেলায় শেখা বাংলা ২য় পেপারে টাকা চাহিয়ে পিতার নিকট পুত্রের চিঠির উল্টো সংস্করণ।
অনেক সময় টাকার পাঠানোর মাধ্যম হিসেবেও কাজ করেছি কতবার। অবাক করার বিষয় টাকা পৌছে দেওয়ার পরেও আবার একটা চিঠি! এটিও পৌছে দিতে হবে…. সেখানে কি লেখা থাকতো জানিনা…
কি জানি হইতো লেখা থাকবে কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা,পিতা-পুত্রের স্নেহময় আবেগী অনুভুতি! তবে খুলে দেখা হয়নি!
এই ডাক পিয়নের চাকরী আমার আজ চলে গেল! আর হইতো আমার হাতে কেউ চিঠি দিয়ে পৌছে দিতে বলবে না। সোহরাব হোসেন তার আব্বাকে হারালেন, আর আমি হারিয়েছি প্রায় শতবর্ষী দাদাকে। সকাল এ খবরটি শুনে মোটেও অবাক লাগেনি। বৃদ্ধ মানুষটি ওপারের পথে সামনের সারিতে থাকা যাত্রী ছিলেন অনেক আগে থেকেই। শেষ অনেকবার তার কানে আল্লাহর নাম শপে দেওয়া হলেও তিনি জীবিত হয়েই আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন।
দুপুর গড়িয়েছে বিকাল প্রায়, … একে একে মৃত মানুষটির মুখ খানি দেখতে জড়ো হয়েছে শত শত আত্নীয় স্বজন। পাড়া প্রতিবেশীর ভিড় নিছক কম নয়। গোসল হয়ে গিয়েছে। দূর দূরান্তের কতিপয় ব্যক্তির পথ চাওয়া যেন মৃত্যু শেষের পথযাত্রীও তাদের পদধূলির প্রতীক্ষায় অপেক্ষমান! একটু পরেই জানাজার নামাজের জন্য লাশ নিতে হবে! সবার আবেগ এর সমাপ্তি আমি পরিলক্ষিত করছি। একে একে কিছু মা, চাচী ছাড়া সবাই ব্যস্ত তার অন্তিম পথে ব্যস্ত পারাপারে।
হঠাৎ দূর থেকে পিঠে ব্যাগ ঝোলানো শরীর নুইয়ে থাকা যুবক এসে লাশের সামনে থামলো! নিঃপলকে তাকিয়ে থাকা মৃত মুখের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়! আর ঝুকে থাকতে পারেনি। বসে পড়লো।
এরপর অপর এক ব্যক্তির আগমনে যেন বাতাশ বিস্ফারিত হতে শুরু করলো! মাস শেষে কেউ তাকে বলবে না টাকা পাঠা! এই দুই মানুষের আর্তনাদ আবার সবাইকে মনে করিয়ে দিলো তোমরা কি হারালে! আর কি তা ফিরে পাবে?