হরিনাকুন্ডু

ঝিনাইদহে হাঁসের খামারে স্বাবলম্বী

ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রিশখালী গ্রামের বেকার যুবক মনোয়ার হোসেন হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে নবগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে তুলেছেন কেম্বল হাঁসের খামার।

ঘাত-প্রতিঘাতে বেড়ে ওঠা যুবক মনোয়ার এক সময় ধার-দেনা ও জমি বিক্রি করে বিদেশে যান। কয়েক বছর বিদেশে থাকার পর সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি ওই টাকা দিয়ে ভুসির ব্যবসা শুরু করেন। ভুসির ব্যবসায় তিনি খুব বেশি একটা সুবিধা করতে পারেননি। নগদ টাকায় মাল কিনে বাকিতে বিক্রি করতে হয়। বাকি টাকা সময়মতো ঘরে ফিরে আসে না। ভুসির ব্যবসা করতে গিয়ে সে অনেক টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই তিনি ভুসির ব্যবসা বাদ দিয়ে সৎভাবে কোন কাজে আয় কারা যায় চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন। তখন তিনি হাঁসের খামার করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধান পান কেম্বল হাঁসের, শুরু করেন নতুনভাবে পথচলা।

মাত্র ২১৫টি হাঁসের বাচ্চা দিয়ে হাঁস পালন শুরু করেন। প্রথম ধাপে হাঁসের খামারে তিনি ভালো মুনাফা লাভ করেন। এরপর তিনি হাঁসের সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। হাঁস পালন করে তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন তিনি।

দিন যত যায় তার খামারে হাঁসের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। বেকার যুবক মনোয়ারের মূলধন বেড়ে যায় অনেক। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার রিশখালী বাঘা যতিনের ভিটায় নবগঙ্গা নদীর তীরে নতুন একটা খামার প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে খামারটিতে ১ হাজার ২২৫টি হাঁস আছে।

হাঁসের খামারের মালিক মনোয়ার হেসেন জানান, তার ছিল খুব অভাবী সংসার। সামান্য চাষের জমি ছিল, চাষাবাদ করে কোনও রকমভাবে সংসার চলত তাদের। ছোটবেলা থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে তার চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না। তার মধ্যে ছিল দারিদ্র্যতাকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

২০১৫ সাল থেকে তিনি হাসঁ পালন শুরু করেন। বর্তমান ১ হাজার ২২৫টি হাঁস রয়েছে তার খামারে। প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ হাঁস ডিম পাড়ে। বছরে দুবার ডিম দেয় হাঁস। এতে এক বছরে ৬-সাড়ে ৬ লাখ টাকা লাভ হয় তার। খাদ্য হিসাবে ধান, ফিড ও নদীতে থাকা পোকামাকড় এবং শামুকের গুগলি খাওয়ানো হয়।

খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাঁস পালনে তার খুব বেশি একটা খরচ হয় না। কারণ নদীর পাশেই খামার। নদী থাকার কারণে খরচ কম হয়। যে দুজন হাঁস পরিচর্যা করেন তাদের মাসিক বেতন প্রতিজনের ৮ হাজার ৫০০ টাকা। তবে খামার করতে মজবুত কোনও ঘর দরকার হয় না।

মনোয়ার বলেন, তিনি যখন বেকার ছিলেন তখন তার খুব খরাপ লাগত। বেকার জীবন খুবই অভিশপ্ত। তাই তিনি বেকার যুবকদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, হাঁসের খামার তার জীবনে আলোর পথ দেখিয়েছে। প্রতিদিন খামার দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে। তার কাছ থেকে পরামর্শ চায়। তাদের ভালো পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে জানান তিনি।

রিশখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুছ জানান, মনোয়ারের এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। মনোয়ারের মতো বেকার যুবকরা এ ধরনের উদ্যোগ নিলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button